মোদীর ঐতিহাসিক ইসরায়েল সফর
৫ জুলাই ২০১৭তিনদিনের ইসরায়েল সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু একান্ত বৈঠকে যেসব বিষয় উঠে আসবে, তার শীর্ষে আছে – প্রতিরক্ষা, সন্ত্রাস, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং গোয়েন্দা অবকাঠামো গড়ে তোলা৷ কূটনৈতিক সূত্রের খবরে বলা হয়, গত ১৮ বছর ধরে এইসব ক্ষেত্রে ভারত-ইসরায়েল সহযোগিতা চলে আসছে৷ কিন্তু তা নিয়ে কোনো হৈ চৈ ছিল না৷ ১৯৯৯ সালে ভারত-পাকিস্তান কার্গিল যুদ্ধের সময় থেকে যার সূত্রপাত৷ মুম্বই ও দিল্লিতে সংসদ ভবনের ওপর জঙ্গি হামলার তদন্তে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ভারতকে সাহায্য করেছিল৷ মোদীর চলতি সফরকালে দু'দেশের প্রতিরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা সহযোগিতা নিয়ে কোনো ঢাক ঢাক গুড় গুড় নেই৷ কূটনৈতিক মহল মনে করছেন, মোদীর ভেবেচিন্তেই এই কৌশলগত পথ বেছে নিয়েছেন৷ এই সফরকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে বলা হয়, দু'দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার এক নতুন অধ্যায় সূচিত হতে চলেছে৷
টুইটারে মোদী স্বয়ং মন্তব্য করেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে দু'দেশের পার্টনারশিপ এবং বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে৷
অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ভারতের মত দ্রুত বিকাশমুখি ১২৫ কোটি জনসংখ্যার দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক উচ্চাকাঙ্খামূলক সন্দেহ নেই৷ বিশ্বে সমরাস্ত্র আমদানিকারক দেশের মধ্যে ভারতের স্থান তৃতীয়৷ এর একটা বড় অংশের সরবরাহ করে ইসরায়েল৷ মাঝারি পাল্লার ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রতিরক্ষা ‘সিস্টেম' নিয়ে আলোচনা হবে৷ এছাড়া দু'দেশের আলোচনায় উঠে আসবে অর্থনৈতিক সহযোগিতা কৃষি, সেচ প্রযুক্তি ইত্যাদি৷
প্রবাসী ভারতীয় ইহুদি অভিবাসীদের সামনে বক্তব্য রাখবেন মোদী৷ বর্তমানে ইসরায়েলে প্রায় ৮০ হাজারের মতো ভারতীয় ইহুদি থাকেন, যাঁদের ভারতে ফেরার সম্ভাবনা কম৷ এঁরা সেখানে গিয়েছিলেন ১৯৫০ ছেতে ৬০-এর দশকে৷ এখন মাত্র চার থেকে পাঁচ হাজার ইহুদি বর্তমানে ভারতে রয়ে গেছেন৷ ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ককে কিভাবে আরও মজবুত করা যায় এবং সে বিষয়ে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কিভাবে তাঁরা পালন করবেন, সেকথা তাঁদের মুখ থেকেই শুনতে চাইবেন মোদী৷ সফরকালে মোদীর প্রতিটি অনুষ্ঠানে কার্যত উপস্থিত থাকবেন নেতানিয়াহু, যাকে এক বিশেষ সম্মান বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা৷ সন্ত্রাস উভয় নেতার কাছে এক অভিন্ন চ্যালেঞ্জ৷ দু'দেশই সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত৷ তার মোকাবিলা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হবে উভয় নেতার মধ্যে৷ তাঁরা মনে করেন, কিছু ধর্মান্ধ ব্যক্তি ধর্মের নামে যুবকদের বিপথে চালিত করছেন৷মোদীর ইসরায়েল সফরকে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করা ঠিক হবে না৷ বিচার করতে হবে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে৷ বিজেপি জোট সরকার মধ্যপ্রাচ্যে আরব এবং অ-আরব দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য বজায় রেখে চলার চেষ্টা করছেন, ডয়চে ভেলেকে বললেন দিল্লির জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ইসরায়েল বিশেষজ্ঞ পি. আর. কুমারস্বামী৷ পাশাপাশি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক উপদেষ্টা মাজদি এল-খালদীর মতে, ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের যত গভীর সম্পর্কই থাকুক না কেন, সেটা ফিলিস্তিনি স্বার্থের বিনিময়ে কখনই নয়৷ যদিও এবারের সফরে মোদী প্যালেস্টাইনের রামাল্লায় যাচ্ছেন না৷ অতীতে সব ভারতীয় নেতারা ইসরায়েল সফরে রামাল্লা গিয়েছিলেন৷ পাকিস্তানের তরফে অবশ্য মোদীর ইসরায়েল সফরকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে৷ চীন ও পাকিস্তানকে চাপে রাখতে নাকি প্রতিরক্ষার নামে সমরসজ্জায় উঠে পড়ে লেগেছে নতুন দিল্লি৷