মোদী কি সাফল্য ধরে রাখতে পারবেন?
১১ এপ্রিল ২০১৯ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র এই অগ্নিপরীক্ষায় বৃহস্পতিবার প্রথম পর্বের ভোটে সহিংসতায় একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ নিহত ব্যক্তি অন্ধ্র প্রদেশের ক্ষমতাসীন তেলেগু দেশাম পার্টির স্থানীয় পর্যায়ের এক নেতা৷ আঞ্চলিক পর্যায়ের দলগুলোর মধ্যে বিরোধের জেরে অন্ধ্র প্রদেশে আরো সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷
এই প্রদেশ থেকে নিম্নকক্ষ বা লোকসভায় ২৫ জন সদস্য ও রাজ্যের ১৭৫ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন৷ এছাড়াও প্রথম পর্যায়ে আরো ১৭টি রাজ্য ও ২টি ইউনিয়ন টেরিটরিতে ভোটগ্রহণ হয়েছে৷ ছয় সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলবে সাত পর্বের এই নির্বাচন৷
বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ভারতের ১৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ভোটার হলেন ৯০ কোটি৷ প্রায় দশ লাখের মতো ভোটকেন্দ্রে লোকসভার ৫৪৫টি আসনের মধ্যে ৫৪৩টি আসনের জন্য ভোটগ্রহণ হবে৷ বাকি দু'টি আসনের সদস্য প্রেসিডেন্ট সরাসরি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে মনোনীত করবেন৷
মোট ৪৩ কোটি নারী ভোট দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে৷ আর নতুন ভোটার ৮ কোটি ৪০ লাখের মতো৷
২০১৪ সালের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপি বিপুল ব্যবধানে জয় নিয়ে সরকার গঠন করে৷ এবারকার জরিপগুলোও মোদীকেই এগিয়ে রাখছে৷ তবে আগেরবারের মতো বড় ব্যবধানে জয় পাওয়ার আশা দুরাশা হবে৷
বিজেপি'র আইনপ্রণেতা রাকেশ সিনহা প্রধানমন্ত্রী মোদীর অর্জনের প্রশংসা করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যদি কেউ আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন করে, তাহলে একে সমাজবাদী সরকারই মনে করবে৷ আমাদের সরকার গরিবদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা তৈরি করেছে; যেগুলোর আওতায় আগে কেবল মধ্যবিত্ত পর্যন্ত লোকেরা ছিলেন৷''
নির্বাচনি ইশতাহারে বিজেপি কৃষকদের কল্যাণ, জাতীয় নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, স্বাস্থ্য সেবা ও অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছে৷ এছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে সম্প্রতি কাশ্মীরকে ঘিরে যে বৈরিতা তৈরি হয়েছিল, তার কথাও রয়েছে তাদের নির্বাচনি প্রচারণায়৷
তবে মোদী বিরোধীরা বার বার তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনলেও তা ধোপে খুব একটা টেকেনি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷ ‘‘তাঁর দুর্নীতিপরায়ণ ইমেজ কিন্তু নেই৷ তাঁর ‘মোদী ব্র্যান্ড' রাফালে কেলেঙ্কারির মতো বিষয়ে খুব একটা টলেনি, বিশেষ করে সমর্থকদের কাছে৷ কারণ, তাঁরা এতে বিশ্বাস করেন না,'' ডয়চে ভেলেকে বলেছেন সিভোটার নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ইয়াশওয়ান্ত দেশমুখ৷
২০১৪-তে যে কংগ্রেসকে সহজেই হারিয়েছিল বিজেপি, সেই কংগ্রেসই এখন রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী৷ কংগ্রেস তাদের ইশতাহারে সবচেয়ে গরিব ২০ ভাগের নিশ্চিত আয়ের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছে৷ এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা, সুলভে বাসস্থান ও আগামী পাঁচ বছরে কর্মসংস্থানের হার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে৷ কংগ্রেস বিজেপিকে হারানোর জন্য আঞ্চলিক দলগুলোর জাতীয় জোট করার আহ্বানও জানিয়েছে, যাকে তারা বলছে ‘মহাগাথাবন্ধন'৷ দেশমুখ বলেন, ‘‘যদি দলগুলো তাদের ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, তবেই উদ্দেশ্য সফল হবে৷''
ভারতের সাতপর্বের ভোটগ্রহণ শেষ হবে ১৯ মে৷
রিতিকা পান্ডে, মানসি গোপালাকৃষ্ণান, এপি/জেডএ