নারীদের বিনামূল্যে বাসযাত্রার লক্ষ্য ভোট?
১ নভেম্বর ২০১৯এবার ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উপলক্ষ্যে দিল্লির নারীদের এক বিশেষ উপহার দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ গত ২৯ অক্টোবর থেকে মহিলাদের বাস সফরে আর কোনও অর্থব্যয় হবে না৷ বিনামূল্যে যাতায়াত করতে পারবেন তাঁরা৷ শুধু তাই নয়, ওইদিন থেকেই দিল্লির সমস্ত বাসে ‘মার্শাল'বা নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করেছেন তিনি৷ চারিদিকে সাধুবাদ পড়েছে আম আদমি পার্টির এই সিদ্ধান্তে৷ তবে, গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধীরাও এর নিন্দায় সরব হয়েছেন৷ বিশেষত আপ-এর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় জনতা পার্টি সরাসরি কেজরিওয়াল সরকারের এই ঘোষণাকে ‘নির্বাচনী চমক'আখ্যা দিয়েছেন৷
তাঁর সরকারের এই প্রকল্পে নারীরা কতটা উপকৃত হচ্ছেন, খতিয়ে দেখতে নিজেই সরকারি বাসে চড়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী৷ নারী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ মোটামুটি সবাই খুশি৷ বাসে উঠলেই নারী যাত্রীদের একটি ‘পিঙ্ক টিকিট'দেওয়া হচ্ছে৷ ‘দিল্লি ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন'জানাচ্ছে, প্রকল্প চালুর প্রথম দিনেই ৪.৭৭ লাখ নারী বিনামূল্যে বাস-যাত্রার সুবিধা নিয়েছেন৷ রাজধানী শহরে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি বাস রয়েছে৷ প্রতিটি ‘পিঙ্ক টিকিট'-এর জন্য বাস মালিকদের ১০ রুপি হিসেবে ভর্তুকি দেবে দিল্লি সরকার৷
নতুন দিল্লির বাসিন্দা প্রাক্তন আয়কর কমিশনার বনানী ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি হবে সরকারের এই পদক্ষেপ৷ পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীদের ঘরে আটকে রাখার যে প্রবণতা রয়েছে, তার সঙ্গে লড়াইয়ে গরীব নারীরা তাঁদের পরিবারের ওপর কোনও আর্থিক বোঝা না চাপিয়েই নিজের প্রয়োজনে বিনামূল্যে বাসে চড়ে যাতায়াত করতে পারবেন৷ এর পাশাপাশি পরিবেশের জন্যেও প্রাইভেট গাড়ির পরিবর্তে গণপরিবহন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকে উৎসাহ জোগাবে৷ যতদূর জানি, এরপর আমাদের দেশের অত্যাধুনিক মেট্রোরেলেও মহিলাদের জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷''
প্রশংসা যেমন আছে, একই সারিতে নিন্দাও তেমন আছে৷ আর মাত্র মাস চারেক পর দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন৷ অনেকেই বলছেন, কেজরিওয়ালের এ হেন সিদ্ধান্তের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে নির্বাচনে জেতার কৌশল৷ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা দিল্লি বিজেপির সাবেক সভাপতি বিজয় গোয়েলের অভিযোগ, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ভোট টানতে জনতার মন জয় করার চেষ্টা চালাচ্ছেন কেজরিওয়াল৷ তা না হলে ভাইফোঁটা তো প্রতিবছরই হয়ে এসেছে৷ নির্বাচনের মুখে হঠাৎ নারীদের কথা মনে পড়ল কেন?
দিল্লির বাঙালি হিন্দু মহাসভার প্রেসিডেন্ট অনিরুদ্ধ দে ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘মহিলাদের আর ভাড়া দিতে হবে না, এটা অদ্ভুত নির্বাচনী চমক৷ ভর্তুকি দিয়ে দিয়ে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করা হচ্ছে৷ দেশের মানুষ কর দেবেন, আর বাসযাত্রীরা সেটা ভোগ করবেন, এটা ভুল নীতি৷ একজন মহিলা সারাজীবন বিনামূল্যে বাসে চড়বেন, এই নিয়ম নামা যায় না৷'' নারী সুরক্ষায় বাসে মার্শাল নিয়োগের সিদ্ধান্তকেও ভালো ভাবে দেখছেন না তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘বাসে মার্শাল নিয়োগ করার খরচ কে দেবে? স্থানীয় থানা ও পুলিশ কি করছে? সরকারের এগুলো ভেবে দেখা উচিত৷''
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে আপাতত দিল্লি সরকার ১৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে৷ বিরোধীরা যা-ই বলুক, সাধারণ মানুষ ও নারীরা বাহবা দিচ্ছে সরকারকে৷ যেমন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. কল্পনা গুপ্ত সাধুবাদ জানাচ্ছেন৷Audio- ড. কল্পনা গুপ্ত (প্রফেসর, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়)
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘‘কেজরিওয়ালের হাতে বেশি ক্ষমতা নেই৷ পুলিশ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে৷ তা সত্ত্বেও সীমিত ক্ষমতা নিয়ে নারী ক্ষমতায়ন, পরিবেশ দূষণ রোধ এবং নারী সুরক্ষার কথা ভেবে একগুচ্ছ উদ্যোগ নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ওঁর এই সদ্ভাবনা দিল্লিবাসীর স্বার্থে৷'' সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘‘গেল গেল রব উঠেছে রাজনৈতিক মহলে৷ বলা হচ্ছে, কেজরিওয়াল সবকিছু বিনামূল্যে দিচ্ছে৷ কিন্তু, বুঝতে হবে সাধারণ মানুষের দাবি কতটুকু৷ বিরোধী দলগুলির এমন সংকীর্ণ পক্ষপাত থেকে উঠে আসা উচিত৷''সরকারি তথ্য বলছে, পরিকাঠামোগত বৈষম্যের কারণে ভারতের রাজধানী শহরে মোট কর্মরত মানুষের মাত্র ১১ শতাংশ মহিলা৷ দিল্লি মেট্রো রেলে মোট যাত্রীর ৩০ শতাংশ যাত্রী নারী৷