‘নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’: ‘সরি’-র পর ‘সিন্সিয়ার্লি’
১৭ জুলাই ২০১১ফোন হ্যাকিং তথা টেলিফোনে আড়িপাতার পরিণাম যে এতোটা ভয়াবহ হবে তা হয়তো আগে টের পাননি অথবা টের পেয়েও ব্যাপারটা পাত্তা দেননি গণমাধ্যম মোঘল রুপার্ট মারডক কিংবা তাঁর আস্থাভাজন নীতি নির্ধারকরাও৷ এখন তারই খেসারত গুণতে হচ্ছে কড়ায়-গণ্ডায়৷ যুক্তরাজ্যের মতো দেশে একটি শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের এমন কাণ্ড প্রকাশ হওয়ার পর তাই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে চলেছে ঘটনা পরম্পরা৷ গণমাধ্যম জগত এবং পুলিশ থেকে শুরু করে এর ঝড় লেগেছে ব্রিটিশ সংসদ পর্যন্ত৷
ফোন হ্যাকিং কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর জোর বিতর্ক শুরু হলে তড়িঘড়ি করেই ১৬৮ বছরের নীরব সাক্ষী ‘নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড' এর শেষকৃত্যানুষ্ঠান আয়োজন করা হয়৷ হয়তো মারডক এবং তাঁর পরামর্শদাতারা ভেবেছিলেন এরই মাধ্যমে কেলেঙ্কারির সব পাপ ঘুচে যাবে৷ কিন্তু তেমন কিছু ঘটার কোন সুযোগ নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ কারণ একের পর এক নতুন নতুন পটভূমির সূচনা হচ্ছে এই ঘটনা নিয়ে৷ ঘটনার প্রকৃত চেহারা উন্মোচনে তদন্ত করছে ব্রিটিশ পুলিশ৷ তদন্তে নামছে ব্রিটিশ সংসদীয় বিশেষ পরিষদ৷ আটক করা হয়েছে পত্রিকাটির সাবেক নির্বাহী সম্পাদক নেইল ওয়েলিসসহ নয় জনকে৷
ফোনে আড়ি পাতার খেসারত হিসেবে ১২ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে টেলিভিশন প্রতিষ্ঠান বিস্কাইবি'র মালিকানা পাওয়ার পরিকল্পনাও বাদ দিতে হয়েছে ৮০ বছর বয়সি পুঁজিপতি মারডককে৷ এছাড়া ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন পত্রিকাটির সাবেক সম্পাদক এবং নিউজ ইন্টারন্যাশনাল এর প্রধান নির্বাহী ৪৩ বছর বয়সি রেবেকা ব্রুকস৷ জানা গেছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন থেকে শুরু করে নিউজ কর্প এর অন্যতম অংশীদার সৌদি রাজপুত্র আলওয়ালিদ বিন তালাল পর্যন্ত একাধিক মহল থেকে আহ্বানের প্রেক্ষিতেই পদত্যাগ করতে হয়েছে ব্রুকসকে৷ তবে পদত্যাগ করেও সহজে ছাড় পাচ্ছেন না ব্রুকস৷ আগামী মঙ্গলবার সংসদীয় বিশেষ কমিটির সামনে হাজির হতে হচ্ছে রুপার্ট মারডক, তাঁর ছেলে জেমস মারডক এবং রেবেকা ব্রুকসকে৷
এদিকে, ব্রুকস-এর পদত্যাগের পর মারডকের অপর প্রতিষ্ঠান ‘ডাও জোনস অ্যান্ড কোম্পানি'র প্রধান নির্বাহী এবং মারডকের অন্যতম আস্থাভাজন কর্মকর্তা লেস হিন্টন জানিয়ে দিলেন তাঁর পদত্যাগের কথা৷ নিউজ কর্পের সাথে ৫২ বছরের কর্মজীবনের ইতি ঘটালেন হিন্টন৷ একইসাথে পদত্যাগপত্রে হিন্টন উল্লেখ করেন, ‘‘বাহ্যত যা কিছু ঘটেছে সে ব্যাপারে আমি জানতাম না৷ তবে তা অসঙ্গতও বটে এবং এই প্রেক্ষিতে আমি নিউজ কর্প থেকে পদত্যাগ করাই যুক্তিযুক্ত মনে করছি৷ এছাড়া নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড-এর কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গের কাছে ক্ষমা চাই আমি৷''
নিজের ডালপালা ছড়ানো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর যখন এই অবস্থা কেবল শুরু হয়েছে তখনই নিজেও এসব ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিলেন রুপার্ট মারডক৷ এতে তিনি স্বীকার করলেন যে, তাঁর পত্রিকার দায়িত্ব ছিল অন্যদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার কিন্তু পত্রিকাটি নিজের ক্ষেত্রেই সেই সততা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘যে মারাত্মক ভুল হয়েছে তার জন্য আমরা দুঃখিত৷ এর ফলে যেসব ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্যও দুঃখ প্রকাশ করছি৷ আগামী দিনগুলোতে আমরা এ বিষয়টি সমাধানে এবং ক্ষতিপূরণে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করবো৷ আপনাদের সকলকে সে ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানানো হবে৷'' বিবৃতির শেষে এই মিডিয়া টাইকুন স্বাক্ষরসহ লিখে দিয়েছেন ‘সিন্সিয়ার্লি, রুপার্ট মারডক'৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী