নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে সেমির আরো কাছে সাউথ আফ্রিকা
১ নভেম্বর ২০২৩ক'দিন আগেই রাগবি বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের অল ব্ল্যাকদের হারিয়ে শিরোপা জিতেছে স্প্রিংবকরা৷ কিউইদের ক্রিকেট দল ব্ল্যাক ক্যাপসের সামনে সুযোগ ছিল সেই পরাজয়ের ‘প্রতিশোধ' নেওয়ার৷ কিন্তু রাগবি দল তাও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে হেরেছে, ব্ল্যাক ক্যাপসরা সেই লড়াইও করতে পারল না৷ পুনের গ্যালারি ছিল দর্শকে ঠাসা, নিরপেক্ষ দর্শকদের জমজমাট একটা ম্যাচ দেখার আশাও তাই পূরণ হয়নি৷
আফ্রিকা বড় ব্যবধানে জিতেছে বটে, কিন্তু ইতিহাস জানা থাকলে আপনি এই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের পক্ষেই বাজি ধরতেন৷ বিশ্বকাপে আগের পাঁচ দেখাতেই সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড৷ কিন্তু পুনেতে এসে সেই ইতিহাস বদলে গেল, বিশ্বকাপের ষষ্ঠ জয়ে সেমিফাইনালের দরজাটা এখন স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছে প্রোটিয়ারা৷ আর শুরুর চার ম্যাচে জয়ের পর টানা তিন হারে শেষ চারের পথ কিছুটা দূরে মিলিয়ে গেল নিউজিল্যান্ডের জন্য৷
আজকের হারের জন্য নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম শুধু নিজেকেই দায়ী করতে পারেন৷ টসের সময়ই কি আসলে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল? এই বিশ্বকাপে শুরুতে ব্যাট করে কোনো ম্যাচ হারেনি সাউথ আফ্রিকা, তাদের প্রথমে ব্যাট মানে রানের পাহাড় গড়া৷ যে একটি ম্যাচ হেরেছে, নেদারল্যান্ডসের কাছে সেটাও পরে ব্যাট করে৷ আফ্রিকার এমন রেকর্ড মাথায় রেখেও কেন আগে তাদের ব্যাট করতে পাঠালেন ল্যাথাম? আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ৩৮৮ রান তাড়া করে প্রায় কাছাকাছি চলে যাওয়াটাই আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল?
সেই আত্মবিশ্বাস হোক, শিশিরের কারণে হোক বা অন্য যাই হোক, ল্যাথামের পরিকল্পনা কাজে আসেনি৷ নিউজিল্যান্ড শুধু হারেইনি, এত বড় ব্যবধানে হেরেছে তাদের রান রেটও এক ধাক্কায় নেমে গেছে অনেকটা৷ কে জানে, সেমির দৌড়ে এই রান রেটই আবার ভাগ্য গড়ে দেয় কিনা!
অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে যেমন রান পেয়েছিলেন কিউই ব্যাটাররা, আজ আর সেটা হয়নি৷ সাউথ আফ্রিকার মার্কো ইয়ানসেন এই বিশ্বকাপে পাওয়ারপ্লেতে নিয়মিত উইকেট নেওয়া অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন৷ আজ তার প্রথম ডেভন কনওয়ে, কিউই ওপেনার তার জন্মভূমির বিপক্ষে ফিরলেন ২ রানে৷
নিউজিল্যান্ড সম্ভবত সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেল এরপর৷ এই বিশ্বকাপে তাদের ‘সারপ্রাইজ প্যাকেজ' রাচীন রবীন্দ্র হতে পারতেন তুরুপের তাস৷ তিনিও পুল করতে গিয়ে ইয়ানসেনের বলে ক্যাচ দিলেন ৯ রানে৷ উইল ইয়াং ভালোই খেলছিলেন, কিন্তু ৩৩ রানে ফিরলেন জেরাল্ড কোটজিয়ার বলে৷
৫৬ রানে ৩ উইকেট থেকে দেখতে দেখতে ৬৭ রানে ৪, এরপর ৯০ রানে ৫ উইকেট হারাল নিউজিল্যান্ড৷ অধিনায়ক ল্যাথাম, ড্যারিল মিচেল কেউই কিছু করতে পারেননি৷ হাতে চোট পেয়ে জিমি নিশাম পরে নেমেছেন, ম্যাচের ভাগ্য তার আগেই লেখা হয়ে গেছে৷ শেষদিকে ইনজুরড ম্যাট হেনরিকে নিয়ে গ্লেন ফিলিপ্স কিছুটা ব্যবধানই কমিয়েছেন৷ শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৫০ বলে ৬০ রান করেছেন ফিলিপ্স৷ নিউজিল্যান্ডের রান ১৫০ পেরিয়েছে তাতে৷ আফ্রিকার ইয়ানসেনই মূলত কিউই ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন, তবে কেশভ মহারাজ ৪ উইকেট নিয়ে ছিলেন প্রোটিয়াদের সফলতম বোলার৷
অবশ্য কিউইদের ব্যাটিং নিয়ে খুব বেশি কিছু বলারও নেই৷ টস জিতেই তো সাউথ আফ্রিকা ম্যাচের অর্ধেকটাই জিতে গেছে৷ তবে তাদের ব্যাটিংয়ের শুরুটা খুব ভালো হয়নি৷২৮ বলে ২৪ রান করে ট্রেন্ট বোল্টের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন অধিনায়ক টেন্ডা বাভুমা, দলের রান তখন ৩৮৷ ডি কক তখন একটু অপ্রত্যাশিতভাবেই কিছুটা নীরব ছিলেন৷ তার সঙ্গী ভ্যান ডার ডুসেনও খুব বেশি স্বচ্ছন্দে ছিলেন না৷ প্রথম ১০ ওভারে ৪৮ রান তুলল আফ্রিকা৷
ফিফটি করতেও ৬২ বল লাগিয়ে ফেলেছিলেন ডি কক৷ এরপরেই হাত খুলে খেলা শুরু করলেন৷ ওদিকে ৬১ বলে ফিফটির পর ভ্যান ডার ডুসেনও তখন হারানো ছন্দ ফিরে পেয়েছেন৷ কিউই ফিল্ডাররাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন তাদের দিকে৷ ৭২ রানে ভ্যান ডার ডুসেন দিয়েছিলেন হাফ চান্স৷ তার আগে ১২ রানেও ডি কক দিয়েছিলেন কঠিন সুযোগ৷ সেটাও নিতে পারেননি ফিলিপ্স৷ ৯৪ রানে ডি কককে রান আউট করার সুযোগও হাতছাড়া করেছে কিউইরা৷
এত সুযোগ দুই হাতে লুফে নিয়ে শেষ পর্যন্ত ডি কক সেঞ্চুরিটা পেয়ে যান নিশামকে পুল করে ছয় মেরে৷ ১০৩ বলের এই সেঞ্চুরি এই বিশ্বকাপে তার চতুর্থ তিন অংকের ইনিংস, এক বিশ্বকাপে এর চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে শুধু রোহিত শর্মার৷ ভারতে ডি ককের ফিফটি মানেই সেটা সেঞ্চুরি, আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও এটা তার প্রথম ৷ শেষ পর্যন্ত ১১৬ বলে ১১৪ রান করে টিম সাউদির বলে কাট করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে৷ আর ডুসেনের সাথে ডি ককের জুটি ভাঙল ঠিক ২০০ রান ওঠার পর৷
ওদিকে ভ্যান ডার ডুসেনও এরপর কচুকাটা করতে শুরু করছিলেন কিউই বোলারদের৷ চার মেরে তুলে নিয়েছিলেন এই বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, ৫১ ওয়ানডে ইনিংসেই পেয়ে গেলেন তার ষষ্ঠ সেঞ্চুরি৷ ১০৯ রানে আরেকবার কঠিন সুযোগ দিয়েছিলেন, এবার ক্যাচটা হাতে রাখতে পারেননি বোল্ট৷ উলটো বানিয়ে ফেলেন ছয়৷ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইনিংস শেষ করেছেন ১১৭ বলে ১৩৩ রান করে৷ শেষ পর্যন্ত ৩৫৭ রানে ইনিংস শেষ করেছে আফ্রিকা, শেষ ১০ ওভারে তুলেছে ১১৯ রান৷ ডি কক-ডুসেনের পাশাপাশি ৩০ বলে ৫৩ রান করে তাতে বড় অবদান রেখেছিলেন ডেভিড মিলারও৷
বড় হারের সাথে নিউজিল্যান্ডের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে একের পর এক খেলোয়াড়ের চোট৷ কেন উইলিয়ামসন, মার্ক চ্যাপম্যান, লকি ফার্গুসনদের সবাই চোটে ভুগছেন, তাদের সাথে যোগ দিলেন হেনরি ও নিশামও৷ নিউজিল্যান্ড আশা করবে, সেমির পথে চোটাঘাত বড় কাঁটা হয়ে সামনে দাঁড়াবে না৷
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
সাউথ আফ্রিকা ৫০ ওভারে ৩৫৭/৪ (ভ্যান ডার ডুসেন ১৩৩, ডি কক ১১৪, মিলার ৫৩; সাউদি ২/৭৭ )
নিউজিল্যান্ড ৩৫.৩ ওভারে ১৬৭ (ফিলিপ্স ৬০; মহারাজ ৪/৪৬, ইয়ানসেন ৩/৩১)
ফল: সাউথ আফ্রিকা ১৯০ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: রেসি ভ্যান ডার ডুসেন