ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক
২৪ মার্চ ২০১৪ভারতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ৷ নিরাপত্তা থেকে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার জন্য ভারত সর্বদাই কৃতজ্ঞ বাংলাদেশের কাছে৷ গত ২১ ও ২২শে মার্চ দুই দিনের দিল্লি সফরে এসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বৈঠক করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমান খুরশিদ, পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গে৷ শহিদুল হকের সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমান খুরশিদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ভারত-বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক বন্ধনে আবদ্ধ৷ ভারতে নির্বাচনের পর যে-দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মানচিত্রটা একই থাকবে৷ দিল্লির বাংলাদেশ নীতির পরিবর্তন হবেনা বহু কারণে৷ অটুট থাকবে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থন৷
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গে বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ওঠে সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে ভোটের সময় সীমান্ত নিরাপত্তা, ব্যবসা বাণিজ্য, তিস্তা নদীর জলপ্রবাহ, স্থলসীমা চুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে৷ ভারতে ভোটের সময় বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে যাতে জঙ্গিরা ভারতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে তারজন্য সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় দিল্লি৷ সম্প্রতি হাসিনা সরকার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়ায় তাঁদের ভারতে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা বেড়ে গেছে৷ এজন্য সীমান্তের উভয়দিকে টহলদারি জোরদার করার কথা বলা হয়৷
ঢাকার অভিযোগ, সিকিমে বাঁধ নির্মাণের ফলে তিস্তার জলপ্রবাহ অনেকটা কমে গেছে, যা আসন্ন শুকনো মরসুমে বাংলাদেশের সমস্যা বাড়িয়ে দেবে৷ সাধারণ কৃষিজীবীদের অসন্তোষ হবে লাগাম ছাড়া৷ আর সেই অসন্তোষকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে চাইবে বিরোধীপক্ষ৷ বিষয়টি ভারত খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে৷ ভারতের বহরমপুর এবং পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে অতিরিক্ত আরো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা বলা হয়েছে৷
ঝুলে থাকা ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমা চুক্তির ভবিষ্যত নিয়েও কথা হয়৷ পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং গত বছরের ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে এবিষয়ে যা বলে এসেছিলেন তারই পুনরাবৃত্তি করেন৷ স্থলসীমা চুক্তির জন্য সংবিধান সংশোধনী বিল সংসদে পেশ করা হয়েছে৷ বিরোধী দলগুলির হৈ হট্টগোলে সংসদের কাজকর্ম অচল হয়ে থাকায় বিলটি এখনো সংসদের এক্তিয়ারে আছে বলে জানান তিনি৷
তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংসদের ভেতরে ও বাইরে প্রস্তাবিত ঐ বিলের বিরোধিতা করায় ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক তার প্রতিবাদ করে বলেছেন, ৫১ হাজার পরিবারের ভাগ্য নিয়ে ছেলেখেলা করতে পারেনা রাজনৈতিক দলগুলি৷ নাগরিকত্বহীন এতগুলি মানুষের ভবিষ্যত গত ৬৬ বছর ধরে অনিশ্চয়তার ফাঁসে আটকে আছে, যা বরদাস্ত করা যায় না৷ স্থানীয় মানুষজনদের অসন্তোষ প্রতিফলিত হতে পারে ভোট বাক্সে৷ হাসিনা সরকার অবশ্য বাংলাদেশে ভোটের আগে বিলটি পাস করাবার জন্য দিল্লিকে চাপ দিয়ে যাচ্ছিল৷
২০১১ সালে ঢাকা সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ড. সিং স্থলসীমা চুক্তি সই করে আসেন৷ যেহেতু ভূখন্ড হস্তান্তরের প্রশ্ন আছে, তাই সংবিধান সংশোধন জরুরি৷ উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কড়া আপত্তির কারণে তিস্তা চুক্তি রূপায়নের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি মনমোহন সিং সরকার৷
পররাষ্ট্র দপ্তরের সূত্র বলছে আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অনুমোদন বাধ্যতামূলক নয়৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আস্থা রেখে মমতাকে নানাভাবে রাজি করাবার চেষ্টা কম করেননি৷ আগামী মে মাসে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের সঙ্গে বকেয়া বিষয়গুলির সমাধান হবে বলে মনে করছে দিল্লি৷ যে সরকারই আসুক জাতীয় স্বার্থের কথা চিন্তা করে এই দুটি চুক্তি ঝুলিয়ে রাখতে পারবে না৷ নতুন সরকার যদি বিজেপি হয় তাহলে ঐ দুটি চুক্তি রূপায়নের কৃতিত্ব দাবি করে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতে মৈত্রী ও সহযোগিতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে৷