চাপে মন্ত্রী মায়া
১২ মে ২০১৪মায়াকে সোমবারের নিয়মিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেখা যায়নি৷ তিনি অবশ্য কারণ হিসাবে শারীরিক অসুস্থতার কথা বলেছেন৷
এদিকে মন্ত্রীকে নিয়ে বেশ বিব্রত ক্ষমতাসীন দল৷ কারণ যে তিন জন র্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকা ঘুসের বিনিময়ে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাদের মধ্যে র্যাব-১১'র অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা৷ অভিযোগ আছে, মায়ার ছেলে দিপু চৌধুরীর মধ্যস্থতায় নজরুলের প্রতিপক্ষ নূর হোসেনের কাছ থেকে টাকা নেন তিন র্যাব কর্মকর্তা৷
তবে কদিন আগে এক বিবৃতিতে মায়া তাঁর পরিবারের কেউ এই হত্যাকাণ্ড বা আর্থিক লেনদেনে জড়িত নয় বলে দাবি করেন৷
সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আগাম কিছু না জানিয়েই অনুপস্থিত ছিলেন মায়া৷ সাধারণত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অনুপস্থিতির বিষয়টি আগাম জানানোর নিয়ম থাকলেও তিনি তা করেন নি৷ মায়া মহানগর আওয়ামী লীগেরও প্রধান৷
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসেন ভুইঞা জানান, ‘‘মন্ত্রী মহোদয়ের নামে নিয়ম অনুযায়ী আগেই ক্যাবিনেটের ফোল্ডার পাঠানো হয়েছে৷ তিনি তা গ্রহণও করেছেন৷'' মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তা এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সভায় যারা কথা বলেন তাঁদের দিকেই বেশি নজর থাকে৷ আমি আজ খেয়াল করিনি মন্ত্রী মহোদয় উপস্থিত ছিলেন কিনা৷'' তবে কেউ উপস্থিত না থাকতে পারলে তা আগাম জানিয়ে দিতে হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব৷
এ ব্যাপারে মায়ার সঙ্গে সাংবাদিকরা টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘‘আমার শরীর ভালো নেই, এ কারণে আমি ক্যাবিনেট মিটিংয়ে যোগ দিতে পারিনি৷'' তবে তিনি ঢাকাতেই আছেন বলে জানান৷
জানা গেছে, মায়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা এখন দু'ভাগ হয়ে পড়েছেন৷ মায়ার বিরোধীরা বলছেন, তাঁর পরিবারের সদস্যদের কারণে সরকারকে এখন র্যাব নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে৷ মায়ার ছেলে দিপু চৌধুরী এর আগে একবার উত্তরায় মার্কেট দখল করে তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারকে বেশ চাপে ফেলেছিলেন৷
এদিকে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা প্রকাশ্যেই নারায়ণগঞ্জের সাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে দলীয় এবং র্যাবের যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছেন৷ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘‘এ নিয়ে সত্য উদঘাটন হওয়া একান্ত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এজন্য সবার সাহায্য প্রয়োজন৷ এটা আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য অপরিহার্য৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, র্যাবের সংস্কার জরুরি৷ এই সংস্কার আইনগত ও সামাজিক৷ তাদের জবাবদিহিমূলক অবস্থানে নিতে হবে৷ তাতে দেশের কল্যাণ হবে৷ জবাবদিহি ছাড়া যে-কোনো প্রতিষ্ঠান ভয়ংকর হয়ে ওঠে৷'' নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ব্যাপারে সুরঞ্জিত বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমাদের কারুর যদি কোনো দায় থাকে তাও স্পষ্ট করতে হবে৷''
এদিকে নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করতে আদালতের দেওয়া আদেশের কপি সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়েছে৷ র্যাব-১১'র সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের প্রধান লে. কমান্ডার এম রানাকে হাইকোর্ট রবিবার গ্রেফতারের নির্দেশ দেন৷ আদেশে বলা হয়েছে, দণ্ডবিধি বা বিশেষ কোনো আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে হবে৷ তবে এরইমধ্যে এই তিন কর্মকর্তাকে র্যাব থেকে প্রত্যাহারের পর সেনা এবং নৌ বাহিনী থেকে অবসর দেয়া হয়েছে৷