চাই ডিজিটাল সচেতনতা
৭ জানুয়ারি ২০১৬‘কোড উইক' সপ্তাহ উপলক্ষ্যে খেলাচ্ছলে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখছে ৬০ জন শিশু৷ এভাবে তারা ইন্টারনেট-কে আরও চেনার সুযোগ পাচ্ছে৷ গেশে ইয়োস্ট এই কর্মকাণ্ডের উদ্যোক্তা৷ গোটা জার্মানিতে তিনি শিশুদের জন্য একশ'রও বেশি এমন ওয়ার্কশপ আয়োজন করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সি প্লাস প্লাস বা পিএইচপি-র মতো জটিল প্রোগ্রামিং পদ্ধতি শেখার প্রয়োজন নেই৷ শুধু ব্যবহারকারী হিসেবে নয়, সহজ উপায়ে ইন্টারনেটে সৃজনশীলভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠার উপায়ও রয়েছে৷ আজকের যুগে এটা জানা জরুরি৷ কারণ আমাদের তথ্য নিয়ে সেখানে কী ঘটছে, তা জানা দরকার৷ অ্যালগোরিদম কী, সে বিষয়েও প্রাথমিক ধারণা থাকা উচিত৷''
ইউরোপের বাকি অংশের তুলনায় জার্মানির শিশুরা তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত জ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে৷ বিশেষ করে স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও বাল্টিক দেশগুলি এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে রয়েছে৷
গেশে বলছেন, ডিজিটাল শিক্ষার ক্ষেত্রে জার্মানিতে এখনো অনেক কিছু করার রয়েছে৷ হয়ত স্কুলেই শিশুরা কিছুটা শিখেছে, যদিও সেখানে সুযোগ হয়ত কম৷ বর্তমান পরিস্থিতি বদলাতে জার্মান সরকার প্রায় দেড় বছর আগে গেশে ইয়োস্ট-কে জার্মানির ডিজিটাল রাষ্ট্রদূত হিসেবে ঘোষণা করেছে৷
কিন্তু তিনি প্রাইমারি স্কুলেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত শিক্ষার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার পথে বাধাও কম নয়৷ জার্মানির ডিজিটাল রাষ্ট্রদূত গেশে ইয়োস্ট বলেন, ‘‘জার্মানিতে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন ব্যবস্থা আমার জন্য একটা সমস্যা৷ শিক্ষা রাজ্যের এক্তিয়ারে পড়ে৷ রাজ্য সরকার বলছে, ইচ্ছা আছে কিন্তু এর জন্য অর্থ নেই৷ অথবা ক্লাসে কীভাবে ডিজিটাল শিক্ষা দেওয়া হবে, তা জানি না৷ বেশ কঠিন অবস্থা, কারণ সবাই একে অপরকে দোষ দেয়৷ সবাই বলে, করতে তো চাই, কিন্তু কীভাবে করবো তা জানি না৷''
জার্মানিতে বার্লিন শহরেই সবচেয়ে বেশি স্টার্ট আপ কোম্পানি রয়েছে৷ শিল্পকলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজাইন গবেষণার অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করছেন গেশে৷ ইন্টারনেট রাষ্ট্রদূতের কাজটি স্বেচ্ছাসেবি হিসেবে নিয়েছেন তিনি৷ ডিজাইনার, তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে মিলে তিনি এমন ডিজিটাল প্রযুক্তি তৈরি করছেন, যা দৈনন্দিন জীবন সহজ করে তুলবে৷ যেমন কাপড়ের মধ্যে সেন্সর বসানো রয়েছে৷ স্পর্শ করলে অ্যালার্ম বেজে উঠবে৷ কাপড়ের মধ্যেই ডিজিটাল প্রযুক্তি৷ গেশে ইয়োস্ট বলেন, ‘‘আজকের নেটওয়ার্ক জগতকে সব রকম মানুষের আওতায় আনাই আমাদের লক্ষ্য৷ যেমন স্মৃতিভ্রষ্ট রোগী অথবা বধির ও অন্ধ মানুষ৷ নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে কাজ করে বোঝার চেষ্টা করছি, কীভাবে এই নেটওয়ার্ক-সর্বস্ব জগতে তাদের শামিল করা যায়, প্রযুক্তি কীভাবে সেতুবন্ধনের কাজে লাগানো যায়৷''
ভবিষ্যতের কাজের জায়গা কেমন হবে, সে বিষয়েও মাথা ঘামাচ্ছেন গেশে ইয়োস্ট৷ আজকের তরুণ প্রজন্ম ইন্টারনেটের পরিবেশেই বড় হয়ে উঠছে৷ এই প্রজন্মের কাছে সর্বদাই ল্যাপটপ থাকে৷ তারা কাজের ক্ষেত্রে বাঁধন চায় না, কোনো নির্দিষ্ট প্রকল্পের জন্য কাজ করতে চায়৷ তারা স্বাধীনতা চায়, নিজস্ব আইডিয়া কাজে লাগাতে চায়৷
ডিজিটাল রাষ্ট্রদূত হিসেবে গেশে মনে করেন, এই মানুষগুলি রাজনীতি ও অর্থনীতির জগতেও নতুন উদ্দীপনা আনতে পারেন৷ গেশে বলেন, ‘‘রাজনীতি জগতে এমন বিকল্প চিন্তার তরুণ মানুষ দেখা যায় না বলে আমার রাগ হয়৷ কারণ ইন্টারনেটের জগতে তাদের জন্য অনেক বেশি উত্তেজনা রয়েছে৷ সেখানে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কাজ হয়৷ দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ভবিষ্যৎ স্থির করা হয়৷''
প্রোগ্রামিং ওয়ার্কশপে ফেরা যাক৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল অর্থনীতির দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনরের সঙ্গে ভিডিও আলাপ চলছে৷ গোটা ইউরোপ জুড়ে প্রায় ৫,০০০ এমন ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হচ্ছে৷ এভাবে গেশে ইয়োস্ট শিশুদের ডিজিটাল জগত সম্পর্কে আরও জ্ঞান বিতরণ করতে চান৷