দুই বাংলার মিলন
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩বাংলাদেশের রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলগীতির শিল্পীরা কলকাতা-সহ বাকি পশ্চিমবঙ্গেও অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মিতা হক বা ইফ্ফাত আরা দেওয়ান ওপার বাংলায় যতটা ভালবাসা পান, এপারেও ততটা ভালবাসা এবং সম্মান তাঁদের জন্য তোলা থাকে৷ সেই শিল্পীদের মুখোমুখি বসে গান শোনার সুযোগ৷ তাও একটা-দুটো দিন নয়, টানা নদিন৷ এমন দীর্ঘায়িত গানের আসরের কথা প্রায় শোনাই যায় না, বললেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু৷
‘সঙ্গীত রিসার্চ আকাদেমি'-র পক্ষে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী চমৎকার বলেন যে, বিনোদনের ক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশের লোকেদের একটা প্রবণতা আছে পশ্চিমের দিকে দেখার, কিন্তু পুবে, যেদিকে সূর্যের উদয় হয়, সেদিকে অনেকেই দেখেন না৷ এবার সময় এসেছে পশ্চিম থেকে পুবে মুখ ফেরানোর৷ টানা নয় দিনের এই বাংলা গানের উৎসবের প্রথম উদ্দেশ্যই তাই দুই বাংলার সাংগীতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়া৷ সেই সঙ্গে শিল্পী এবং শ্রোতার সম্পর্কের নবীকরণ৷
সেই কারণেই বাংলাদেশের জাতীয় কবি, দুই বাংলারই বিদ্রোহী সত্তার প্রতিভূ নজরুল ইসলামের স্মৃতিতে উৎসর্গ করা এই সংগীত উৎসবে রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের গানের পাশাপাশি জায়গা পেয়েছে লালনগীতি ও অন্যান্য লোকসংগীত, পুরাতনী ও বৈঠকী গান, ধ্রুপদী অঙ্গের গান এবং আধুনিক জীবনমুখী গানও৷ নয় দিনের অনুষ্ঠানের প্রথম সন্ধের অনুষ্ঠানটি ছিল বাংলাদেশের সদ্য প্রয়াত সংগীতশিল্পী সোহরাব হোসেনের স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদিত৷ আর দ্বিতীয় দিনের সারা রাতব্যাপী অনুষ্ঠানটি ছিল বাংলাদেশের বিশিষ্ট নজরুলগীতি শিল্পী নীলুফার ইয়াসমিনকে উৎসর্গ করা৷
এই সন্ধেতেই ইফ্ফাত আরা দেওয়ান, ফারহানা রহমানের পাশাপাশি সংগীত পরিবেশন করেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, পণ্ডিত অরুণ ভাদুড়ি ও কৌশিকী দেশিকান৷ অন্যান্য সন্ধ্যার শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন শামা রহমান, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মিতা হক, লাইসা আহমেদ লিসা, অদিতি গুপ্ত, প্রমুখ৷ পশ্চিমবঙ্গের সংগীতশিল্পীদের মধ্যে ছিলেন শ্রীকান্ত আচার্য, স্বাগতালক্ষী দাশগুপ্ত, জয়তী চক্রবর্তী, শুভমিতা ও শ্রেয়া গুহঠাকুরতা৷ দুই বাংলার প্রযোজনায় রবীন্দ্রনাথের দুটি গীতিনাট্যও মঞ্চস্থ হয়৷ একটি ভাবনা সংস্থার প্রযোজনায় ভানুসিংহের পদাবলী, যার ভাষ্যপাঠে ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাট্যকর্মী আসাদুজ্জামান নূর৷ অন্যটি কলকাতার দক্ষিণী সংস্থা প্রযোজিত শাপমোচন৷
বাংলাদেশের যে সংস্থার সুবাদে এই সংগীত উৎসবের স্বাদ পেলেন কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের উৎসাহী শ্রোতারা, সেই বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রাণপুরুষ আবুল খায়ের লিটু উপস্থিত ছিলেন দ্বিতীয় দিনের সারারাত্রিব্যাপী অনুষ্ঠানে৷ তিনি জানালেন, বাংলা গান নিয়ে এমন উদ্যোগ গোটা এশিয়াতেই কখনও হয়নি৷
বেঙ্গল ফাউন্ডেশন কলকাতার এই সংগীত উৎসব উপলক্ষে বেশ কিছু নতুন গানের সিডি প্রকাশ করে৷ ‘সঙ্গীত রিসার্চ আকাদেমি' চত্বরে এইসব সিডি বিক্রির একটি স্টলও ছিল৷ ছিল রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল বিষয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকাশনা. এবং অবশ্যই বাঙালি খাবার৷ বিরিয়ানি থেকে শুরু করে পুলিপিঠে৷ আর তার সঙ্গে গান তো ছিলই৷