ডর্টমুন্ড না বায়ার্ন?
২৫ মে ২০১৩আসলে ফুটবল এমন একটা খেলা যে, সেখানে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়৷ অথবা অন্যভাবে বলতে গেলে, ফুটবল দাবা নয়, আবার পাশাও নয়, বরং তার মাঝামাঝি৷ দ্বিতীয়ত, খেলার পরে খেলোয়াড়, দর্শক, পণ্ডিত-ভাষ্যকারদের বলার মতো অনেক কিছু থাকে৷ কিন্তু খেলার আগে? বিশেষ করে সে খেলা যদি ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল হয়, যা নিয়ে অন্তত হপ্তা দু'য়েক ধরে বাজার গুলজার হচ্ছে?
বদ রসিকতা
বলার যা কিছু ছিল, তা প্রায় বলা হয়ে গিয়েছে বলে মোটামুটি ধরে নেওয়া যায়৷ তবে রসিকতা করা যায় বৈকি৷ যেমন ইংল্যান্ডের সাবেক জাতীয় খেলোয়াড় গ্যারি লিনেকার একবার বলেছিলেন, ফুটবল হল এমন একটা খেলা, যেখানে ২২ জন লোক ৯০ মিনিট ধরে একটা বলকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় আর শেষমেষ জেতে জার্মানরা৷
এবার লিনেকার টুইট করেছেন: ‘‘ফাইনালে ২২ জন লোক ৯০ মিনিট ধরে বলটাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে আর শেষমেষ জিতবে জার্মানরা৷'' জার্মান-জার্মান ফাইনালে কে জিতবে, খোদ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে সে প্রশ্ন করা হলে, তিনিও বলেন: কোনো একটা জার্মান দল তো জিতবেই; তাতেই তিনি খুশি৷ এ'তে ইংল্যান্ডের পত্রিকাগুলো ঠাট্টা করে লিখেছে: এ হল ইংরেজদের পক্ষে একটা পার্ফেক্ট ফাইনাল, কেননা একটা না একটা জার্মান দল হারতে বাধ্য৷
সুলক্ষণ, কুলক্ষণ
ফুটবলাররা একটি কুসংস্কারাচ্ছন্ন জাতি৷ কোন পায়ে কোন বুট, দাড়ি কাটা কিংবা না কাটা, জার্সির নীচে টি-শার্ট, এ'সব তো আছেই৷ ফুটবল বিশারদরা তারও বাড়া৷ তারা বার করেন কবেকার কোন ম্যাচে কি হয়েছিল কিংবা হয়নি, সে সব লক্ষণ কিংবা কুলক্ষণ৷ বায়ার্নের বিদায়ী কোচ ইয়ুপ হাইনকেস'কে নিয়ে এখন যে খেলা চলেছে৷
১৯৭৮ সালে ডর্টমুন্ড বোরুসিয়া ম্যোনশেনগ্লাডবাখের কাছে হারে এক আশ্চর্য ১২-০ গোলে৷ বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে এ'রকম আর কোনো ফলাফল নেই! সেবার গ্লাডবাখের হয়ে একাই পাঁচটি গোল করেছিলেন যে খেলোয়াড়, তার নাম ইয়ুপ হাইনকেস৷
১৯৯৮ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ডর্টমুন্ড বায়ার্নকে হারায় অ্যাগ্রিগেটে ১-০ গোলে৷ ভালো কথা৷ কিন্তু পরের রাউন্ডকে যারা ডর্টমুন্ডকে বিদায় দেয়, তারা ছিল রেয়াল মাদ্রিদ৷ রেয়াল মাদ্রিদ সেবার ট্রফিটাও জেতে৷ রেয়ালের কোচ কে ছিলেন? ঐ ইয়ুপ হাইনকেস৷
প্রতিবেদনটির বাকি অংশ পড়তে ক্লিক করুন এখানে...
সাপের হাঁচি বেদেয় চেনে
এ পর্যন্ত তো ছিল সহজ হিসেব৷ কিন্তু এর আগের একমাত্র অল-জার্মান ইউরোপীয় ফাইনাল ছিল ১৯৮০ সালের উয়েফা কাপ ফাইনাল৷ সেই ফাইনালে গ্লাডবাখ হারে ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে৷ পরাজিত গ্লাডবাখের কোচ কিন্তু ছিলেন এই ইয়ুপ হাইনকেস৷
ডর্টমুন্ড ১৯৯৭ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতে৷ তার আগের দুই মরশুমে তারা বুন্ডেসলিগা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল৷ এবারেও তাই৷ ১৯৯৭'তে বুন্ডেসলিগা চ্যাম্পিয়ন হয় বায়ার্ন৷ এবারেও তাই৷ ১৯৯৭'তে স্টুটগার্ট জার্মান কাপ জেতে৷ এবারেও তারা ফাইনালে৷ ১৯৯৭'তে হ্যার্টা বার্লিন প্রোমোশন পায়, এবারেও পাচ্ছে৷ ১৯৯৭'তে বুন্ডেসলিগার টপ স্কোরার ছিলেন বায়ার লেভারকুজেনের উল্ফ কির্স্টেন; এবারে সেই একই বায়ার লেভারকুজেনের স্টেফান কিসলিং৷
সব মিলিয়ে যার মানে দাঁড়াচ্ছে: চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে এবারও জিতছে ডর্টমুন্ড, ঠিক ১৯৯৭ সালের মতো?
মারিও গ্যোৎসে যে ইনজিওরড, তা'তেও কোনো অসুবিধা নেই৷ ২০১২'র কাপ ফাইনালে ডর্টমুন্ড বায়ার্নকে হারায় ৫-২ গোলে৷ তখনও মারিও গ্যোৎসে ইনজিওরড ছিলেন এবং খেলতে পারেননি৷
ফুটপাথের গণক টিয়াপাখি
জার্মানিতে তো আর সেরকম পাওয়া যাবে না৷ এক ছিল ২০১০ সালের সেই অক্টোপাস পল, যে প্রায় সব ক'টা বড় ম্যাচে কে জিতবে, কে হারবে বলে দিয়েছিল৷ সে আর নেই৷ তাই এবার লাইপসিশ চিড়িয়াখানায় গিয়ে মালয় দেশের এক অদ্ভুত জীব, জাতিতে টাপির, সেই জীবকে জিগ্যেস করা হয়েছিল৷ বারু নামের সেই টাপির বায়ার্নের বদলে ডর্টমুন্ডের নাম করে দেওয়া ঘাসপাতাই পছন্দ করেছে৷ ফেরেট আর মোয়ের্মেল নামের দুই ছোটনখের এশীয় ভোঁদড়ও ডর্টমুন্ডের নাম করে দেওয়া মাছ খেয়েছে হালুম-হুলুম করে৷
শুধু হোডেনহাগেন'এর সেরেঙ্গেটি পার্কের ভারতীয় হাতি নেলি এক শটে বলটা ডর্টমুন্ডের নেটে ঢুকিয়ে দিয়েছে৷ এখন এর মানেটা কি? ডর্টমুন্ডের জিত, না বায়ার্নের গোল? পণ্ডিতরা এখনও তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন৷
এপি / এসবি (ডিপিএ)