মুসলিম সমাজ
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১২পবিত্র কোরান পোড়ানোর প্রতিবাদে রক্তাক্ত বিক্ষোভের প্রায় এক বছর পর মহানবী হজরত মহম্মদের উপর তৈরি একটি চলচ্চিত্র আবার মুসলিম সমাজে বিশাল ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে৷ বিভিন্ন দেশে মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ বা সরাসরি হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ লিবিয়ার বেনগাজি শহরে খোদ মার্কিন রাষ্ট্রদূত সহ ৩ কূটনীতিকের হত্যা, মিশর ও ইয়েমেনও অশান্তির ঘটনা ঘটছে৷
এই অশান্তির জন্য দায়ী একটি ছবির কিছু অংশ, যা ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয়েছে৷ সেই ছবিতে ইসলাম ধর্মের মহানবী হজরত মহম্মদের চরিত্রকে অত্যন্ত নেতিবাচক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে৷ এমনকি নারী সংসর্গ, শিশুদের উপর যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনারও উল্লেখ রয়েছে ছবিতে৷ ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল'এর সূত্র অনুযায়ী এই ছবির লেখক, পরিচালক ও প্রযোজকের একই সঙ্গে মার্কিন ও ইসরায়েলি নাগরিকত্ব রয়েছে৷
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আল্লাহ ও মহানবীর কোনোরকম পৌত্তলিক রূপ নিষিদ্ধ৷ অথচ বিতর্কিত এই ছবিতে ঠিক সেটাই করা হয়েছে৷ মুসলিম সমাজের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এমন পদক্ষেপকে প্ররোচনা হিসেবে দেখছে৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ, লেখক ও জার্মানির ইসলামি সংগঠনের সদস্য হামেদ আবদেল সামাদ এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলে'কে বলেন, কীভাবে মহানবীর অবমাননা করা হয়েছে, সেটা এখানে মুখ্য বিষয় নয়৷ কে সেই কাজ করছে, সেটাই আসল কথা৷ তিনি আরও বললেন, ‘‘কেউ যদি সংবাদপত্র পড়ে জানতে পারে, যে জাপান বা চীনে মহানবীর অবমাননা করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে ক্ষোভের মাত্রা এত বেশি হবে না৷ কিন্তু ডেনমার্ক বা অ্যামেরিকা থেকে সেই খবর এলে মানুষ এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়, এ ক্ষেত্রে যেমনটা ঘটছে৷''
ইন্টারনেটে এই ছবিটি নতুন নয়৷ ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল' জানাচ্ছে, গত জুলাই মাস থেকেই ভিডিওটি দেখা যাচ্ছে৷ কিন্তু স্বঘোষিত কোরান-বিরোধী মার্কিন যাজক টেরি জোনস যখন থেকে এই ছবিটির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তখন থেকেই এর পরিচিতি বেড়ে গেছে৷ উল্লেখ্য, গত বছর মার্চ মাসে জোনস'এর উদ্যোগে অ্যামেরিকার ফ্লোরিডা রাজ্যে কোরান পোড়ানোর পরিকল্পনার জের ধরে মুসলিম বিশ্বে জোরালো প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল৷ সে সময়ে আফগানিস্তানে জাতিসংঘের ৭ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল৷ সম্প্রতি বেনগাজি ও কায়রোয় বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞরা আরও হিংসাত্মক ঘটনার আশঙ্কা করছেন৷ বিশেষ করে যে সব দেশে উগ্রবাদী ইসলামি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি সক্রিয়, সেখানে এই বিপদের আশঙ্কা বেশি বলে তারা মনে করেন৷
রাজনীতি বিশেষজ্ঞ আবদেল সামাদ মনে করেন, এখন থেকে মাত্রাতিরিক্ত সাবধানতার সঙ্গে সব ইসলামি ও ধর্মীয় বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে হবে – এটা ভাবা সম্পূর্ণ ভুল হবে৷ এর ফলে হিতে বিপরীত হবে৷ সামাদ বলেন, মত প্রকাশের অধিকার ও শিল্পের ক্ষেত্রে মুক্ত চিন্তার অধিকার এমন এক সম্পদ, যার বিচ্যুতি একেবারেই কাম্য নয়৷ তাছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুসলিমদের শিখতে হবে যে, মহানবী হজরত মহম্মদ তাদের একার নয়, তিনি সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসের অংশ৷ সব মানুষ এক ধর্মভীরু মুসলিমের দৃষ্টিতে তাঁকে দেখে না৷
মিশরীয় বংশোদ্ভূত আবদেল সামাদ আরও মনে করেন, ইসলামি ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি কাটছে না৷ দুই পক্ষই একে অপরের কাজে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়ে থাকে৷ তাঁর ভাষায়,‘‘ ইউরোপে অনেকে মনে করে, ইউরোপের ইসলামিকরণ ছাড়া মুসলিমদের মনে আর কোনো চিন্তা নেই৷ অন্যদিকে ইসলামি বিশ্বে অনেকে মনে করে, ইউরোপের মানুষ সকালে উঠেই ভাবতে শুরু করে, আজ কীভাবে মুসলিমদের অবমাননা করবো৷ কয়েক শতক ধরে পরস্পরের সম্পর্কে বৈরী মনোভাব ও ভুল বোঝাবুঝির ফলেই এমনটা ঘটছে৷''
প্রতিবেদন: আনে আলমেলিং/এসবি
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী