1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেহব্যবসায় জড়াচ্ছে রোহিঙ্গা নারীরা

আরাফাতুল ইসলাম কক্সবাজার থেকে ফিরে
১২ ডিসেম্বর ২০১৭

কেউ ইচ্ছায়, কেউ অনিচ্ছায় জড়াচ্ছেন এই পেশায়৷ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেহব্যবসায় রোহিঙ্গা মেয়ে এবং নারীদের যোগ দেয়ায়ও বাড়ছে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী৷ 

https://p.dw.com/p/2pEAN
Rohingya-Frauen werden als Sexsklaven in Bangladesch verkauft
ছবি: DW/Arafatul Islam

কক্সবাজারের কিছু সস্তা হোটেলে রোহিঙ্গা মেয়েরা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছেন৷ খদ্দেরপ্রতি রেট পাঁচশ' টাকা৷ তবে এই টাকার মধ্যে সত্তর টাকার মতো যৌনকর্মী পান৷ সেই টাকা আবার অনেক সময় সরাসরি তাঁর কাছে পৌঁছায় না৷ বরং তাঁর আত্মীয়স্বজন কেউ সেটা নিয়ে যান৷

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পতিতাবৃত্তিতে জড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে কথাগুলো বলেন নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তি তাঁর মুঠোফোনে কয়েকজন নারীর ছবিও দেখান, যাঁরা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আটক হয়েছেন৷ ধারণা করা হয়, যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন তাঁরা৷

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলায় এখন প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছেন৷ এত বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী যেখানে, সেখানে নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটার শঙ্কা থেকেই যায়৷ নিরাপত্তা বাহিনী চেষ্টা করছে, শরণার্থীরা যাতে শিবির ছেড়ে অন্যত্র যেতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে৷ এজন্য শরণার্থী শিবিরগুলোর চারপাশে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করা হয়েছে৷ মানবপাচার রোধ এ সব চৌকির অন্যতম দায়িত্ব৷

‘আমাকে ট্যাবলেট খেয়ে ধর্ষণ করেছে’

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, স্থানীয় বাঙালি আর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে পার্থক্য কীভাবে করা হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে সেই নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে তারা শুদ্ধ বাংলা বলতে পারে কিনা৷ যদি না পারে, তাহলে তারা রোহিঙ্গা৷ এছাড়া, সন্দেহজনক কিছু মনে হলে আরো যাচাই-বাছাই করা হয়, বলে জানান তিনি৷

ভাষা পরীক্ষার এই প্রক্রিয়াটি ভালো৷ কিন্তু যেসব শরণার্থী কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন কিংবা বাংলাদেশের সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি মিয়ানমারে যাঁদের বাস, তাঁদের অনেকে শুদ্ধ বাংলা বলতে পারে৷ ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ এড়ানোর মতো ভাষা অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীর পক্ষে বলা সম্ভব৷

আর শুধু কক্সবাজারই নয়, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের আশেপাশের জঙ্গলে, পাহাড়েও দেহব্যবসা চলে বলে জানিয়েছেন একাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ অনেকে সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করেন৷ কেননা, কারো কারো কাছে নগদ টাকা আয়ের অন্যতম উৎস এটি৷

ঠিক কতজন রোহিঙ্গা নারী যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছে, এমন পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই৷ সংখ্যাটা যে বাড়তির দিকে সেকথা নিশ্চিত করেছে একাধিক সংগঠন৷ আর মাঝেমাঝেই জানা যায় যে, অনেক নারীকে জোরপূর্বক এই ব্যবসায় নামানো হচ্ছে৷ কেউ কেউ বিক্রি হচ্ছেন যৌনদাসী হিসেবে৷ কিছুদিন আগে আল-জাজিরায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদন থেকে খাতুন* নামের এক পনের বছর বয়সি কিশোরীর কথা জানা যায়, যে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে প্রবেশের পরপরই যৌন দাসী হিসেবে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল৷ এরপর কয়েকদিন যৌন নির্যাতন করার পর তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল ধর্ষক৷

Bangladesch - Rohingya Flüchtlinge bei Cox's Bazar
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলেছবি: DW/A. Islam

মর্জিনা* নামের আরেক তরুণী এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তাঁর উপর ঘটে যাওয়া নির্মম নির্যাতনের কথা৷ কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের কাছ থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এরপর তাঁকে ধর্ষণ করা হয় এবং একপর্যায়ে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়৷ পুলিশের সহায়তায় মর্জিনা ফিরে এসেছেন বটে, কিন্তু এখন গর্ভে থাকা জমজ সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত তিনি৷ ইতোমধ্যে একাধিকবার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছেন তিনি৷

মর্জিনাদের মতো নির্যাতনের শিকার মেয়েদের সহায়তা করার জন্য গোপনে গর্ভপাতের ব্যবস্থা করে একটি সংস্থা৷ কোনো কোনো নারী সেই সুবিধা গ্রহণও করেছেন৷ কিন্তু মর্জিনা গর্ভপাতে রাজি নন৷ কেননা, গর্ভের সন্তানদের কোনো অপরাধ নেই বলে মনে করেন তিনি৷ মর্জিনা চান, গোপনে সন্তান জন্ম দিতে৷ এরপর সেই সন্তান কাউকে দত্তক দিয়ে দিতে চান তিনি৷ তবে সেটা কতটা সম্ভব তা তিনি নিজেও নিশ্চিত নন৷ এ রকম কোনো ব্যবস্থা কোনো সংগঠন করছে বলেও জানা যায়নি৷  

মিয়ানমারে কিংবা বাংলাদেশে ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের সুরক্ষায় কাজ করছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা৷ এসব সংগঠনের মধ্যে অন্যতম আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম৷ সংগঠনটির কক্সবাজার এলাকার মুখপাত্র ফিয়োনা ম্যাকগ্রেগর স্বীকার করেছেন, রোহিঙ্গা সংকট এতটাই বিস্মৃত এক বিষয় যে, সবকিছু সামাল দিতে তাদের আরো অনেক সহায়তা এবং সময় প্রয়োজন৷ সংগঠনগুলো কাজের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছে বটে, তবে এজন্য প্রচুর সময়ের প্রয়োজন৷

উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে কারো কারো এইচআইভি সংক্রমণ রয়েছে৷ গত কয়েকদিন আগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, অন্তত পাঁচ হাজার এইচআইভি পজেটিভ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারে রয়েছে৷ দেহব্যবসার মাধ্যমে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস যদি বাংলাদেশিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা হবে ভয়ানক এক ব্যাপার৷ তাই এই বিষয়ে আরো সতর্কতা জরুরি৷

* যৌন নির্যাতনের শিকারদের প্রকৃত নাম ব্যবহার করা হয়নি

আরাফাতুল ইসলামের লেখাটি আপনাদের কেমন লাগলো? জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান