রোহিঙ্গাদের নিঃস্ব করছে তারা
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭কক্সবাজারের টেকনাফের হোছনিপাড়া, নয়াবাড়ি, পাহাড়ার কাটা,উছনি প্রাং ও হ্নীলা এলাকায় এখন রোহিঙ্গাদের ঘর ভাড়া দেয়ার ব্যবসা জমজমাট৷ সেখানকারই নয়াবাড়ি পুলিশ গেটের আলিশা মার্কেটের নিচে ছয়টি খালি দোকান ভাড়া নিয়েছেন রোহিঙ্গারা৷ মিয়নমারের রাখাইন রাজ্যের ম্যারুল্লা শিকদারপাড়া থেকে পালিয়ে আসা হাজেরা খাতুন জানান,তিন ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে তিনি এক সপ্তাহ ধরে একটি দোকানে ভাড়ায় থাকছেন৷ মাসে দুই হাজার টাকা ভাড়া দেবেন এই চুক্তিতে তাঁরা সেখানে উঠেছেন৷
আজিদা নামে এক নারী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমি আড়াই হাজার টাকায় ভাড়া থাকি৷ এক রুমে চার জন থাকি৷ স্বামী ও দুই বাচ্চা নিয়ে এই রুমেই থাকি৷ বাবা-মাকে এখনও খুঁজে পাইনি৷ আমরা কয়েকদিন পরে ক্যাম্পে যাবো৷''
হাবিবুর রহমান নামের একজন বলেন,‘‘ঘর তৈরি করে দিলে দুই হাজার টাকা, আর যদি ঘর আমরা তৈরি করি, তাহলে মাটি ভাড়া একহাজার টাকা দিতে হবে৷''
সেখানে অবস্থানরত সাংবাদিক আমানুর রহমান রনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনেক রোহিঙ্গাকে ভুল তথ্য দিয়ে ক্যাম্পে যেতে দিচ্ছে না স্থানীয় একটি চক্র৷ তারা তাদের ব্যবসার জন্য এ কাজ করছেন৷ তারাই এখন ঘর তুলে রোহিঙ্গাদের কাছে ভাড়া দিচ্ছে সাপ্তাহিক এবং মাসিক ভিত্তিতে৷''
আমানুর জানান, ‘‘এই চক্রটিই আবার কম দামে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তাদের স্বর্নালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র কিনে নিচ্ছে৷ কেউ কেউ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা পারাপারের বিনিময়ে জেলেরা গরু অথবা নগদ টাকা নেয়৷ কখনো গরু বা নগদ টাকা দিতে না পারলে নারীদের স্বর্ণালংকারও রেখে দেয় জেলে ও নৌকার মাঝিরা৷''
‘গুপ্তচর' আটক
মঙ্গলবার রাতে ঘুমধুম এলাকা থেকে তিন জন ও বুধবার নাইক্ষ্যংছড়ি সদর থেকে মিয়ানমারের চার নাগরিককে গুপ্তচর সন্দেহে আটক করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)৷ তারা সবাই মিয়ানমারের মংডু শহরের ফকিরাবাজারস্থ আমতলির বাসিন্দা৷ ঘুমধুম এবং নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ফুলতলি ঢেকুবুনিয়া সীমান্তের ৪৮ নম্বর পিলারের কাছে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করার সময় তাদের আটক করা হয়৷
বিজিবি ৩১ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ারুল আজিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই চার রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পক্ষে গুপ্তচরের কাজ করতো বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ তারা নিয়মিত সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে যেতো৷ তাদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷''
তারা বাংলাদেশে কিভাবে এলো– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তারাও বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে এবং এখানে তারা তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিল বলে ধারণা করছি৷''
ঢাকার কাছ থেকে ২০ রোহিঙ্গা উদ্ধার
ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর এলাকা থেকে ১১ শিশুসহ ২০ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছেন স্থানীয় পুলিশ৷ ওই উপজেলার ধল্লা ইউনিয়ন থেকে বুধবার রাতে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে৷ তারা তিনটি পরিবারের সদস্য এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার মন্ডুকাদের বিল গ্রামের বাসিন্দা৷ মাওলানা মো. তাজুল ইসলাম নামে একজনের হেফাজতে ছিলেন তারা৷ তাজুল ইসলামের দাবি, তিনি তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন৷
মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা তাদের আটক করিনি, উদ্ধার করেছি৷ তাদের এখন কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এবারই বাংলাদেশে এসেছেন৷ তারা কিভাবে, কার সহায়তায় এবং কেন মানিকগঞ্জে এসেছেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷''
তবে কক্সবাজারের একাধিক লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি স্থানীয় চক্র রোহিঙ্গাদের থাকার ভালো জায়গার কথা বলে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্যাম্পের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে৷
প্রতিবেদনটি নিয়ে আপনার মতামত জানান, নীচের ঘরে৷