নতুন পদ হিসেবে প্লেটে আসছে অক্টোপাস থেকে নিরামিষ স্টেক
১৭ মার্চ ২০২২হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এশিয়া মহাদেশে খানদানি খাদ্য হিসেবে জেলিফিশ খাওয়া হয়৷ এবার হয়তো ইউরোপেও এমন পদ পরিবেশন করা হবে৷ ইটালির রাঁধুনি জেনারো এস্পোসিতো ইউরোপের অন্যতম প্রথম তারকা শেফ হিসেবে জেলিফিশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন৷
যারা পরীক্ষামূলক এই পদ চেখে দেখছেন, তাঁদের পক্ষে থলথলে এই প্রাণী খাওয়া সহজ নন৷ জেনারো অবশ্য মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘প্রথমত টেনট্যাকেল বা কাঁটার মতো অংশ ফেলে দিতে হয়, কারণ সেগুলি বিপজ্জনক৷ ত্বকে বিদ্যুতের মতো শক দিতে পারে৷ জেলিফিশের কোনো তুলনা নেই৷ মিনারেল সমৃদ্ধ ও পুষ্টিতে ভরপুর৷''
জেলিফিশ সত্যি খাদ্য হিসেবে অভিনব৷ নানা রকম মিনারেল ছাড়াও এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর উপাদানও রয়েছে৷ কে জানে, হয়তো অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপে জেলিফিশের কদর বেড়ে যাবে৷
খাদ্যের ক্ষেত্রে নতুন প্রবণতার আরো উদাহরণ রয়েছে৷ যেমন সুইজারল্যান্ডে চিজের সম্পূর্ণ ভিগান বিকল্পের চল বাড়ছে৷ এমনকি গরম চিজের এই পদেও কোনো দুধ নেই৷ কাজুই এমন ভিগান খাদ্যপণ্যের ভিত্তি৷
‘নিউ রুটস' নামের কোম্পানি প্রতি মাসে প্রায় চিজের দেড় লাখ ভিগান বিকল্প উৎপাদন করে৷ ২০১৫ সালে ফ্রেডি হুনৎসিকার মাত্র ২১ বছর বয়সে নিজের এই কোম্পানি গড়ে তোলেন৷ তাঁর মতে, এটাই ভবিষ্যৎ৷ মানুষকে মনোভাব বদলাতে হবে৷ সেটাই মানুষের বিবর্তনের নিয়ম৷
ব্যায়ামের সময়ে সব পেশির প্রতিই মনোযোগ দেওয়া জরুরি
কোনো প্রাণীর দুধ না থাকায় ভিগান কামেমবেয়ারকে তিনি চিজ বলতে পারেন না৷ কিন্তু আসল চিজের তুলনায় সেই পণ্য উৎপাদনে কার্বন নির্গমনের মাত্রা অনেক কম৷ হুনৎসিকার বলেন, ‘‘কার্বন নির্গমনের মাপকাঠিতে কোনো কাঁচামালের উৎপাদন প্রক্রিয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ অত্যন্ত উর্বর জমিতে আমাদের কাজুর ফলন হয়, বেশি পানি দিতে হয় না৷ একমাত্র পরিবহণই নেতিবাচক বিষয়, যদিও সেটি মোট কার্বন ফুটপ্রিন্টের মাত্র পাঁচ শতাংশের জন্য দায়ী৷ অর্থাৎ মোটেই খুব বেশি নয়৷''
সুপার রেকগনাইজারদের ক্ষমতার সীমা এখনো স্পষ্ট নয়
দেশের অন্যান্য প্রান্তেও ঐতিহ্যগত চিজ উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রশ্নের মুখে পড়ছে৷ জেনিভা শহরে ২০১৭ সালে ‘ক্রেমারি ভেগান' নামের ভিগান চিজের অন্যতম প্রথম রেস্তোরাঁ খুলেছিল৷ সেখানে দুধের বিকল্প দিয়ে তৈরি খাদ্য পরিবেশন করা হয়৷ ছোট পারিবারিক এই কোম্পানিও কাজুর ভিত্তিতেই খাদ্যপণ্য তৈরি করে৷ রেস্তোরাঁর প্রতিষ্ঠাতা মালেনা আসাম বলেন, ‘‘আজকাল আরো বেশি মানুষের দুগ্ধজাত পণ্য সহ্য হচ্ছে না৷ বিশেষ করে ‘ফ্লেক্সিটেরিয়েন' ও সর্বভূকরা কিছু পরিবর্তন করতে ও উন্নতি করতে চান বটে, কিন্তু নিজেরা বড় পদক্ষেপ নিতে এখনো প্রস্তুত নন৷''
খাদ্যের নতুন প্রবণতার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগও কম নয়৷ যেমন ভবিষ্যতে থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি তাজা স্টেকও দেখা যাবে৷ বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার জুসেপে শনটি সেটি আবিষ্কার করেছেন৷ তিনি স্পেনে ভেষজ প্রোটিন দিয়ে প্রথম প্রিন্টেড স্টেক সৃষ্টি করেছেন৷ সেই নিরামিষ মাংসে কামড় দিলে আসল স্টেক বলে মনে হবে৷ জুসেপে মনে করেন, ‘‘বাজারে অনেক বিকল্প রয়েছে৷ তবে অনেক নকল রয়েছে, যেগুলি প্রসেসড মাংসের আদলে তৈরি৷ হ্যামবার্গার, মিট বল বা সসেজ হিসেবে সেগুলি পাওয়া যায়৷ যেটা এখনো পাওয়া যায় না, সেটা হলো গরু বা শুকরের মাংসের স্টেকের হুবহু বিকল্প৷ সেই স্বাদ একেবারেই অনবদ্য৷''
নামিবিয়ায় প্রাণিজগতের সঙ্গে সংঘাত এড়ানোর উদ্যোগ
এই ‘স্টেক' আসলে কড়াইশুটি, সামুদ্রিক শৈবাল, চালের পাউডার দিয়ে তৈরি৷ বিটের রস সেটিতে লাল রং যোগ করে৷ থ্রিডি প্রিন্টার সেই মণ্ডকে সুক্ষ্ম তন্তুর রূপ দেয়৷ স্টেক প্রিন্ট করতে ২০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগে৷
স্পেনের উত্তরে বিখ্যাত ‘এল সান্তুয়ারি' রেস্তোরাঁয় প্রধান রাঁধুনী জুসেপ সানিটখাস থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি স্টেকের সঙ্গে খাঁটি মাংসের তুলনা করেন৷ জুসেপ দুটি খাদ্য তুলে ধরে বলেন, ‘‘একটি মাংসের সাধারণ টুকরো৷ অন্যটি থ্রিডি প্রিন্টারে সৃষ্টি করা হয়েছে৷ ভাবাই যায় না যে এটা নিরামিষ পদ৷ একেবারে মাংসের মতো গঠন৷''
বার্সেলোনায় শিশুদের নিরাপদে স্কুলে পাঠাতে অভিনব ব্যবস্থা
প্রিন্টারে তৈরি নিরামিষ স্টেক এখনো প্রোটোটাইপ পর্যায়ে রয়েছে৷ তবে অদূর ভবিষ্যতে বড়ো আকারে এমন পদ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে৷ বায়ো ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জুসেপে স্কন্টি বলেন, ‘‘রেস্তোরাঁয় মাংসের যে সব বিকল্প পণ্য পাওয়া যায়, তার তুলনায় অনেক ভালো খাবার আমরা শীঘ্রই পরিবেশন করব৷''
নতুন বছরেই ‘ভিগান স্টেক' বাস্তব হয়ে উঠতে পারে৷
মেগিন লেই/এসবি