আসামিদের ফাঁসি বহাল
১৪ মার্চ ২০১৪অভিশপ্ত ২০১২ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের সেই রাত৷ দিল্লির চলন্ত বাসে ২৩ বছরের তরুণী ‘নির্ভয়া'-কে বিভৎসভাবে গণধর্ষণ করার অপরাধে ট্রায়েল কোর্টে চারজনের ফাঁসির সাজা হয়৷ সেই রায় বহাল রাখতে সরকারপক্ষ দিল্লি হাইকোর্টে আর্জি জানায় আইন অনুসারে৷ আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সাজা মকুব করার আবেদন রাখে৷ দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি রেভা ক্ষেত্রপাল এবং বিচারপতি প্রতিভা রাণীর এক ডিভিশন বেঞ্চ তাদের আবেদন খারিজ করে ফাঁসির সাজা বহাল রাখে৷ রায়দানকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন নির্ভয়ার মা-বাবা৷ রায় ঘোষণার পর নির্ভয়ার মা বিচার বিভাগের ওপর পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করে বলেন, ‘‘এই রায়ই চেয়েছিলাম আমরা৷'' স্বাভাবিকভাবেই, শাস্তি কার্যকর হলেই সন্তুষ্ট হবেন তাঁরা৷
ঐ বাসের চালকসহ ছয়জন কর্মী নির্ভয়াকে ধর্ষণ করার পর মারধর করে তাঁর সঙ্গের পুরুষবন্ধুকে৷ তারপর চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তাঁদের৷ গুরুতর আহত ও বিধ্বস্ত নির্ভয়াকে উপযুক্ত চিকিৎসা সত্ত্বেও বাঁচানো যায়নি৷ সিঙ্গাপুর হাসপাতালে নির্ভয়া মারা যান ২০১২ সালের ২৯শে ডিসেম্বর৷ ঐ পাশবিক ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায় গোটা দেশে৷ ঝাঁকুনি দিয়ে যায় সুস্থ নাগরিক সমাজের বিবেককে৷ নাগরিক সমাজের দাবিতে সরকার ধর্ষণ ও নারী নিগ্রহ বিরোধী আইন আরো কঠোর করে বিচার বিভাগীয় কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী৷
অপরাধীদের গ্রেপ্তারের পর দিল্লির ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে শুরু হয় তাঁদের বিচার৷ সাক্ষ্য প্রমাণ হিসেবে পুলিশ পেশ করে নির্ভয়ার শেষ জবানবন্দি, তাঁর পুরুষবন্ধুর প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ, আসামিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা রক্তমাখা জামা-কাপড়, ডিএনএ রিপোর্ট যা নির্ভয়ার ডিএনএ-র সঙ্গে মিলে যায়৷ এছাড়াও মেডিকেল ও ফরেনসিক রিপোর্ট৷ সাক্ষ্য নেয়া হয় মোট ৮০ জনের৷ সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ১৩০ দিন শুনানি হবার পর, ট্রায়াল কোর্ট ছয়জন আসামির মধ্যে চারজনকে ফাঁসির সাজা দেন বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধের শাস্তি হিসেবে৷ ছয়জনের মধ্যে বয়সের দিক থেকে একজন নাবালক থাকায়, জুভেনাইল জাস্টিক বোর্ডের বিচারে তাকে সর্বোচ্চ তিন বছরের সংশোধনাগার জেলে আটক রাখা হয়৷ মূল অপরাধি রাম সিং জেলবন্দি থাকাকালীন জেলের ভেতরেই আত্মহত্যা করায় পার পেয়ে যায়৷ ভারতে সাধারণত ধর্ষণের মামলার ফয়সালা হতে বহু সময় কেটে যায়, কিন্তু এক্ষেত্রে মাত্র মাত্র আট মাসেই রায় দেয়া হয়৷
তবে মৃত্যুদণ্ডের যৌক্তিকতা নিয়ে ভারতে এখনো চলেছে বিতর্ক৷ বলা হচ্ছে, ধর্ষণের অপরাধে ফাঁসির সাজা দেওয়া সত্ত্বেও দেশে ধর্ষণ বা নারী নিগ্রহ কমেনি বরং বেড়েছে৷ তাহলে ফাঁসির সাজার সার্থকতা কতটা? আসল উদ্দেশ্য, সমাজের সুস্থ মানসিকতা সবার আগে গড়ে তোলা জরুরি৷ তবে সেটা করার দায়িত্ব কার? পরিবারের, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের, সমাজসেবীদের না সংশোধনাগারের? প্রশ্নটা এখানেই৷