বৈজ্ঞানিকভাবে চাঁদ ঠিক সময়েই উঠেছে, চোখে না দেখায় বিপত্তি
৫ জুন ২০১৯মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় দ্বিতীয় দফায় চাঁদ দেখার ঘোষণায় আজ ( বুধবার) বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। আর ঈদের সকালে তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ পড়েছেন। বৃষ্টিভেজা দিনে উদযাপন করছেন মুসলিমদের বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসব।
চাঁদ দেখা, চাঁদ না দেখা:
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটিতে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) একজন প্রতিনিধি থাকেন। এবার প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম মিজানুর রহমান। তিনি মঙ্গলার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বৈঠকেও উপস্থিত ছিলে। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘ বৈঠকের শুরুতে আমাদের বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন জানিয়ে দিই। আমাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী , মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৪০মিনিটে বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ উঠেছে এবং ৭টা ৫১ মিনিটে চাঁদ ডুবেছে। আর বাংলাদেশের আকাশের প্রায় সব জায়গায়ই মেঘ ছিলো। শুধু পঞ্চগড়ের দিকে আকাশটা একটু পরিস্কার ছিলো।'
তিনি আরো বলেন,‘ আমরা স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে আকাশে মেঘের অবস্থা বলি। আর এস্ট্রোনোমিক্যাল হিসেব থেকে চাঁদ ওঠা এবং ডুবে যাওয়ার সময়, স্থায়িত্ব ও চাঁদের আকার সম্পর্কে বলি। মঙ্গলবার চাঁদের ভিজিবিলিটি ছিলো মাত্র শতকরা ১ ভাগ। চাাঁদের যে আকার তার ১ ভাগ দেখা গেছে। আর এটা খালি চোখে দেখা ছিল খুবই কঠিন। বাংলাদেশ থেকে চাঁদের অবস্থান ছিলো ৩৭ হাজার কিলোমিটার দূরে। আকাশে চাঁদের অবস্থানও ছিলো অল্প সময়।'
তিনি জানান,‘ তবে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে কিনা তার সিদ্ধান্ত হয় ধর্মীয় নিয়মের ভিত্তিতে। মঙ্গলবার সে কারণেই একবার বলা হয় চাঁদ দেখা যায়নি। পরে আবার দেখা যাওয়ার কথা জানানো হয়। এই দেখা বলতে চোখে দেখাকে বুঝানো হয়।'
চাঁদ দেখা কমিটির আরেকজন সদস্য মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি ঢাকার জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘ রোজা ৩০টা পুর্ণ হলে চাঁদ দেখা নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকেনা। ৩০ রোজার পরই ঈদ হবে। কারণ আরবি মাস ৩০ দিনের বেশি নেই। কিন্তু রোজা ২৯ টা হলে আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন হয় তাহলে কমপক্ষে দুই জন দায়িত্বশীল ব্যক্তির চাঁদ চোখে দেখতে হবে। তাদের এই দেখার বিষয়টি যদি ওলামায়ে কেরামদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে চাঁদ দেখা গেছে বলে ধরে নেয়া হবে। আর আকাশ পরিস্কার হলে খোলা মাঠে সবাই মিলে চাঁদ দেখতে হবে। এটাই ইসলামের বিধান। ২৯ তারিখে যদি আবহাওয়া বা অন্যকোনো কারণে কেউই চাঁদ না দেখেন তাহলে ৩০ রোজা পূর্ণ বরতে হবে। বৈজ্ঞানিকভাবে চাঁদ ওঠার কথা বলা হলেও গ্রহণযোগ্য হবেনা। এটাই ইসলামের ব্যাখ্যা।'
মঙ্গলবারের চাঁদ দেখা নিয়ে তিনি বলেন,‘ রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও থেকে চাঁদ দেখার খবর পাওয়া যায়নি। এই ঘোষণা দেয়ার পর যখন মানুষ এটা জানতে পারে তখন কুড়িগ্রাম, লালমনিহাট ও নিলফামারী থেকে কেউ কেউ দেখেছেন বলে খবর আসে। তখন আমরা সেটা নিশ্চিত হয়ে রাত সাড়ে ১১টায় চাঁদ দেখার ঘোষণা দিই।'
