দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকারের হিড়িক
৫ এপ্রিল ২০১৬‘পানামা পেপার্স'-এর অনুলিপি চেয়েছে ক্যানাডা৷ অনুলিপি পেলে তদন্ত করে অভিযোগ যাচাই করবে বলেও জানিয়েছে দেশটি৷ ক্যানাডার সবচেয়ে বড় ব্যাংক আরবিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ধণাঢ্য ব্যক্তিদের অর্থ পাচারে সহায়তা করেছে৷ ব্যাংকটি অবশ্য সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
মূলত অভিযোগ অস্বীকারের হিড়িকই চলছে এখন৷ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পানামা পেপর্সে সে দেশের বড় বড় নেতার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সর্বৈব মিথ্যা৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হং লেই বলেন, ‘‘এমন ভিত্তিহীন অভিযোগের জবাবে আমার কিছু বলার নেই৷''
পানামার আইনি প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকা-র প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ দলিল-দস্তাবেজ এক বছর ধরে খুঁটিয়ে দেখার পর রবিবার বিশ্বখ্যাতদের অর্থ কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করে যুক্তরাষ্ট্রের কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (আইসিআইজে)৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, অভিনেতা, খেলোয়াড় ও ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার বিশিষ্ট জনদের কর ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ সংক্রান্ত বিপুল তথ্য প্রকাশ করে তারা৷
গত ৪০ বছরের কাগজপত্র ঘেঁটে অর্থ কেলেঙ্কারির এই তথ্য উদ্ধারে বিশ্বের ৭৬টি দেশের একশ'রও বেশি মিডিয়া গ্রুপের সাড়ে তিনশ'রও বেশি সাংবাদিক আইসিআইজে-র সঙ্গে কাজ করে৷
আইসিআইজে-র দাবি, তাদের অনুসন্ধান থেকে অন্তত ১২ জন রাষ্ট্রনায়কের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দিতে বিদেশের বিভিন্ন ‘শেল কম্পানি'-তে টাকা রাখার তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷ রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, আর্জেন্টিনা, জর্জিয়া, আইসল্যান্ড, ইরাক, জর্ডান, কাতার, সৌদি আরব, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইউক্রেনসহ বেশ কিছু দেশের ১৪৩ জন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও তাঁদের আত্মীয়দের নাম এসেছে ঐ তালিকায়৷
‘শেল কম্পানি' আইনগতভাবে বৈধ এমন এক ধরণের প্রতিষ্ঠান যাদের নিজস্ব কোনো ব্যবসা নেই৷ তারা শুধু অন্যকে নানান নামে অর্থ খাটানোর খাটানোর সুযোগ করে দেয়৷
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ চীনের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধেও এমন কিছু কম্পানির সহায়তায় অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে৷ অভিযোগটিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে উড়িয়ে দিয়েছে চীন৷
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের দিকে সন্দেহের আঙুল তুলেছে তাঁর এক বাল্যবন্ধু এবং কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের শেল কম্পানিতে অর্থ বিনিয়োগের অভিযোগ৷ ক্রেমলিন যথারীতি দাবি করেছে, পুরো বিষয়টি নিছক ওয়াশিংটনের হয়ে আইসিআইজে-র পুটিনবিরোধী অপপ্রচার৷
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পক্ষ থেকে তাঁর সরকারের মুখপাত্রও বলেছেন, অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন৷
আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড গানলগসনেরও দাবি যে, তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দিতে বিদেশে টাকা রাখার অভিযোগে এক বিন্দুও সত্যি নেই৷
এদিকে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে রেকইয়াভিকে শুরু হয়েছে আন্দোলন৷ ডেভিড গানলগসন জানিয়েছেন, ভিত্তিহীন অভিযোগ মেনে নিয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন না৷
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পোরোশেঙ্কোও বলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগটি একেবারেই ভিত্তিহীন৷
সব দেশের সরকার অবশ্য ‘ভিত্তিহীন' বলেই অভিযোগের পাহাড়কে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে না৷
ক্যানাডার মতো অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, সুইডেন এবং নেদারল্যান্ডসও জানিয়েছে, অভিযোগ সংক্রান্ত কাগজপত্রের অনুলিপি পেলে তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে৷
এসিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)