পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, পাঞ্জাবে আপ কংগ্রেসের সঙ্গে যাবে না
২৪ জানুয়ারি ২০২৪আলোচনা চলছিল, কংগ্রেসকে দুইটি আসন ছাড়তে চেয়েছিলেন মমতা । কংগ্রেস তাতে রাজি হচ্ছিল না। শেষপর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার জানিয়ে দিয়েছেন, ''আমাদের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা পশ্চিমবঙ্গে একা লড়ব। লোকসভা নির্বাচনের পর জোট নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।''
মমতার এই ঘোষণায় ভারতে ইন্ডিয়া জোট একটা বড় ধাক্কা খেল। বিজেপি-র বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির জোট নিয়ে মমতা অনেকদিন ধরেই উদ্য়োগ নিয়েছিলেন। বিজেপি-র প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের একজন প্রার্থীর প্রস্তাব তিনিই দিয়েছিলেন। ইন্ডিয়া জোটের শেষ বৈঠকে মমতার প্রস্তাব ছিল, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে কে কটা আসনে লড়বে, সেটা ঠিক করে নেয়া হোক। তিনি জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে খাড়গের নামও প্রস্তাব করেছিলেন। খাড়গে তাতে রাজি হননি।
মমতা বলেছেন, তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন লোকসভায় তিনশ আসনে কংগ্রেস লড়াই করুক। বাকি আসন আঞ্চলিক দলগুলির জন্য ছেড়ে দেয়া হোক। তা মানা হয়নি।
মমতা যখন কংগ্রেসকে দুইটি আসন দিতে চান, তখন কংগ্রেসের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, তারা এত কম আসন নেবে না। মমতাকেও একটু উদার হতে হবে। এ নিয়ে টানাপোড়েনও হয়। এই পরিস্থিতিতে রাহুল গান্ধী মঙ্গলবার বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক খুবই ভালো। তার ব্যক্তিগত সম্পর্কও ভালো। কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে বোঝাপড়ার প্রক্রিয়া চলছে। মাঝেমধ্যে কেউ কিছু বলে দেন, তাতে বিতর্ক হয়। কিন্তু এই সব কথা আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে বাধা হবে না।
রাহুল এখন ন্যায় যাত্রা করছেন। বৃহস্পতিবার তিনি পশ্চিমবঙ্গে ঢুকবেন। মমতা বলেছেন, ‘‘এই যে পশ্চিমবঙ্গে যাত্রা করছে, অথচ আমায় তো কিছু বলেনি।’’
কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণার পরেও কংগ্রেসের মুখপাত্র ও রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রায় সঙ্গী জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘‘আপনারা মমতাজির পুরো বক্তব্য শুনেছেন কি? তিনি বলেছেন, বিজেপি-কে হারাতে চাই। বিজেপি-কে হারাবার জন্য যা করার হয় করব। এই ভাবনা নিয়ে আমরা পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করছি। লম্বা সফর করছি।’’
জয়রামের দাবি, ‘‘লম্বা সফরে কখনো স্পিড ব্রেকার আসে। আবার আমরা তা পেরিয়ে যাই। লালবাতি সবুজ হয়ে যায়। রাহুল তো কাল বলেছেন, মমতা ইন্ডিয়া জোটের খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। মমতা ছাড়া ইন্ডিয়া জোটের কল্পনা করি না। আমরা আশা করব, যে কথাবার্তা চলছে, তা ফলপ্রসূ হবে। ইন্ডিয়া জোট হিসাবেই লড়বে। সব দল তাতে সামিল হবে।’’
মমতা বলেছেন, তাকে ন্যায় যাত্রায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জয়রাম বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে, রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক মমতা ও তৃণমূলের কথা বলেছেন। খাড়গেজি ইন্ডিয়া জোটের সব দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।’’
কেন এই সিদ্ধান্ত?
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘হয়ত চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। হয়ত, মমতার মনে হচ্ছে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লাভ নেই। কংগ্রেস আলাদা লড়লে ভালো। কারণ, কংগ্রেস সামান্য যে ভোট পায়, একসঙ্গে লড়লে তার সিংহভাগ বিজেপি-র কাছে চলে যেতে পারে।’’
এটা কি মমতার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নাকি কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনার পথ এখনো খোলা থাকছে। সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘‘মমতা কংগ্রেসকে দুইটি আসন ছাড়তে চেয়েছিল। কংগ্রেস বেশি আসন চাইছে। ভালো আসন চাইছে। তাই সম্ভবত মমতা এই ঘোষণা করলেন। পাল্টা চাপ দিলেন। হয় দুই নিয়ে জোট কর, নাহলে আলাদা যাও।’’
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ও সাবেক বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘আমি তো ২০১৪ থেকে সিপিএমের সঙ্গে জোট করার কথা বলছি। তবে এখন আমি মমতার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না।’’
সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী আবার ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস গত দুই বছর ধরে রাজ্যে যেভাবে চলেছে, তাতে এখন যদি তারা তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলায়, তাহলে সব নষ্ট হয়ে যাবে। দল থেকে প্রচুর নেতা-কর্মী চলে যাবে। দলের ৯০ শতাংশ নেতা-কর্মী তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতে চান না।’’
দীপ্তেন্দ্রর মতে, ‘‘জোটটা করতে মমতা আগ্রহী ছিলেন। কারণ, আইএসএফ, সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেস যদি হাত মেলায় তাহলে সংখ্যালঘু ভোট মমতার দিক থেকে বেশ কিছুটা অন্যদিকে যেতে পারে। তাই মমতাই কংগ্রেসকে সঙ্গে চাইছিলেন। এখন কংগ্রেসের নেতারা না চাওয়ায় তিনি একলা চলোর কথা বলছেন।’’
পাঞ্জাবে আপের একলা চলো
পাঞ্জাবে লোকসভার ১৩টি আসনে ক্ষমতাসীন আপ একাই লড়বে। আপের সঙ্গেও দিল্লি ও পাঞ্জাবে আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেসের কথা হচ্ছিল। পাঞ্জাবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদেরও এই সমঝোতা নিয়ে আপত্তি ছিল। বুধবার আপ ঘোষণা করে, তারা পাঞ্জাবে একাই লড়বে।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই)