কয়লাখনি বণ্টনে দুর্নীতি
১৮ অক্টোবর ২০১৩ওড়িষায় দুটি কয়লাখনি বণ্টনে পক্ষপাতিত্ব করেছিলেন তৎকালীন কয়লা দপ্তরের সচিব বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত পি সি পারেখ৷ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নেভিলি লিগনাইট নিগমকে না দিয়ে শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি কুমারমঙ্গলম বিড়লার হিন্ডালকো অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানিকে বণ্টন করার অভিযোগে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো পারেখ এবং বিড়লার বিরুদ্ধে এফআইআর করা নিয়ে রাজনৈতিক ও শিল্পমহলে বিতর্কের ঝড় উঠেছে৷
এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন কয়লা সচিব পারেখ তোপ দেগেছেন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দিকে৷ বলেছেন, ‘‘আমি যদি অনিয়ম করে থাকি, তৎকালীন কয়লামন্ত্রী হিসেবে সেই সিদ্ধান্ত সঠিক বলে তাতে সই করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং স্বয়ং৷ অনিয়ম করা হয়েছে মনে করলে তিনি অনায়াসেই তা খারিজ করে দিতে পারতেন৷ আমার বিরুদ্ধে যদি ষড়যন্ত্র ও অনিয়মের অভিযোগ করা হয়, তাহলে তার দায় তো প্রধানমন্ত্রীর ওপর বর্তায়, তাই না? আমার বিরুদ্ধে যদি ফৌজদারি ষড়যন্ত্র অভিযোগ তোলা হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীও ষড়যন্ত্রের এক অংশীদার৷ কাজেই পুরো অভিযোগ ভিত্তিহীন৷''
তবে এ কথাও তিনি স্বীকার করেছেন যে, নেভিলি লিগনাইট নিগম এবং হিন্ডালকো – দুটি সংস্থাই যোগ্যতার নিরিখে সমান সমান৷ প্রথমে রাষ্ট্রায়ত্ত নেভিলি লিগনাইটকেই কয়লা ব্লক বণ্টন করা হয়েছিল, পরে বিড়লা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নতুন আবেদনপত্র দিলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সেই আবেদনপত্র আবার বিবেচনা করে দেখার কথা বলা হয়৷ ‘‘পরে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশে বিড়লা আমার সঙ্গে দেখা করেন এবং স্ক্রিনিং কমিটির প্রধান হিসেবে আমি আগেকার সিদ্ধান্ত বদল করে বিড়লার হিন্ডালকো কোম্পানিকে কয়লা ব্লক মঞ্জুর করি,'' বলেন প্রাক্তন কয়লা সচিব পারেখ৷ সরকারের আগেকার নীতি ছিল বিনা নীলামে স্রেফ সুপারিশের ভিত্তিতে কয়লাখনি বণ্টন করা হতো৷
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একজন প্রাক্তন আমলা যেভাবে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন, সেটা হাতিয়ার করে নির্বাচনের মুখে আসরে নেমে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলি৷ বিজেপির মতে, প্রধানমন্ত্রী যখন কয়লামন্ত্রী হিসেবে সিদ্ধান্তে সই দিয়েছেন, তখন আসল দায়িত্ব তাঁরই৷ বাম দলের মতে, আরো বিস্তারিত তথ্য জানা দরকার কে কতটা দায়ী৷
পাশাপাশি বিড়লার বিরুদ্ধে এফআইআর-জনিত পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন শিল্পমহল৷ শিল্পপতিরা মনে করেন, সিবিআই এভাবে যখন-তখন যাঁর বিরুদ্ধে ইচ্ছা এফআইআর করলে সেই রকম পরিবেশে বিনিয়োগ করতে শিল্পপতিরা ভয় পাবে৷ বিনিয়োগের ওপর পড়বে নেতিবাচক প্রভাব৷ শুধু শিল্পমহল নয়, সরকারের শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী, কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রীও এদের সঙ্গে একমত৷ হিন্ডালকোর তরফে বলা হয়েছে, সরকারের স্ক্রিনিং কমিটির সিদ্ধান্ত বিড়লা পালটে দিয়েছেন, এটা বলা অযৌক্তিক৷
উল্লেখ্য, সরকারের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটার জেনারেলের গত বছরের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকারের খুশিমত কয়লাখনি বণ্টনের ফলে সরকারের লোকসান হয়েছে প্রায় এক লাখ ৮৬ লাখ হাজার কোটি টাকা৷ বণ্টন করা হয়েছিল বিনা নিলামে ২০০৪ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে৷ কংগ্রেস জোট সরকারের আমলে৷