নজরদারিতে বিএনপি নেতা
১৯ আগস্ট ২০১৪
মুজিবুর রহমানের শ্যালক আনোয়ার হোসেনের বাসা গুলশানে৷ মুজিব ও তাঁর গাড়ি চালক মো. রেজাউল হক সোহেল ছাড়া পেয়ে নিজেরাই সেই বাসায় যান৷ আনোয়ার হোসেন বলেন, সোমবারই তিনি দেশের বাইরে থেকে ঢাকায় ফিরেছেন৷ তিনি দু'জনের উদ্ধার হয়েছে খবর পেয়ে বাসায় গিয়ে দেখেন যে, মুজিব ও সোহেল বিছানায় শুয়ে আছেন৷ তাঁদের এরপর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে ফিরে আসার খবর পুলিশকে জানানো হয়৷ এরপর রাতে গুলশান জোনের পুলিশের একজন সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে বেশ কিছু সাদা পোশাকের পুলিশ ইউনাইটেড হাসপাতালে যান৷
আনোয়ার হোসেন জানান, প্রাথমিক আলাপচারিতায় মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন যে, গত ৪ঠা মে বিকেলে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট ফেরার পথে সিলেট শহরতলীর টুকের বাজার এলাকায় তাঁকে বহনকারী গাড়িটির গতিরোধ করে একটি মাইক্রোবাস৷ ঐ গাড়িতে বসা ছিল ৮ থেকে ১০ জন লোক৷ তারা নিজেদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক পরিচয় দেয়৷ প্রথমে তারা গাড়ির চালক সোহেলের লাইসেন্স দেখতে চায়৷ এরপর দু'জনকে গাড়ি থেকে নামতে বলে৷ গাড়ি থেকে নামার পর পরই পাশেরই মাইক্রোবাসে উঠতে বলে মুজিব ও গাড়ি চালক সোহেলকে৷
এ সময় মুজিব ও সোহেল ধস্তাধস্তির চেষ্টা করলে আগন্তুকরা অস্ত্র বের করে তাঁদের মাথায় ঠেকায় ও গুলি করার হুমকি দিয়ে গাড়িতে তুলে নেয়৷ গাড়িতে উঠার পর পরই মুজিব ও সোহেলের নাকে কিছু একটা স্প্রে করা হয়৷ এরপর আর কোনো কিছু বলতে পারেননি তিনি৷
গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার লুত্ফুর কবির সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমানকে পুলিশি নজরদারিতে রাখা হয়েছে৷ তিনি সুস্থ হলে দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস কোথায় ছিলেন, কারা তাঁকে অপহরণ করেছিল – এ ব্যাপারে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷
ইউনাইটেড হাসপাতালের ক্লিনিকাল কো-অর্ডিনেটর মাহিন আহমেদ বলেন, হাসপাতালে মুজিবের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে৷ চিকিত্সকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন৷ তিনি জানান, মুজিব দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস ও থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছিলেন৷ তাঁর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও কিছুটা কম৷ তবে তাঁর কথাবার্তা স্বাভাবিক৷
ব্রিটেন বিএনপির উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান ও তাঁর গাড়িচালক রেজাউল হক সোহেল গত ৪ঠা মে ‘হত্যা-গুম'-এর প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে বিএনপির এক সমাবেশে যোগ দিয়ে সিলেটে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন৷
৬ই মে মুজিবের ভাগনি জামাতা অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন৷ ঐ দিন দুপুরে জেলা বিএনপি মুজিবের সন্ধান চেয়ে শহরের লন্ডন প্লাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে৷ ৭ই মে মুজিব ও তাঁর গাড়ি চালক সোহেলের সন্ধান দাবিতে সুনামগঞ্জ শহরে মানববন্ধন এবং ৮ই মে সুনামগঞ্জ জেলায় আধাবেলা হরতাল পালন করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন৷
সাধারণ ডায়েরিকে অভিযোগ হিসেবে নিয়ে পুলিশ ঘটনার পর সিলেট শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে আকবর চৌধুরী, জিহাদ ও তারেক নামে তিন যুবককে আটক করে৷ অপরদিকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কসবা গ্রাম থেকে মাহমুদ নামে অপর এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ৷ মুজিব নিখোঁজের ঘটনায় আটককৃতরা বর্তমানে জামিনে আছেন বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানে আলম খান৷
গাড়ি চালক বাড়ি ফেরেনি
নিখোঁজ হওয়ার প্রায় সাড়ে তিন মাস পর উদ্ধার হলেও মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বাড়ি ফেরেননি মুজিবুর রহমানের গাড়ির চালক মো. রেজাউল হক সোহেল৷ পরিবারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়নি৷ খোঁজ না পেয়ে তাঁর পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে৷
সোহেলের বাবা ওয়াহিদুল হক জানান, সোমবার রাত নয়টায় দিকে টেলিভিশনে মুজিব ও রেজাউলের খোঁজ পাওয়ার সংবাদ দেখেন তিনি৷ এরপর তিনি মুজিবের ভাতিজা আবুল হোসেনের কাছে ফোন করেন৷ তখন আবুল হোসেন তাঁকে জানান, সোহেলকে সুনামগঞ্জে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ মুজিবের শ্যালক আনোয়ার হোসেন জানান, সোমবার রাতেই এক হাজার টাকা দিয়ে সোহেলকে ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জে যেতে বলা হয়েছে৷ তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সে সুনামগঞ্জ যায়নি৷ সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, পুলিশও গাড়িচালক সোহেলকে খুঁজছে৷