1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাকিস্তানে তালেবানের সমর্থন বাড়ছে কেন?

২০ জুলাই ২০২১

এ মাসের শুরুতে আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশে পাকিস্তানি নাগিরক আব্দুল রশীদ মারা যান৷ পেশাওয়ারের কাছাকাছি এক শহরে ২২ বছর বয়সি এই তরুণের জানাজায় শত শত মানুষ যোগ দিয়ে তালেবানের পক্ষে স্লোগান দেন৷

https://p.dw.com/p/3xkI6
Pakistan Grenzstadt Chaman Menschen mit Taliban-Flagge
ছবি: Asghar Achakzai/AFP/Getty Images

তালেবানের পতাকা নিয়ে স্লোগান দেয়ার এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে৷ এমন এক সময়ে এই ঘটনাটি ঘটলো যখন মার্কিন সহযোগী ও ন্যাটোর সেনারা আফগানিস্তান থেকে সরে যাচ্ছে এবং তালিবান যোদ্ধারা দেশটির বিভিন্ন এলাকা দখলে নিচ্ছে৷

পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামিক আলেমরাও তালিবানকে সমর্থন দিচ্ছেন এবং অর্থ সহযোগিতার আহ্বানও জানাচ্ছেন৷ কোয়েটা এবং বালোচিস্তান প্রদেশের পিশিন শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই জয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যে, তাদের এলাকায় তালেবানপন্থিদের কার্যক্রম জোরদার হয়েছে৷

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় স্থানীয়দের অনেকে তালেবানকে সমর্থন করেন৷ কিন্তু রাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া মিছিল-সমাবেশ আয়োজন করা সম্ভব না৷ শুরুর দিকে বিভিন্ন মসজিদে আলেমরা আফগান তালিবানের জন্য অর্থ সহায়তা চাইতেন৷ এখন তারা বাসায় বাসায় গিয়ে ‘আফগান জিহাদের' জন্য অর্থ চাইছেন৷’’

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমের আদিবাসী এলাকায় বিরোধী দলের আইনপ্রণেতা মোহসিন দাওয়ার বলেন, ‘‘কোয়েটাসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে তালেবান মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ রাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া এটা সম্ভব নয়৷’’

সরকারি কর্মকর্তারা অবশ্য তালেবানপন্থিদের সমাবেশ এবং অর্থ সংগ্রহের সংবাদকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন৷ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাহিদ হাফিজ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এসব অভিযোগ অমূলক৷ এমন কোনো ঘটনা ঘটছে না৷’’

তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান দেশটিতে নিষিদ্ধ৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগান তালিবানকে পাকিস্তানের ‘সমর্থন’ এই গোষ্ঠীটিকেও উজ্জ্বীবিত করে তুলবে৷

আফগানিস্তানে লড়াই কি তবে শেষ?

কৌশলগত দ্বন্দ্ব

অনেক আফগান ও পশ্চিমা রাষ্ট্রের কর্মকর্তা ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে তালিবানকে নিরাপদ আশ্রয় ও সামরিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন৷ এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের অবস্থানের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে।

সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আম্বর রহিম শামসি ডয়চে ভেলেকে বলেন,  "তালেবানপন্থি সমাবেশ থেকে দুটি বিষয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায়৷ সামরিক অভিযানের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে সহিংস উগ্রবাদ প্রতিহত করতে রাষ্ট্রের অক্ষমতা এবং অনিচ্ছা। রাজনৈতিক ও কৌশলগত দ্বন্দ্বের কারণে সরকার মূলধারার ইসলামি মাদ্রাসা ও চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলির বিষয়ে তেমন কিছু করতে পারেনি৷""

তিনি বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলছে এক কথা, তবে মাঠের বাস্তব চিত্র আলাদা৷ যদিও এটি সত্য যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততার ফলে তালিবানের কার্যক্রম বৈধতা পেয়েছে৷ কিন্তু তবে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকেই এসব ঘটনার ফল ভোগ করতে হবে৷’’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক কামার চিমা মনে করেন, তালিবানপন্থিদের সমাবেশ ‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন’৷ তিনি বলেন, "একই সঙ্গে পাকিস্তানি সমাজে তালিবান আদর্শের পক্ষে যে সমর্থন রয়েছে তা-ও উঠে এসেছে৷ কর্তৃপক্ষ তাদের পাল্টা মত প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে৷’’

বিশ্লেষক কুগেলম্যান পাকিস্তানি সমাজে তালেবান সমর্থনের বিষয়ে একই মত পোষণ করেছেন: "অনেক পাকিস্তানী এই দলটিকে রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনির সরকারের উন্নত বিকল্প হিসাবে দেখছেন, বিশেষত এই ধারণার কারণে যে, এটি আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের স্বার্থকে আরো কার্যকর করে৷’’

‘সরকার নজর রাখছে’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রহিমুল্লাহ ইউসুফজাই ডয়চে ভেলেকে বলেন, আফগান তালিবান বাহিনীতে পাকিস্তানিদের যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা কম৷ অন্তত ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় যেমন দলে দলে পাকিস্তানি যোগ দিয়েছিল, এবার তা হবে না বলেই মনে করেন ইউসুফজাই৷

ইউসুফজাই বলেন, ‘‘সরকারের নজরদারি থাকায় পরিস্থিতি এখন অনেকটাই আলাদা। সরকার মানুষকে সীমান্ত পেরিয়ে আফগানিস্তানে গিয়ে তালিবানের পক্ষে লড়াই করতে দেবে না৷ তবে, আফগান সীমান্তের নিকটবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষ এখনও লড়াই করতে এবং অনুদান সংগ্রহ করতে পারে৷" পাকিস্তানে অধ্যয়নরত কিছু আফগান শিক্ষার্থী তালিবানের সমর্থনে আফগানিস্তানের দিকে রওনা হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

পেশোয়ার-ভিত্তিক বিশ্লেষক সামিনা আফ্রিদি বিশ্বাস করেন যে, পাকিস্তানের আদিবাসী-অধ্যুষিত উপত্যকায় আফগান তালিবানদের সমর্থন কমেছে। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন,‘‘উত্তর ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে আফগান তালিবানের সমর্থন রয়েছে, তবে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের অন্যান্য অংশের বেশিরভাগ মানুষ স্কুল, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট এবং অবকাঠামো চায়, জঙ্গিবাদ নয়৷ সেটা আফগান তালিবান বা অন্য যে কোনো গোষ্ঠীর কাছ থেকেই হোক৷’’

আফ্রিদি মনে করেন, তালিবানের প্রতি সহানুভূতিশীল আলেমরা যোদ্ধা নিয়োগ বা অনুদান সংগ্রহ করতে পারেন৷ তবে পশতুন তাহাফুজ আন্দোলনের মতো তৃণমূলের যুদ্ধবিরোধী সংগঠনগুলিও এসবের বিরুদ্ধে ‘তীব্র’ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে৷

হারুন জাঞ্জুয়া (ইসলামাবাদ)/এডিকে

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান