ট্রাম্প-রুহানি শীর্ষ বৈঠকের প্রচেষ্টা চলছে
২৭ আগস্ট ২০১৯জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অঘোষিত আবির্ভাব সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে কোনো বোঝাপড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন৷ সে দেশের সঙ্গে সংলাপেরও কোনো উদ্যোগ নেয় নি মার্কিন প্রতিনিধিদল৷ অথচ সোমবার সম্মেলনের শেষ দিনে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, তিনি ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে সে দেশের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানির সঙ্গে ঐতিহাসিক সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত৷ মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই বৈঠক হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি৷ তবে তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ চাই, বলেন ট্রাম্প৷
ইরান ও অ্যামেরিকার মধ্যে উত্তেজনা কমাতে জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক দেশ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ নেপথ্যে যে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছেন, সে বিষয়ে প্রথমে বিশেষ কিছু জানা যায় নি৷ কিন্তু জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন সপ্তাহান্তে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মেদ জাভাদ জারিফ আচমকা হাজির হওয়ায় সেই উদ্যোগকে ঘিরে প্রত্যাশা বেড়ে যায়৷ সোমবার মাক্রোঁ বলেন, তিনি প্রেসিডেন্টের রুহানির সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা আগেই কথা বলেছেন৷ ট্রাম্প ও রুহানির সাক্ষাৎ হলে মতপার্থক্য কাটিয়ে বোঝাপড়া সম্ভব হবে বলে তাঁর বিশ্বাস৷ তবে মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন মাক্রোঁ৷ তাঁর মতে, এখনো কিছুই করা হয় নি৷ গোটা বিষয়টি অত্যন্ত নাজুক, বলেন মাক্রোঁ৷
ইরান অবশ্য ফ্রান্সের এই উদ্যোগ সম্পর্কে প্রকাশ্যে সরাসরি কোনো মন্তব্য করে নি৷ কিন্তু সোমবারই তেহরানে প্রেসিডেন্ট রুহানি আরও কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, কোনো সাক্ষাতের ফলে যদি ইরানের জনগণের সমস্যা সমাধান করা যায়, তিনি অবশ্যই সেই পদক্ষেপ নেবেন৷ তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারিফের ফ্রান্স সফরের প্রতি সমর্থন জানান৷ তবে মঙ্গলবার তিনি মার্কিন প্রশাসনের উদ্দেশ্যে ‘প্রথম পদক্ষেপ' হিসেবে ইরানের উপর সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার ডাক দিয়েছেন৷
উল্লেখ্য, আগামী মাসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে রুহানি নিউ ইয়র্ক সফর করবেন৷ ট্রাম্পও সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন৷ সে সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হতে পারে, এমন সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷
২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সমাজের যে পরমাণু চুক্তি হয়েছিল, অ্যামেরিকা সেই বোঝাপড়া থেকে বেরিয়ে এসে ইরানের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে চলেছে৷ ট্রাম্প ও রুহানির মধ্যে সাক্ষাতের আগে এমন এক বোঝাপড়ার প্রয়োজন রয়েছে, যার আওতায় দুই পক্ষেরই মুখরক্ষা করা সম্ভব৷ নতুন অথবা এক বাড়তি চুক্তির আওতায় ইরানের আরও কিছু স্থাপনার উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ব্যবস্থা করা হতে পারে৷ মূল চুক্তির মেয়াদ ২০২৫ সালের পর আরও বাড়ানো হতে পারে৷ এর বদলে ইরান কড়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে রেহাই পাবে৷ ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ইরানের হাতে কোনো পরমাণু অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দেখতে চান না৷ তাঁর মতে, সেই বোঝাপড়ার মেয়াদও দীর্ঘ হতে হবে৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সংলাপের সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ সংলাপের সদিচ্ছাও বিশাল অগ্রগতির লক্ষণ, বলেন ম্যার্কেল৷ জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে ইউরোপীয়রাও ইরানের সঙ্গে যে কোনো আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছে, বলেন তিনি৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)