বিএনপি'র শর্তে গা নেই সরকারি দলের
২ সেপ্টেম্বর ২০১৮শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর বক্তৃতায় আগামী নির্বাচনে যাওয়ার আগে ছয়টি দাবি পূরণের কথা বলেছেন৷ শর্তগুলো হলো, প্রথমত, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তাঁর নামে দেয়া সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে৷ আরো রয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিতে হবে৷ নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে৷ বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে৷
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সমাবেশে প্রধান দাবি হিসেবে উঠে এসেছে৷ বক্তারা বলেছেন বিএনপি'র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়৷ জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন৷
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী৷ তিনি রবিবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সরকারের কাছে এই দাবি পেশ করেছি৷ সরকার এ নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারে৷ কিন্তু সরকার যদি আলোচনায় না আসে তাহলে আন্দোলন হবে৷ আমরা আন্দোলন শুরু করবো৷ আর এটা তো শুধু বিএনপি'র দাবি নয়৷ বাম জোট এবং যুক্তফ্রন্টও দু'একটি ছাড়া একই ধরনের দাবি দিয়েছে৷ দাবির পক্ষে এখন অনেকগুলো দল৷ তাই যুগপৎ আন্দোলন হবে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা এখন ধারাবাহিক কর্মসূচি দেব৷ এই মাসেই অনেকগুলো কর্মসূচি দেয়া হবে৷ এভাবে ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমেই আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাব৷ সাধারণ মানুষকে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা হবে৷ আর সেই কাজ আমরা এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছি৷''
তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক করতে হলে আমাদের দাবিগুলো সরকারকে মানতে হবে৷''
খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘এটা আমাদের এক নম্বর দাবি, দেশের নেতা-কর্মীরাও এটা চায়৷ আমরা বলেছি খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচন হবে না৷''
বিএনপি'র এইসব দাবির ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ মাহবুব উল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে সরকার কারাদণ্ড দেয়নি৷ তাকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত অর্থ আত্মসাতের মামলায়৷ তার বিরুদ্ধে আরো মামলা আছে৷ এগুলোকে আইনগতভাবেই মোকাবেলা করতে হবে৷ আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করতে পারেন৷ এসব নিয়ে সরকারের কিছু নেই৷ বিএনপি জানে খালেদা জিয়াকে আইনগতভাবে নির্দোষ প্রমাণ করা যাবে না৷ তাই তারা আইনের পথে না গিয়ে তাকে মুক্তি দেয়ার অযৌক্তিক দাবি তুলছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘নির্বাচন হবে সাংবিধানিক পদ্ধতিতে৷ সংবিধানে যে রকম আছে সে রকমই নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার সব কিছু হবে৷ কোনো দলের দাবির কারণে সংবিধান পরিবর্তন করার প্রশ্নই ওঠে না৷ আর এটা করলে যে যার সুবিধামত সংবিধান পরিবর্তন করতে চাইবে৷''
নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে রাষ্ট্রপতির গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে অত্যস্ত স্বচ্ছ উপায়ে৷ সেখানে আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ আরো অনেক দল নাম দিয়েছে৷ সেখান থেকেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে৷ তাই নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপি'র দাবির কোনো যৌক্তিকতা নেই৷ বিএনপি সব সময়ই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে৷ এবারো তাই করছে৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি কঠোর আন্দোলন করবে কি করবে না এটা তাদের ব্যাপার৷ এ নিয়ে আমরা কোনো কথা বলতে চাই না৷ সরকার আছে৷ বিএনপি যদি আন্দোলনের নামে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির চেষ্টা করে সেটা সরকার দেখবে৷''২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও তাদের জোটভুক্ত দলগুলো৷ তারা নির্বাচন প্রতিহতেরও ঘোষণা দিয়েছিল৷ তারা দাবি করেছিল নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ ঐ একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে৷ চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা রয়েছে৷ তার আগে বিএনপি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যজোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে৷ তবে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে বিএনপি যাবে কি যাবে না তা জানতে আরো অপেক্ষা করতে হবে৷