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,‘ ২৯ রোজায় যদি বৈজ্ঞানিক ভাবেও চাঁদ দেখা যায়। আর সারাদেশের কেউ চাঁদ চোখে না দেখেন তাহলে হবেনা। রোজা ৩০টি পূর্ণ রতে হবে।'
স্পারসো'র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম মিজানুর রহমান বলেন,‘ আমরা বৈজ্ঞানিকভাবে বলতে পারি কখন চাঁদ দেখা যাবে। কিন্তু মেঘলা আকাশ বা দুর্যোগপূর্ণ আবাহাওয়ার মধ্যেও আমাদের এখানে সরাসরি খালি চোখে চাঁদ দেখার কোনো ব্যবস্থা নেই। এজন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একাধিক বাইনোকুলার দরকার হয়। আমরা এখন এধরনের একটি প্রজেক্ট নিয়ে চীনের সাথে কাজ করছি। এটা বাস্তবায়ন হলে চোখে চাঁদ দেখার এই সমস্যা থাকবেনা।'
বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঈদের নামাজ:
ঈদের সকাল থেকেই ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। মুসল্লিরা এই বৃষ্টিতে বিপাকে পড়লেও ঈদের নামাজের জামাতে তারা ঠিকই অংশ নিয়েছেন । ঢাকার জাতীয় ঈদগায়ে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় । তবে উপস্থিতি ছিলো কিছুটা কম। আর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদের জামায়েত মুসল্লিরা অংশ নেন বৃষ্টি উপেক্ষা করেই। তবে বৃষ্টির কারণে ঢাকাসহ দেশের কোথাও কোথাও ঈদের নামাজের জামাত নির্ধারিত সময়ের পরে হয়েছে বলে জানাগেছে।
ঢাকায় ঈদের প্রধান জামাতে বৃষ্টিতে ভিজে অংশ নেয়ার পরও উচ্ছ্বাসের কমতি ছিলোনা। শিশুরাও অংশ নেয়। নারীদের জন্যও আলাদা ব্যবস্থা ছিলো। ঈদের নামাজে অংশ নেয়া মুসল্লিরা জানান,‘ মোনাজাতে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য দোয়া করেছি। শান্তি কামনা করেছি।'
সারদিনই কমবেশি বৃষ্টি ছিল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ‘পশ্চিমা-পূবালী বায়ুর সংযোগের ফলে এই বৃষ্টি হচ্ছে । বৃহস্পতিবারেও এমন আবহাওয়া থাকবে।'
তারপরও আনন্দ:
বৃষ্টি ঝামেলা করলেও ঈদের আনন্দে বাধা হতে পারেনি। নামাজের পর ঈদগায়ের আনন্দ ছড়িয়ে পরে নগরীতে। বৃষ্টির মধ্যেই অনেককে রিক্সায় করে ঘুরতে দেখা যায়। বিকেলের দিকে বিনোদন কেন্দ্র, বিশেষ করে শিশু পার্কে শিশুরা বাবা-মা অথবা স্বজনদের সাথে নিয়ে হাজির হয়। বিকেলে বৃষ্টিহীন মেঘলা আকাশ নগরবাসীকে বরং স্বস্তি দেয়। কলাবাগানের হাবিবুর রহমান দুপুরের পরই বেরিয়ে পড়েন পরিবারে সদস্যদের নিয়ে। তিনি বলেন,‘ ফাঁকা ঢাকায় বৃষ্টির পরশ স্বস্তি ছড়িয়ে দিয়েছে। তাই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে। '
ক্রিকেটে ডাবল আনন্দ:
এবারের ঈদ আসলে অনেকটাই ক্রিকেট কেন্দ্রিক। বিশেষ করে বালাদেশের আজ(বুধবার)ক্রিকেট খেলা থাকায় সন্ধ্যার পর নগরবাসীর বড় একটি অংশ ঘরেই থাকবেন বলে মনে হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্রিকেট ভক্তরা ঈদ আনন্দকে ক্রিকেটময় বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। ক্রিকেট ভক্ত আমানুর রহমান রনি বলেন,‘ এবার আসলে ক্রিকেট আর ঈদ একাকার হয়ে গেছে। বেশ উপভোগ করছি। বাংলাদেশের জয়ের অপেক্ষায় আছি। বাংলাদেশের জয়ের মধ্য দিয়ে ঈদে ডাবল মজা করতে চাই।'
এই ঈদে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে আছেন। আর বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আছেন কারাগারে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তারা দেশ এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করেছেন। বিএনপি'র মিডিয়া উইং-এর সদস্য শায়রুল কবীর খান ডয়চে ভেলেকে জানান,‘ খালেদা জিয়া কারাগার থেকে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি এবার ধান চাষীদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিএনপির পক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।