র্যাব কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গ
১৪ মে ২০১৪নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার পর, র্যাব ১১-এর অধিনায়ক এবং অপর দুই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার এবং বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সোনা ও নৌ-বাহিনী৷
কিন্তু এরপর তাঁদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠে যে, এই তিন কর্মকর্তা ছয় কোটি টাকা ঘুসের বিনময়ে সাতজনকে অপহরণ এবং হত্যা করেছেন৷ তারপরও পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার না করায় হাইকোর্ট গত রবিবার র্যাবের এই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়৷ আদালত এও বলে যে, যদি তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকে তাহলেও তাঁদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে হবে৷
বিশ্লেষকরাও বলছেন যে, ঐ তিন কর্মকর্তা সেনা ও নৌ-বাহিনীর হলেও আইনে তাঁদের গ্রেপ্তারে কোনো বাধা নেই৷ এছাড়া দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পর, এ নিয়ে কোনো কথা থাকতে পারে না৷
অথচ এরপর দু'দিন পার হয়ে গেলেও তিন কর্মকর্তা এখনও গ্রেপ্তার হননি৷ যদিও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল সোমবার বলেন যে, ইতিমধ্যেই তাঁদের গ্রেপ্তার করার জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তাঁরা যে কোনো সময় আটক হবেন এবং এ মুহূর্তে তাঁরা নজরদারিতে রয়েছেন৷
ওদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গেছে৷ তিনি নতুন করে কিছু না বললেও মঙ্গলবার বিকেলে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘‘হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন হবে৷ র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হবে, প্রক্রিয়া চলছে৷'' তবে গ্রেপ্তার করতে কতদিন লাগবে তা জানাতে পারেননি যোগাযোগমন্ত্রী৷
এদিকে নরায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ‘‘আমরা তদন্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে হাইকোর্টের আদেশসহ প্রতিরক্ষা সচিবের কাছে লিখিতভাবে ঐ তিন কর্মকর্তাকে পুলিশ হেফাজতে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি এবং এখন অপেক্ষায় আছি৷''
অন্যদিকে নিহত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুলের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘র্যাব এখন নতুন কোনো নাটক করতে চাইছে৷ আর সে কারণেই আদালতের নির্দেশের পরও তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না৷''
এছাড়া, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তিনজন র্যাব কর্মকর্তাকে আদালতের নির্দেশের আগেই গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল৷ কারণ প্রাথমিকভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত৷ অথচ হাইকোর্টের আদেশের পরও তাঁদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ এটা আইনের শাসনের কথা হতে পারে না৷'' তিনি বলেন, ‘‘গ্রেপ্তারে দেরি করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে, যা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে৷'' তাঁর মতে, ‘‘সরকারের উচিত হবে তিন কর্মকর্তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইন যে সবার জন্য সমান, তা প্রমাণ করা৷''
জানা গেছে, অবসরে পাঠানোর পর র্যাব ১১-র অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈসৎদ মোহাম্মদ এবং এবং মেজর আরিফ হোসেন সেনানিবাসের লগ এরিয়ায় তাঁদের বাসভবনেই আছেন৷ তবে নৌ-বাহিনীর লে. কমান্ডার এস এম মাসুদ রানার অবস্থান জানা যাচ্ছে না৷
গত ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণের পর, ৩০শে এপ্রিল তাঁদের লাশ ভেসে ওঠে শীতলক্ষ্যা নদীতে৷ এই অপহরণ এবং হত্যায় র্যাব ১১-র তিন কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে এখন সারা দেশে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা চলছে৷