জার্মান-মার্কিন উত্তেজনা
২৪ অক্টোবর ২০১৩জেমস বন্ড সিরিজের ছবির মজাই আলাদা৷ যতদিন সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিত্ব ছিল, ততদিন ব্রিটিশ গুপ্তচর বন্ড স্বৈরাচারী কমিউনিস্ট শাসনযন্ত্রের উপর আঘাত হেনেছেন৷ তারপর উত্তর কোরিয়াও বন্ডের বুদ্ধি ও শক্তির কাছে হার মেনেছে৷ পেছনে অবশ্যই ছিল ব্রিটিশ ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির বিশাল নেটওয়ার্কের সহায়তা৷
কাল্পনিক চরিত্র জেমস বন্ড না হয় শত্রুপক্ষের উপর গোয়েন্দাগিরি চালিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের উপরেও গোয়েন্দাগিরি চালানো হয়েছে – অন্তত এমন অভিযোগই জোরদার হচ্ছে মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে৷ এর মধ্যে রয়েছে মারাত্মক এক অভিযোগ৷ ফ্রান্স ও জার্মানির মতো সহযোগী দেশের সরকার, এমনকি খোদ সরকার প্রধানের মোবাইল ফোনে আড়ি পেতে চলছে এনএসএ৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এ বিষয়ে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে টেলিফোন করেছেন৷ হোয়াইট হাউসের বিবৃতি অনুযায়ী ওবামা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ম্যার্কেলের ফোনে আড়ি পাতার মতো কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না, ভবিষ্যতেও হবে না৷ তবে অতীতে এমনটা করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে বিবৃতিতে কিছু বলা হয় নি৷
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জার্মানিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ ওবামার সঙ্গে ম্যার্কেলের টেলিফোন সংলাপ ও পরে ওবামার বিবৃতিতে সন্তুষ্ট না হয়ে বৃহস্পতিবার বার্লিনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন বি এমারসনকে তলব করেছেন বিদায়ী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে৷ সংসদেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী টোমাস দেমেজিয়ের বলেছেন, এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়৷ আইন মন্ত্রী বলেছেন, ব্যাংকিং ক্ষেত্রে তথ্যের আদান-প্রদান নিয়ে অ্যামেরিকার সঙ্গে ইইউ-র প্রস্তাবিত চুক্তি বাতিল করার ডাক দিয়েছেন৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টও বুধবার ‘সুইফট' চুক্তি বাতিলের পক্ষে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে৷
এনএসএ-র কার্যকলাপ সম্পর্কে একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করে গোটা বিশ্বের কূটনৈতিক আঙিনায় তোলপাড় কাণ্ড সৃষ্টি করেছেন এডওয়ার্ড স্নোডেন৷ নাইন ইলেভেন-এর পর সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধ করতে বিশ্বব্যাপী গোয়েন্দা তৎপরতা নিয়ে তেমন কোনো জটিলতা দেখা যায় নি৷ কিন্তু বন্ধু বা সহযোগী রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানের উপর গোয়েন্দাগিরির অভিযোগ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক প্রতিষ্ঠান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে আড়ি পেতে চলেছে এনএসএ – এমন অভিযোগের পর অ্যামেরিকার উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীর সন্দেহ দেখা যাচ্ছে৷ সম্প্রতি ফ্রান্সের সরকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কৈফিয়ত চেয়েছে৷ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে ক্ষোভ দেখাতে ওয়াশিংটনে তাঁর রাষ্ট্রীয় সফর বাতিল করেছেন৷
কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়লেও আত্মপক্ষ সমর্থনে ওয়াশিংটন নানা যুক্তি খাড়া করছে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, গোয়েন্দাগিরি ও আড়ি পাতার কাজ সব দেশই কমবেশি করে থাকে৷ খোদ ওবামা জার্মানিতে এসে মনে করিয়ে দিয়েছেন, নাইন ইলেভেন-এর ষড়যন্ত্র হামবুর্গ থেকেই শুরু হয়েছিল৷
এসবি/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি)