ঢাকায় ফিরে ক্ষমা চাইলেন ফেরদৌস
১৭ এপ্রিল ২০১৯জানা গেছে, ফেরদৌস বিজনেস ভিসায় কলকাতা যান সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নিতে৷ কিন্তু তিনি রবিবার ও সোমবার (১৪ ও ১৫ এপ্রিল) পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জ লোকসভা আসনের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেন৷ প্রচারে টালিগঞ্জের দুই তারকা অঙ্কুশ ও পায়েল সরকারের সঙ্গে হুডখোলা গাড়িতে চেপে ওই নেতার পক্ষে রোড শো-তে অংশ নেন তিনি৷ করণদীঘি, হেমতাবাদ, ইসলামপুরসহ কয়েকটি জায়গায় তিনি প্রচার ও পথসভায় অংশ নেন৷ তিনি বিভিন্ন পথসভায় তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের হয়ে ভোট চান৷ তাঁর সেই প্রচার ও রোডশো'র ছবি, ভিডিও সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশেই ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়৷
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি'র সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ ব্যানার্জি এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রায়গঞ্জে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন৷ তারা অভিযোগ করেন, বিদেশি নাগরিককে দিয়ে ভোটের প্রচার করানো ভারতে নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন৷ এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়৷ এবং মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাতেই তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন৷
বাংলাদেশে ফিরে আসার পর ফেরদৌস চুপচাপ রয়েছেন৷ তাকে টেলিফোনে পাওয়া যাচ্ছে না৷ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্র নায়ক জায়েদ খান এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গতরাতে ঢাকায় ফেরার পর আমরাও তাঁর সঙ্গে নানা মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি৷ এখন তাঁর বাসায় লোক পাঠাবো বলে ভাবছি৷ তিনি আমাদের সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্য৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘এক দেশের নাগরিক হয়ে আরেক দেশের নির্বাচনি প্রচারে তিনি অংশ নিয়েছেন, এতে সরকার যেমন বিব্রত, আমরাও বিব্রত৷ এখন আমরা তাঁর কাছ থেকে বিষয়টি জানতে চাই৷ আমাদের সংগঠনের সভাপতি দেশের বাইরে আছেন৷ তিনি আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) দেশে ফিরবেন৷ তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে৷ আমরা জরুরি বৈঠক করে ফেরদৌসের কাছে ব্যাখ্যা চাইবো৷ তিনি কী ব্যাখ্যা দেন সেটা দেখে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো৷''
জায়েদ খান বলেন, ‘‘কলকাতার সাথে তাঁর দীর্ঘদিনের যোগাযোগ৷ সেখানেও তিনি কাজ করেন৷ এটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়৷ কিন্তু সবার জন্য বিব্রতকর কিছু করা অনাকাঙ্খিত৷''
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবিরও মনে করেন, ভারতে গিয়ে ফেরদৌস যা করেছেন, তা কোনোভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়৷ এটা বিব্রতকর৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনো বিদেশি নাগরিকই কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা নির্বাচনি প্রচারকাজে অংশ নিতে পারেন না৷ পারার কথা নয়৷ কিন্তু আমি মনে করি তাঁর এটা ব্যক্তিগত পর্যায়ের ভুল৷ এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না৷ তিনি অহেতুক একটা ঝামেলা সৃষ্টি করলেন৷ আর কেউ কেউ হয়তো এই ইস্যুটা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ভারতে যাঁরা তাঁকে ব্যবহার করেছেন, তাঁরাও ঠিক করেননি৷ এটা উভয় পক্ষের জন্যই বিব্রতকর৷ আমার মনে হয়, সবারই ভবিষ্যতে এজন্য সতর্ক থাকা উচিত হবে৷ এই ঘটনাটি সবার জন্য শিক্ষনীয় হয়ে থাকলো৷''
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে খবর নিয়ে জানা গেছে, ফেরদৌসের এই ঘটনায় ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাস বিব্রত৷ তারা বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কেও জানিয়েছে৷ ফেরদৌস ভিসার শর্ত ছাড়াও ভারতের আইন লঙ্ঘন করেছেন৷ বিষয়টি ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানানোর পর তাঁকে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়৷ তাঁর ভিসা বাতিল এবং তাঁকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷
এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় হোয়াটসঅ্যাপে ফেরদৌসের সঙ্গে ডয়চে ভেলে'র পক্ষে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন কিছু বলবো না৷ আমি একটি লিখিত বিবৃতি দেবো৷''
লিখিত বিবৃতিটি হাতে এলে দেখা যায় সেখানে ফেরদৌস ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন৷
বিবৃতিতে ফেরদৌস যা বলেছেন:
‘‘আমি চিত্রনায়ক ফেরদৌস৷ অভিনয় আমার একমাত্র নেশা ও পেশা৷ অভিনয় শিল্পের মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষী সকলের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরিতে সর্বদা কাজ করার চেষ্টা করেছি৷ আমার ভাবতে ভালো লাগে, আমি দুই বাংলায় সমানভাবে জনপ্রিয়৷ দুই বঙ্গের মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনাচারে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে৷ আবার ভারত বহু কৃষ্টি-কালচারের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ একটি দেশ৷ ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ভারতের অবদান আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি৷ পাশাপাশি ভারতের জনগণের ত্যাগ-তিতিক্ষা আমাদের চিরঋণী করে রেখেছে৷ পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে আমার সম্পর্ক বহুদিনের৷ এখানে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক শিল্পী, সাহিত্যিক আমার বন্ধু, যাদের সাথে আমি সবসময় হৃদ্যতা অনুভব করি৷ এজন্য বিভিন্ন সময় কারণে-অকারণে আমি এখানে চলে আসি৷
ভারতে জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে৷ বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের এই নির্বাচন পূর্বের মতো সারা বিশ্বে সাড়া ফেলেছে৷ এই সময়ে আমি ভারতে অবস্থান করছিলাম৷ সকলের মতো আমারও আগ্রহের জায়াগায় ছিল এই নির্বাচন৷ ফলে ভাবাবেগে তাড়িত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের একটি নির্বাচনি প্রচারণায় আমি আমার সহকর্মীদের সাথে অংশগ্রহণ করি৷ এটা পূর্বপরিকল্পনার কোনো অংশ ছিল না৷ শুধুমাত্র আবেগের বশবর্তী হয়ে আমি অংশগ্রহণ করেছি৷ কারো প্রতি বিশেষ আনুগত্য প্রদর্শন বা কোনো বিশেষ দলের প্রচারণার লক্ষ্যে নয়, আবার কারো প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করাও আমার উদ্দেশ্য নয়৷ ভারতের সকল রাজনৈতিক দল এবং নেতার প্রতি আমার সম্মান রয়েছে৷ আমি ভারতের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল৷
আমি আগেও বলেছি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসা অগাধ৷ সেই ভালোবাসা আমাকে আবেগতাড়িত করেছে৷ আমি বুঝতে পেরেছি, আবেগের বশবর্তী হয়ে সহকর্মীদের সাথে এই নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করাটা আমার ভুল ছিল, যেটা থেকে অনেক ভ্রান্তি তৈরি হয়েছে এবং অনেকে ভুলভাবে নিয়েছেন৷ আমি স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক৷ একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে অন্য একটি দেশের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ কোনোভাবেই উচিত নয়৷ আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি৷ আশা করি সংশ্লিষ্ট সকলে আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷''