বাঁধ তুলে দিয়ে কি নদী রক্ষা সম্ভব?
২ অক্টোবর ২০১৮ইউরোপের ৬০ শতাংশ ভূপৃষ্ঠের পানি বর্তমানে দুর্বল প্রাকৃতিক অবস্থায় রয়েছে৷ ইউরোপীয় পরিবেশ এজেন্সির পানির মান নিয়ে এক গবেষণা থেকে জানা গেছে এই তথ্য৷
‘ডেম রিমুভাল ইউরোপ' নামের বেসরকারি একটি সংগঠন পানির আধারগুলোর দুরাবস্থার জন্য সরাসরি এই অঞ্চলের ৩০ হাজারের মতো বাঁধকে দায়ী করেছে৷ সংগঠনটি মনে করছে, বাঁধ শুধু পরিবেশেরই ক্ষতি করছে না, এগুলো রক্ষণাবেক্ষণও ব্যয়বহুল৷ ফলে সেগুলো তুলে ফেলার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে তারা৷
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে ইউরোপের মাত্র এক শতাংশ নদী স্বাধীনভাবে প্রবাহিত হচ্ছে৷ বাঁধের কারণে মাছেরও ক্ষতি হচ্ছে৷ কিছু মাছের প্রজাতি প্রজননের জন্য নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় সেগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে৷ স্যামন এবং স্ট্যারজেন মাছ ইউরোপের কিছু দেশ থেকে ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাঁধের কারণে মাটির গুণগতমানেও পরিবর্তন আসছে৷ পলি এবং অন্যান্য পরিপোষক পদার্থ বিভিন্ন কাঠামোতে আটকে যাওয়ায় নদীর পানিতে মিশে ছড়িয়ে যেতে পারছে না৷ আর পলি একজায়গায় আটকে গেলে, পানির অতিরিক্ত প্রবাহ ভাঙন ত্বরান্বিত করে৷
‘ডেম রিমুভাল ইউরোপের' যুক্তি হচ্ছে বাঁধগুলো তুলে দেয়া হলে প্রকৃতি আবার নিজের মতো করে নিজেকে পুনরুদ্ধারের সুযোগ পাবে৷ তবে, বলা যত সহজ, বাঁধের মতো ব্যয়বহুল কাঠামো তুলে ফেলা ততই কঠিন৷ এধরনের ত্রিশ হাজার কাঠামোকে একই দৃষ্টিতে দেখারও সুযোগ নেই৷ বরং প্রতিটি বাঁধের ক্ষেত্রেই আলাদাভাবে ভাবতে হবে৷
হাইড্রো-এনার্জি-রোথ সংস্থার আন্দ্রেয়াস রোট এই বিষয়ে বলেন, ‘‘প্রতিটি বাঁধ এবং জাঙ্গালের বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে ভাবতে হবে৷ সেক্ষেত্রে সেগুলোর অবস্থান, স্থানীয় কমিউনিটির উপর সেটির প্রভাব এবং মালিকানা কার সেসব বিবেচনা করার পর সেগুলো বদলানো বা তুলে ফেলা যাবে কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷''
উল্লেখ্য, জার্মানিতে তিনশো বাঁধ রয়েছে যেগুলোর উচ্চতা ১৫ মিটারের বেশি৷ তবে, ছোট ছোট এরকম কাঠামো আরো অনেক রয়েছে, যার সঠিক হিসেব কেন্দ্র সরকারের কাছেও নেই৷ শুধু জার্মানিই নয়, ইউরোপের অনেকে দেশেই ঠিক কতগুলো ছোট-বড় বাঁধ রয়েছে তাঁর সঠিক হিসেব সেসব দেশের সরকারের কাছে নেই৷ অথচ কোনো কোনো বাঁধের বয়স শতবছর পেরিয়ে গেছে৷ ফলে সেগুলোর কোনটি হঠাৎ ভেঙে গেলে বড় দুর্ঘটনার শঙ্কাও রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
লিওনার্ডো প্রোস্কে/এআই