ফিরে আসছে ইউরো সংকট?
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৩মনে হচ্ছিল, ধীরে ধীরে ইউরোপে শান্তি ফিরে আসতে চলেছে৷ ইউরো এলাকার অর্থনীতি আবার হালে পানি পাচ্ছে৷ গ্রিস তার হোমওয়ার্ক, মানে যা করণীয় তা করছে৷ কিন্তু জার্মানির কম্যারৎসব্যাংক-এর মুখ্য অর্থনীতিবিদ ইয়র্গ ক্রেমার অত সহজে ভবি ভুলতে রাজি নন:
‘‘স্পেন, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ডের ক্ষেত্রে আমরা কিছু কিছু প্রগতি দেখছি৷ এই সব দেশ সংস্কারের মাধ্যমে তাদের প্রতিযোগিতার ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে, যেটা ইতিবাচক৷ কিন্তু আমি পূর্বাপর বলছি, যে আমরা সংস্কারের ক্ষেত্রে সর্বত্র ব্রেকথ্রু দেখছি না – বিশেষ করে বৃহত্তম সংকটপীড়িত দেশ ইটালির ক্ষেত্রে নয়৷''
রাষ্ট্রের ঋণ সংকট সত্ত্বেও ইটালিতে ইউনিট লেবার কস্ট বা মজুরি বেড়েই চলেছে – ইউরো এলাকার গড়ের চেয়ে বেশি হারেই৷ যার অর্থ, বাজারে ইটালির প্রতিযোগিতার ক্ষমতাও ক্রমাগত কমছে৷ আর শুধু ইটালিই তো নয়, লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়ুসে ইইউ অর্থমন্ত্রীদের শেষ বৈঠকে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ফ্রান্সকেও কথা শুনতে হয়েছে৷ ওদিকে স্লোভেনিয়ার ব্যাংকগুলোর ব্যালান্সে নাকি কয়েক বিলিয়ন ইউরোর ফাঁক দেখা দিয়েছে৷ এই হেমন্তেই আয়ারল্যান্ড, স্পেন এবং পর্তুগালের জন্য ত্রাণ কর্মসূচি সমাপ্ত হতে চলেছে৷ আর গ্রিসের যে আরো বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়বে, সেটা জার্মানিতে সংসদীয় নির্বাচনের আগেই স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ জার্মানির বায়ার্ন এলবি ব্যাংকের ইউরো বিশেষজ্ঞ ইয়োহানেস মায়ার মনে করেন, গ্রিসের আগামী দু'বছরে ১ বিলিয়ন ইউরো লাগবে, তারপর আরো দশ বিলিয়ন, যাতে গ্রিস খোলাবাজারে ঋণ পেতে পারে৷
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকটপীড়িত দেশগুলোর কাছ থেকে সরকারি বন্ড কেনার আশা দেখিয়ে ঋণ সংকটের ওপর অন্তত খানিকটা চুনকাম করেছেন – এবং এমনভাবে চুনকাম করেছেন যে, শিল্পসংস্থাগুলি সাহস ফিরে পেয়েছে৷ সে হিসেবে বলা চলে, ইউরো এলাকায় মন্দা শেষ হয়েছে৷ কিন্তু সংকটের মূল অক্ষতই রয়ে গেছে: প্রতিযোগিতার ক্ষমতার অভাব, মাত্রাধিক বাজেট ডেফিসিট এবং ব্যাংকগুলির উপর নিয়ন্ত্রণের অভাব৷
বিগত ঋণ ও আর্থিক সংকটগুলিতে ইসিবি দু'হাতে টাকা বিলিয়ে সামাল দিয়েছে৷ কিন্তু এই হেমন্তে যদি আবার সংকট দেখা দেয়, তবে সে আগুন নেভানোর মতো যন্ত্রপাতি, সাজসরঞ্জাম ইসিবি-র থাকবে কি?