আর নিউজ দেবে না নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড
১০ জুলাই ২০১১সেই ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যাত্রা শুরু হয় এই নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড পত্রিকাটির, যখন গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল অল্প কিছু শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে৷ তারপর দীর্ঘ দেড় শতাব্দীরও বেশি পার করেছে ফ্লিট স্ট্রিটের এই পত্রিকাটি৷ বছরের পর বছর চাঞ্চল্যকর খবরের পাশাপাশি আলোচিত বহু ছবি ছাপিয়েছে তারা৷ কিন্তু সব কিছুর যেমন শেষ আছে, তেমনি এই পত্রিকাটিও শেষ পর্যন্ত তার যাত্রা সমাপ্তি টানলো৷ শেষ দিনের সংখ্যার প্রথম পাতাতে বড় করে শুধু একটি কথাই লেখা, ‘‘ধন্যবাদ এবং বিদায়''৷ আর শেষ পাতাটিতে ছাপা হয়েছে ১৬৮ বছর আগে প্রকাশিত প্রথম সংখ্যার ছবি৷
এত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নিয়েও শেষটা হলো কেলেঙ্কারির মধ্য দিয়ে৷ গত কয়েকদিন ধরে নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এর এই কেলেঙ্কারি ঝড় তুলেছে সংবাদ মাধ্যম ও রাজনীতিক মহলে৷ দিনের পর দিন খ্যাতনামা ব্যক্তিদের ফোন টেপের পাশাপাশি পুলিশকে ঘুষ দিয়ে গোপন তথ্য সংগ্রহ করে আসছিলো এই পত্রিকার সাংবাদিকরা৷ এনিয়ে একাধিকবার তদন্তও হয়েছে নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এর বিরুদ্ধে৷ কিন্তু কিছু হয়নি৷ তবে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়তে হলো তাদের৷ ব্রিটেনের অন্যান্য মিডিয়া ফাঁস করে দিলো কীভাবে লন্ডন বোমা হামলায় হতাহতদের আত্মীয়দের ফোন তারা টেপ করেছে৷ এছাড়া নিহত এক সেনার পরিবারের ফোনও তারা টেপ করেছে বলে ফাঁস হয়েছে৷ এতদিন ধরে তারকাদের গোপন খবর ফাঁস করায় কারো আপত্তি ছিল না, কিন্তু সাধারণ মানুষের গোপনীয়তা নিয়ে এভাবে খেলা করায় টনক নড়েছে সবার৷ যার ফলাফল চারিদিকে তীব্র নিন্দার ঝড় আর শেষ পর্যন্ত নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এর যবনিকা পতন৷
এই ঘটনায় ভীষণভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা, অন্তত নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এর তো বটেই৷ বিদায় নেওয়ার সময় পত্রিকাটির সম্পাদক কলিন মাইলার পাঠকদের উদ্দেশ্যে তাই বললেন, ‘‘এই অবস্থায় আমরা পড়তে চাইনি এবং এই অবস্থানে আমাদের থাকার কথাও নয়৷ তবে এটাই আমাদের সাড়ে সাত মিলিয়ন পাঠকদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা, এটা আপনাদের ও সকল কর্মরতদের জন্য৷''
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, তারা নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এর ফোন টেপের ঘটনা নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাবে৷ অভিযোগ রয়েছে, ইতিমধ্যে টেপ করা অনেক গোপন বার্তা মুছে ফেলা হয়েছে৷ তবে পত্রিকাটির পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে৷ অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলো ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলোর জন্য আরও কঠোর নিয়মনীতির কথাও বলছে এখন৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই