ভারতে জঙ্গি নাশকতার ছক
২৫ মার্চ ২০১৪ভারতের নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে রক্তাক্ত করে তোলার যে ছক কষেছিল পাকিস্তানের মদৎপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, দিল্লি পুলিশের বিশেষ স্কোয়াডের তৎপরতায় তা গেছে ভেস্তে৷ শনিবার সকালে রাজস্থানের আজমের রেল স্টেশনে দিল্লি পুলিশের এক বিশেষ সেলের হাতে ধরা পড়ে জিয়াউর রহমান ওরফে ওয়াকাস৷ পুলিশের দাবি, ওয়াকাস পাকিস্তানি নাগরিক৷ তাকে জেরা করে পুলিশ রাজস্থানের জয়পুর ও যোধপুর শহর থেকে গ্রেপ্তার করে আরো তিনজনকে৷ এদের আস্তানায় তল্লাসি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক, ডিটোনেটর, ইলেক্ট্রনিক সার্কিট, টাইমার ইত্যাদি৷ এরপর তাদের দিল্লির আদালতে তোলা হলে, আদালত তাদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়৷
ভোটের সময় সহিংস হামলা হতে পারে বলে ভারতের গোয়েন্দা বিভাগ আগে থেকেই আশঙ্কা করেছিল৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর সেজন্য প্রতিটি নির্বাচনি জনসভা, রোড-শো এবং বিভিন্ন নির্বাচনি কর্মসূচির দিকে বিশেষ নজরদারির নির্দেশ দেয়৷ বিশেষ করে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী, আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের দিকে৷ তবে জঙ্গি হামলার প্রধান নিশানা মোদী হতে পারে বলে মোদীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল সিন্দের মতে, রাজীব গান্ধীর মতো মোদীর ওপরও আত্মঘাতি জঙ্গি হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেবার মতো নয়৷ এই আত্মঘাতি হামলা চালাতে পারে মোদীর সমর্থক সেজে কোনো জঙ্গি৷ উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে তামিল টাইগার বা এলটিটিই সদস্যরা মানববোমা ব্যবহার করে রাজীব গান্ধীকে হত্যা করেছিল৷ শুধু তাই নয়, পুলিশ সূত্রে জানা গেছে যে রাজস্থানের বিখ্যাত পর্যটনস্থল পুষ্করে বিদেশি পর্যটক, বিশেষ করে ইসরায়েলি পর্যটকরা এদের নিশানায় ছিল, যাতে ভারতে আসা পর্যটকদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা যায় এবং পর্যটক আসা বন্ধ হয়৷
কে এই জিয়াউর রহমান ওরফে ওয়াকাস? দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেলের কমিশনার জানিয়েছেন, এক কৃষক পরিবারের সন্তান ওয়াকাস পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দা৷ ২০১০ সালে নেপাল হয়ে সে ভারতে ঢোকে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রিয়াজ ভাটকলের নির্দেশে এবং ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের হয়ে কাজ করার জন্য৷ কুখ্যাত জঙ্গি ওয়াকাস বোমা বানানোয় ওস্তাদ৷ নানা ধরনের বোমা বানাতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার৷ ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে পাঁচটি বিস্ফোরণের সঙ্গে তার যুক্ত থাকার অকাট্য প্রমাণ আছে বলে পুলিশের দাবি৷ দিল্লির জামা মসজিদ, বারাণসী, মুম্বই, পুণে ও হায়দ্রাবাদের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের বড় চাঁই ছিল এই ওয়াকাস৷ ভাটকল পুলিশের জালে ধরা পড়লে ওয়াকাস বিভিন্ন রাজ্যে গা ঢাকা দিয়ে থাকে৷ গত শুক্রবার সে মুম্বই থেকে ট্রেনে করে আজমের স্টেশনে নামবে – আগে থাকতেই এমন খবর পেয়ে পুলিশও ছিল তৈরি৷ ওয়াকাসের অন্য তিনজন সঙ্গীর বয়স ২০ থেকে ২৫-এর মধ্যে৷ এরা সকলেই ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র৷
নিরাপত্তা গোয়েন্দা বিভাগ এবং জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ কড়া নজর রেখেছে লস্কর-ই-তৈবা, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন এবং সিমি সদস্যদের গতিবিধির দিকে৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিও খুঁটিয়ে দেখছে এবং সেই মতো বিভিন্ন রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে দিচ্ছে৷