প্রাপ্তি আছে, তবে নেই খালেদার মুক্তির সম্ভাবনা
২ নভেম্বর ২০১৮কিছু দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ এর মধ্যে কিছু বিষয় আদালতের বিবেচনাধীন আর কিছু বিষয় সংবিধান সম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ ফলে সেই বিষয়গুলোতে যে কোনো অগ্রগতি হবে না তা মোটামুটি পরিস্কার হয়ে গেছে৷
বৃহস্পতিবার রাতে সাড়ে ৩ ঘন্টার সংলাপের পর দুই জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্টকে নির্বিঘ্নে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দেবে সরকার৷ বাধাহীনভাবে তাঁরা প্রচার-প্রচারণাও চালাতে পারবেন৷ প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে নির্দেশনাও দেবেন৷ সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় গায়েবি মামলা নিয়েও কথা হয়েছে সংলাপে৷ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এমন মামলা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেবেন৷ বিরোধীদের আরেকটি দাবিও মেনে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময় বিদেশি পর্যবেক্ষক আনার ব্যবস্থা করা হবে৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংলাপের পর দুই তরফ থেকে যেটা জানা গেল, তাতে খুব একটা আশা আমি দেখি না৷ তবে ভবিষ্যতে আরো আলোচনা হতে পারে- এই কথা কিন্তু ইতিবাচক৷ প্রধানমন্ত্রী তাঁদের যে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন, সেটা তো মানার বিষয় না৷ নির্বাচনের আগে প্রচার-প্রচারণা চালানো তো সাংবিধানিক অধিকার৷ এখানে তো সুযোগ দেয়ার কিছু নেই৷ আবার গায়েবি মামলার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন৷ কোনো সভ্য দেশে কি গায়েবি মামলা হতে পারে? তাহলে এটা নিয়ে আলোচনার কী আছে? আর নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক আনার যে আশ্বাস প্রধানমন্ত্রী তাঁদের দিয়েছেন, সেটা এই মুহুর্তে মানা সম্ভব নয়, কারণ, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের এখন আর চেষ্টা করলেও আনা সম্ভব নয়৷ সেই সময় পার হয়ে গেছে৷ বরং যে বিষয়গুলো নিয়ে সমঝোতা হওয়া দরকার, সেখানেই কোনো সমঝোতা হয়নি৷ মানুষের ভোটের অধিকার কিভাবে নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে কিন্তু দুই জোট ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি৷’’
ঐক্যফ্রন্টের কয়েকটি দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ এর মধ্যে প্রথমটা হলো খালেদা জিয়ার মুক্তি৷ শেখ হাসিনা পরিস্কার বলেছেন, বিষয়টি আদালতেই নিষ্পত্তি হতে হবে৷ তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷ দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে প্রথমে বিচারিক আদালত ও পরে উচ্চ আদালত থেকে তাঁকে সাজা দেয়া হয়েছে৷ এখানে সরকারের কোনো হাত নেই৷
আরেকটি বিষয় নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা৷ সংলাপে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদের খ উপদফায় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে৷ সুতরাং সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা সংবিধানসম্মত এবং তা ওয়েস্টমিনিস্টার মডেলের সংসদীয় রীতি মেনে চলা বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অনুশীলনের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ৷ বাংলাদেশেও ২০১৪ সালের নির্বাচনটি ব্যাতিরেকে এর আগের নয়টি সংসদ নির্বাচন সংসদ ভেঙে দেওয়া অবস্থায় অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ১৯৭৩ সালে গণপরিষদ ভেঙে দিয়েই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়৷
এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী পরিস্কার করে বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এই ৪৭ বছরে নির্বাচনের সময় আসলেই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কথা হয়৷ একেকজন একেকরকম মত দেন৷ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ, সংবিধানকে অনুসরণ করলেই আর কোনো সমস্যা থাকবে না৷’’
নির্বাচন পেছানোর যে দাবি ঐক্যফ্রন্ট থেকে এসেছে, সে ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন এতে সরকারের কোনো হাত নেই৷ সংলাপে অংশ নেয়া আওয়ামী লীগ দলীয় আইনজীবী শ.ম. রেজাউল করিম বলেন, ‘‘এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷ এ ব্যাপারে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে৷ তফসিল দেবে নির্বাচন কমিশন, ভোটের তারিখও নির্ধারণ করবে তারা৷ এখানে সরকারের কিছুই করার নেই৷’’
তবে আলোচনা এখানেই শেষ নয়৷ আরো আলোচনা হতে পারে৷ এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের৷ তিনি জানান, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময় আলোচনা হতে পারে৷ নেত্রী বলেছেন, আমার দ্বার উন্মুক্ত৷ যে কোনো সময় আপনারা আসতে পারেন৷’’ তাহলে কি আবার সংলাপ হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘তাঁরা (ঐক্যফ্রন্ট) এলেই হবে৷ তাঁরা যদি মনে করেন, আসা দরকার, তাহলে আমাদের খবর দিলে আমরা অবশ্যই আমন্ত্রণ জানাবো৷’’
সংলাপকে ড. কামাল হোসেন খানিকটা ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছেন৷ তিনি প্রধানমন্ত্রীর কিছু ভালো উদ্যোগের প্রসংশা করেছেন৷ পাশাপাশি পুরো সন্তুষ্ট হতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন৷ তবে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক বিএনপি কিন্তু অনেকটা হতাশ৷ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংলাপ থেকে বের হয়েই সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘আমরা সন্তুষ্ট নই৷’’ এমন পরিস্থিতিতে আগামী ৬ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ ডাকা হয়েছে৷ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ শুক্রবার বিএনপি অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এই সমাবেশের ঘোষণা দেন৷
সংলাপ সম্পর্কে জানতে চাইলে রিজভী আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংলাপ নিয়ে এই মুহুর্তে আমাদের কথা হচ্ছে, মহাসচিব যেটা বলেছেন, সেটাই যে, আমরা সন্তুষ্ট নই৷ এর চেয়ে বেশি কিছু এখন আর বলা যাবে না৷ তবে সরকার তো অনেক কথাই বলে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা নিজেরাই মানে না৷ সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দেয়ার যে কথা বলেছে, এখন দেখি কী করে৷ আমরা তো ৬ নভেম্বর সমাবেশ ডেকেছি৷’’