ফুকুশিমা কাণ্ড
১১ মার্চ ২০১২ঠিক দুপুর দুটো বেজে ছেচল্লিশ মিনিট৷ জাপানে ২০১১ সালের ১১ মার্চের সেই কালো দিনে এই সময়েই ধেয়ে এসেছিল ভয়ংকর সুনামি৷ যে করাল সুনামি কেড়ে নিয়ে গেছে বিশ হাজার মানুষের প্রাণ৷ ফুকুশিমা দাইচির পারমাণবিক স্থাপনাকে ধ্বংস করে পারমাণবিক সংক্রমণের বিভীষিকা ছড়িয়ে দিয়েছে৷ বাড়ি ঘর, যানবাহন থেকে শুরু করে গোটা দেশটাকে প্রায় লন্ডভন্ড করে গেছে৷
জাপান জুড়ে একাধিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই দিনটিকে স্মরণ করা হয়েছে আজ রবিবার৷ ফুকুশিমা কাণ্ডের বর্ষপূর্তি আর নিহতদের স্মরণের মূল অনুষ্ঠানটি আজ অনুষ্ঠিত হয় টোকিও'র ন্যাশনাল থিয়েটারে৷ জাপানের সম্রাট আকিহিতো, সম্রাজ্ঞী মিশিকো এবং প্রধানমন্ত্রী ইয়োহিশিকো নোদার উপস্থিতিতে মূল এই স্মরণ অনুষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় নিহতদের স্মরণে৷ উল্লেখ্য, ফুকুশিমা এবং সুনামি বিপর্যয়ে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত অথবা নিখোঁজ, জানিয়েছে সরকারি পরিসংখ্যান৷
নিহতদের ভুলে যাবে না জাতি৷ সম্রাট আকিহিতো তাঁর সংক্ষিপ্ত টিভি ভাষণে সেই অঙ্গীকার করে বলেন, তাঁর আশা, এই প্রবল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যাদেরকে হারিয়েছি আমরা, মানুষ তাদের মনে রাখবে৷ প্রধানমন্ত্রী নোদা তাঁর ভাষণে নতুন করে গোটা দেশকে আবার গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন৷ গোটা দেশকে আরও ভালো করে সকলে মিলে গড়ে তুলতে হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী৷
তবে জাপানের মানুষ যে এই ভয়াবহ ঘটনাকে ভুলে যায়নি তা বোঝা গেছে নীরবতা পালনের একটি মিনিটে৷ গোটা দেশ প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায় স্থানীয় সময় দুপুর দু'টো বেজে ছেচল্লিশ মিনিটে৷ দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে, যেখানে এই সুনামি তার আঘাত হেনেছিল, সেখানে শোনা যায় ঘন্টার শব্দ৷ শোনা যায় আপদকালীন সাইরেনের আওয়াজও৷
তবে দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর আহ্বান জানালেও, সুনামি আর পারমাণবিক বিপর্যয় পরবর্তী জাপানের অর্থনীতি আর রাজনীতি এই ঘটনার এক বছর পরেও সেভাবে সুস্থির হতে পারেনি৷ সে সময়ে যিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন, সেই নাওতো কান পদত্যাগ করেন কয়েক মাসের ভিতর৷ পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর এই সত্যও উদঘাটিত হয় যে, পারমাণবিক কেন্দ্রগুলির পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা আর মেরামতিতে বড় আকারের গোলযোগ ছিল, ছিল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিও৷
এতবড় মাপের বিপর্যয়ের পরেও জাপান কিন্তু পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের পথ বন্ধ করেনি৷ জানা গেছে, ২০৩০ সালেও জাপানকে এই পারমাণবিক শক্তি থেকেই তাদের ৫০ শতাংশ জ্বালানি সংগ্রহ করতে হবে৷ যার অর্থ, বিপদজনক এই পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার জাপান এখনই থামাতে পারছে না৷
তবে, ফুকুশিমা কাণ্ড যে দেশটিকে সে বিষয়ে একটি বড়মাপের আতংকের মধ্যে রেখে দিয়েছে, দুর্ঘটনার বর্ষপূর্তিতে তা আবারও প্রমাণিত হল৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম