1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আলোচনা পণ্ড হয়নি এটাই অর্জন!

১ নভেম্বর ২০১৮

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে  সরকারের সাড়ে তিন ঘণ্টার সংলাপে আপাতত কোনো সমঝোতা হয়েছে বলে মনে করেন না বিশ্লেষকরা৷ তাঁরা মনে করেন, দুই পক্ষই এখনো দুই মেরুতে আছে৷ তবে আলোচনা আরো হবে, পণ্ড হয়নি এটাই অর্জন৷

https://p.dw.com/p/37XH1
Dialog  Jatiya Oikyafront Dhaka
ছবি: PMO

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর সংলাপ শেষে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন আলোচনা ‘‘ভালো হয়েছে'' বলে মন্তব্য কলরেও বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আলোচনায় তিনি সন্তুষ্ট নন৷ অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘‘আলোচনার দরজা খোলা আছে৷ তবে মূল দাবি নিরপেক্ষ নির্বাচনী সরকার, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কোনো সাড়া মেলেনি সরকারের দিক থেকে৷

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানানো হলেও প্রধানমন্ত্রী তাতে সাড়া দেননি৷ তিনি সবাইকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, সভা, সমাবেশ সবাই করতে পারবে৷

আওয়ামী লীগ কোনোভাবই সংবিধানের বাইরে না যাওয়ার ব্যাপারে অনঢ় অবস্থা বজায় রেখেছে৷ তবে আলোচনা খোলামেলা হওয়ার দাবি করেছে৷ বিএনপির নেতাও বলেছেন, আরো আলোচনা হতে পারে৷

গণভবনে এই আলোচনায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন প্রধানন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা৷ ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন ড. কামাল হোসেন৷

আলোচনার প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আহমেদ কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এ পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি তাতে আসলে ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার কোনো দফা নিয়েই সমঝোতা হয়নি৷ সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করেও নির্বাচনে কারচুপি করা যায়৷ আর সরকার গ্রহণযোগ্য ও নিপেপেক্ষ নির্বাচনে সহায়তার কথা বলেছে৷ কিন্তু সেটা কিভাবে?''

ড. আহমেদ কামাল

তিনি আরো বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার বা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের যে দাবি তাতে সরকার সাড়া দেয়নি বলেই মনে হয়েছে৷ ফলে আসলে এই সাড়ে তিন ঘণ্টার সংলাপে আপাত দৃষ্টিতে কোনো ফল আসেনি বলেই আমার মনে হয়েছে৷''

তবে তিনি বলেন, ‘‘দুই পক্ষের প্রাথমিক কথায় মনে হয়েছে আলোচনা আরো হবে৷ সেটা আশার কথা৷ বাংলাদেশে অতীতে সংলাপের মাধ্যমে কোনো সমাধান আসেনি৷ তবে ভবিষ্যতে যে আসবে না তা তো বলার সময় এখনো আসেনি৷ ৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে৷ তার আগে সব কিছু স্পষ্ট হবে আসলে কোন দিকে যাচ্ছে৷''

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনূ সজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংলাপ যে পণ্ড হয়নি এটাই সবচেয়ে বড় আশার কথা৷ তাড়াহুড়ো করে কিছু হবে না৷ যাঁরা মনে করেন হঠাৎ কিছু হয়ে যাবে, তাঁদের ভাবনা ঠিক নয়৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রথমদিনের সংলাপে আসলে যে যার অবস্থানে ছিলেন৷ নতুন কিছু ঘটেনি৷ সংলাপে যে যার হোমওয়ার্ক তুলে ধরেছে, দাবির পক্ষে কথা বলেছে৷ আর সরকার তা তার মতো করে নাকচ করেছে৷ তবে আলোচনা যে আরো চলবে এটা একটা অর্জন৷ এর বাইরে এই সংলাপে আপাতত কোনো অর্জন নেই৷''

সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছে জার্মানি

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ঐক্য জোটের মধ্যে সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছে জার্মানি৷ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে নবনিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পেটার ফাহরেনহোলজ দেখা করে জানান, ‘‘সংলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷'' তিনি আশা করেন, ‘‘নির্বাচন অত্যন্ত ভালো হবে এবং সবাই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে৷''

‘সংলাপ সফল হবে না'

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বৃহস্পতিবার রংপুরে বলেছেন, ‘‘ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির কোনোটিই মানা সম্ভব নয়৷ তারা শেখ হাসিনার পদত্যাগ চান, সংসদ ভেঙে দিতে চান, এসব দাবির কোনোটিই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়৷ ফলে সংলাপ ব্যর্থ হবে৷''

শান্তনূ সজুমদার

আরো যত সংলাপ

 আরো অনেক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে সরকার৷ বিকল্প ধারার সাথে ২ নভেম্বর, ৪ নভেম্বর ১৪ দল আর এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে ৫ নভেম্বর৷ সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংলাপের দাবিতে চিঠি পৌঁছে দেয় সিপিবি, বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং যুক্তফ্রন্ট নামে ৩৫ দলীয় অখ্যাত একটি রাজনৈতিক জোট৷

বুধবার জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বিএনএফ প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি পাঠায়৷ সব চিঠি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়৷

'৯০ পরবর্তী সংলাপ ও ব্যর্থতা

১৯৯৪ সালের ৩১ আগস্ট রাজনৈতিক সংকট নিয়ে সংসদে সরকারি দল বিএনপি ও বিরোধী দল আওয়ামী লীগের দুই উপনেতার মধ্যে বৈঠক হয়েছিল৷ তখনকার কমনওয়েলথ মহাসচিব এনিয়াওকুর এমেকা রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ওই বছরের ১৩ অক্টোবর ঢাকায় এসে দুই নেত্রী  শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন৷ কমনওয়েলথ মহাসচিবের মধ্যস্থতায় রাজনৈতিক সংকট নিয়ে সংলাপে দুই নেত্রী আনুষ্ঠানিক সম্মতিও দিয়েছিলেন৷ পরে সেটিও সফল হয়নি৷ পরে তারই বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিপৈনকে পাঠিয়েছিলেন৷

২০০৬ সালের অক্টোবরে তখনকার ক্ষমতাসীন দল বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও তখনকার প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের মধ্যে প্রায় তিন সপ্তাহব্যাপী সংলাপ হয়েছিল নির্বাচনকালীন সরকারের ইস্যুতে৷ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ২৯ দফা তুলে ধরা হয়৷ ওই সময় মান্নান ভূঁইয়া ও আবদুল জলিলের মধ্যে ছয় দফা বৈঠক হলেও সমঝোতা হয়নি৷

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের শেষ দিকে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসে বিএনপি৷ সংকট নিরসনে জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো তিনবার ঢাকায় এসেছিলেন৷ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি ৬ দিন ঢাকায় অবস্থান করে দু' পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেন৷ আওয়ামী লীগের তখনকার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে সরকার ও বিরোধী দলের বৈঠক হয়েছিল ১০ ও ১১ ডিসেম্বর৷ ওই দুই দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তারানকো৷ তৃতীয় বৈঠক হয় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি নিল ওয়াকারের উপস্থিতিতে৷ কিন্তু কোনো বৈঠকই সফল হয়নি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য