থানায় নির্যাতনের শিকার যুবকটি কে?
৯ জানুয়ারি ২০১৭গত শুক্রবার বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক ‘প্রথম আলো' তাদের অনলাইন সংস্করণে একটি ছবিসহই পুলিশি নির্যাতনের খবরটি প্রকাশ করে৷ খবরে বলা হয়,‘যশোরে পুলিশ এক যুবককে ধরে নিয়ে থানার মধ্যে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ নির্যাতিত যুবকের স্বজনের অভিযোগ, চাহিদামতো দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে টাকা না দেওয়াতেই এভাবে পিটিয়েছে পুলিশ৷
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘‘নির্যাতনের শিকার যুবক হলেন আবু সাঈদ (৩০)। তিনি যশোর সদর উপজেলার তালবাড়িয়া গ্রামের নুরুল হকের ছেলে৷ তাঁর স্বজন জানান, সাঈদকে ছাড়াতে দুই লাখ টাকা ঘুস দাবি করেছিল পুলিশ৷ শেষমেশ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে৷'' খবরে ঘটনাটি যশোরের কোতোয়ালি মডেল থানায় বলে উল্লেখ করা হয়৷
খবরে আরো বলা হয়, ‘‘সাঈদকে বুধবার রাতে আটক করেন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল৷ পরে তাঁর কাছে তিনি ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) হাদিবুর রহমান দুই লাখ টাকা দাবি করেন৷''
কিন্তু পরদিনই আবু সাঈদ নামের ওই যুবক যশোর প্রেসক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তাঁকে নির্যাতনের ঘটনা অস্বীকার করেন৷ তিনি জানান, ‘‘বুধবার রাতে এলাকার একটি চায়ের দোকান থেকে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়৷ পরে থানায় নিয়ে আমি দুই নম্বরি ব্যবসা করি কিনা জানতে চায়৷ আমি ওইসব দুই নম্বরি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই৷ সে কারণে পরদিন রাত ৮টার দিকে পুলিশ আমাকে ছেড়ে দেয়৷ আমাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি৷'' তিনি আরো জানান, ‘‘প্রকাশিত ছবির যুবক আমি নই৷''
এরপর ওই দিন বেলা দেড়টার দিকে যশোর প্রেসক্লাবে গিয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন দাবি করেন, ‘‘ওই নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি৷ যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে তা যাশোর কোতয়ালি থানার নয়৷'' তিনি আরো জানান, ‘‘তারপরও ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ তদন্তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷'' এ সময় তিনি যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদককে অনুরোধ করেন, যে বা যারা এই ছবি দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছেন – তাদের বিরুদ্ধেও যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়৷
এদিকে রবিবার হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে এই ঘটনায় রুল জারি করে৷ রুলে যশোরের কোতোয়ালি থানায় এক যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় কেন জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়৷ বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করে৷
একইসঙ্গে নির্যাতনের অভিযোগে এসআই নাজমুল ও এসআই হাদিবুরকে আগামী ২৫ জানুয়ারি আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ এছাড়া আগামী ৩০ দিনের মধ্যে যশোরের এসপিকে এ বিষয়ে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই যুবক পুলিশের চাপের মুখে এখন তাকে নির্যাতনের ঘটনা অস্বীকার করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন৷ আর ছবিটা তো সত্য৷ কাউকে না কাউকে তো থানায় বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে৷ তাহলে পুলিশই বলুক কাকে নির্যাতন করা হয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে এরকম নির্যাতনের অভিযোগ আগেও আমরা পেয়েছি৷ এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ আর পুলিশ সুযোগ পেলেই এ সব ঘটনা ধামাচাপ দেয়ার চেষ্টা করে৷ তাই এই ঘটনার তদন্ত পুলিশকে দিয়ে নয়, অন্যকোনো কর্তৃপক্ষকে দিয়ে কারানো উচিত৷''
সুলতানা কামাল আরো বলেন, ‘‘আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি, পুলিশের অপরাধ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থা গঠন করা প্রয়োজন৷''
এদিকে ওই ছবি প্রকাশ হওয়ার পর যশোরের কোতোয়ালি থানায় সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷
বন্ধু, এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার আছে? জানান নীচের ঘরে৷