পানির খোঁজ পেয়ে চাঁদের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে
৩ জুলাই ২০১৯চাঁদ সম্পর্কে আমাদের ধারণা আমূল বদলে গেছে৷ বিগত দশকে একঝাঁক স্যাটেলাইট চাঁদ সম্পর্কে গবেষণা চালিয়েছে৷ পৃথিবী ছাড়া সৌরজগতের অন্য কোনো মহাজাগতিক বস্তু নিয়ে এত গবেষণা হয়নি৷
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে জমাট পানি থাকতে পারে বলে অনেক দশক ধরে অনুমান করা হচ্ছিল৷ সেখানে এমন কিছু খাদ রয়েছে, যেগুলি কোটি কোটি বছর ধরে ছায়ার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে৷ এগুলিকে ‘কোল্ড ট্র্যাপ' বা শীতল ফাঁদ বলা হয়৷ কারণ খাদের জমির তাপমাত্রা চাঁদের বাকি অংশের তুলনায় অনেক বেশি শীতল – প্রায় মাইনাস ২৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস!
২০০৯ সালে এক মার্কিন গবেষণামূলক স্যাটেলাইট শেষ পর্যন্ত সেই গহ্বরের রহস্য উন্মোচন করে৷ ফলে আগের অনুমান সত্য প্রমাণিত হলো৷ এই প্রকল্পের আওতায় লুনার রিকনোসেন্স অর্বিটার নিম্ন কক্ষপথে চাঁদ প্রদক্ষিণ করে চলেছিল৷ সেইসঙ্গে নাসা রকেটের একটি অংশ সেই গহ্বরে আছড়ে ফেলে৷ ছোট একটি মহাকাশযান তখন সংঘাতের ফলে সৃষ্ট ধুলিকণা পরীক্ষা করে৷
তারপর দ্বিতীয় একটি বস্তু গহ্বরের মধ্যে আছড়ে পড়ে৷ লুনার রিকনোসেন্স অর্বিটার একাধিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সেই জায়গাটি পরীক্ষা করে৷ ধুলিকণার মেঘের মধ্যে পানি শনাক্ত করা সম্ভব হয়৷
২০০৮ সালে ভারতের প্রথম চন্দ্রযান চাঁদে অনুসন্ধান চালায়৷ সেই যানের রাডার চাঁদের উত্তর মেরুর ৪০টিরও বেশি গহ্বরে পানির বরফ আবিষ্কার করে৷ গবেষকদের ধারণা, শুধু সেই সব জায়গায়ই ৬০ কোটি টন বরফ থাকতে পারে৷ অর্থাৎ চাঁদের বুকে স্থায়ী বসতির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল রয়েছে৷
ধুমকেতু ও গ্রহাণুর মাধ্যমে সেই পানি সম্ভবত চাঁদে এসেছিল৷ সূর্য প্রতিনিয়ত চাঁদের বুকে হাইড্রোজেন কণা আছড়ে ফেলেও এ ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে৷ সেগুলি পাথুরে জমির মধ্যে প্রবেশ করে অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং পানি সৃষ্টি করে৷ তারই কিছু অংশ দুই মেরু অঞ্চলের শীতল গহ্বরে জমা হয়৷
নাসার লাডে নামের স্যাটেলাইট অসাধারণ এক আবিষ্কার করেছে৷ চাঁদের জমি থেকে প্রতিনিয়ত পানি বেরিয়ে আসছে৷ বিশেষ করে উল্কাবৃষ্টির সময় এমনটা বেশি দেখা যায়৷ পানিসমৃদ্ধ পাথুরে জমির উপর কয়েক সেন্টিমিটার পুরু ধুলার স্তর রয়েছে৷
আগামী কয়েক বছরে রোবটের মাধ্যমে চাঁদের বুকে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ নির্ণয় করার চেষ্টা চালানো হবে৷ ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে চীন প্রথমবার চাঁদের দক্ষিণ মেরু এলাকায় একটি মহাকাশযান অবতরণে সক্ষম হয়৷ এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷ সূর্যের হাইড্রোজেন কণা চাঁদের বুকে ঠিক কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, সেই যানের মধ্য থেকে এক রোভার চাঁদের বুকে নেমে পরীক্ষা চালাচ্ছে৷
ভারতও অদূর ভবিষ্যতে চাঁদের বুকে একটি যান অবতরণ করাতে চলেছে৷ তার মধ্যে একটি রোভার গাড়িও থাকবে৷
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এক হাইটেক গবেষণাগার তৈরি করছে৷ রাশিয়ার এক রকেটের মাধ্যমে সেটিকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পাঠানো হবে৷ সেটি মাটির এক মিটার গভীর পর্যন্ত স্তর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তার মধ্যে পানি ও অক্সিজেনের মাত্রা নির্ণয় করবে৷
গবেষণার কাজে রোবট সব রকম বিশ্লেষণ করতে সক্ষম নয়৷ তাই দক্ষিণ মেরু থেকে কিছু নমুনা পৃথিবীতে নিয়ে আসা হবে৷ অত্যন্ত জটিল প্রযুক্তির মাধ্যমে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠাতে হবে৷ চীনের মহাকাশ সংস্থা তার আগামী চন্দ্র অভিযানে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে চায়৷
তবে ২০৩০ সালের আগে চাঁদে আবার মানুষ পাঠানো কোনো পরিকল্পনা নেই৷
কর্নেলিয়া বরমান/এসবি