1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঝড়ের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত কলকাতা

২০ মে ২০২০

আমফানের দাপটে তছনছ হয়ে গিয়েছে কলকাতা। বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত দুর্যোগ চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন শহরের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

https://p.dw.com/p/3cVEC
ছবি: DW/P. Tewari

এখনই থামছে না আমফান। কাটছে না দুর্যোগ। বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত কলকাতায় ঝড়ের দাপট জারি থাকবে। জানিয়ে দিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। বুধবার মাঝ রাত পর্যন্ত কলকাতায় ৭০ থেকে ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় ঝড় চলতেই থাকবে। বৃহস্পতিবার সারা দিন দফায় দফায় হবে বৃষ্টি। 

এ দিন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করেন। দৃশ্যত বিধ্বস্ত মুখ্যমন্ত্রী কলকাতাবাসীকে জানিয়েছেন, প্রশাসন নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকলে যেন বাড়িতেই থাকেন। কারণ, ঝড়ের দাপটে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে কলকাতা।

বুধবার বেলা তিনটের পর থেকে ঝড়ের দাপট বাড়তে শুরু করে কলকাতায়। এক সময় তা ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগে পৌঁছে যায়। মূলত পূর্ব কলকাতার উপর দিয়ে ঝড় বইলেও গোটা কলকাতা এবং সংলগ্ন শহরতলি তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রশাসন জানিয়েছে, কলকাতার প্রায় প্রতিটি রাস্তাই গাছ অথবা বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ইন্টারনেট কার্যত বন্ধ। বহু বাড়িতে জানলার কাচ ভেঙে গিয়েছে। সল্টলেক থেকে গড়িয়াহাট জল ঢুকেছে একতলার ঘরে। বহু জায়গায় গাড়ির উপর গাছ পড়েছে। বেশ কিছু পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে বাড়ির ঝুলন্ত বারান্দা। এই পরিস্থিতিতে দুপুর থেকেই শহরের প্রতিটি ফ্লাইওভার বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। ঝড় পুরোপুরি না থামা পর্যন্ত তা খোলা হবে না।

এ দিন সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল কলকাতায়। দিন যত গড়িয়েছে, বেড়েছে ঝড়ের দাপট, বৃষ্টিরও। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি চলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা ঘণ্টায় ১০ মিমি বৃষ্টির জল বের করে দিতে পারে। কিন্তু হাওয়া অফিসের যা পূর্বাভাস, তাতে বহু জায়গা জলমগ্ন হওয়ার সম্ভাবনা। তারই মধ্যে বুধবার রাতে গঙ্গায় জোয়ার এসেছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। কারণ ভরা কোটালের সময় জল আর নিকাশি নালার মাধ্যমে বেরতে পারে না। 

শুধু গাছই ভাঙেনি। গোটা কলকাতা জুড়ে ইলেকট্রিক ট্রান্সফর্মার ফাটতে শুরু করেছে। ঝড়ের দাপটে দিকে দিকে শর্টসার্কিট হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আতসবাজি ফাটার মতো আগুন বার হচ্ছে ট্রান্সফর্মার বক্স থেকে। কোথাও বা তীব্র শব্দে তা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ পর্ষদকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং বলেছেন, এই মুহূর্তে প্রশাসনের পক্ষেও দ্রুত কোথাও পৌঁছনো মুশকিল হচ্ছে। তাই সকলকেই অপেক্ষা করতে হবে। ট্র্যাফিক সিগন্যাল, ল্যাম্প পোস্ট সব ভেঙে পড়েছে। একই অবস্থা গঙ্গার উল্টো দিকে হাওড়ার। গঙ্গা এতটাই ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে যে সমস্ত ফেরি যোগাযোগ এ দিন সকাল থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে। 

বুধবার সকালেই কলকাতায় যে সব এলাকায় পুরনো বাড়ি আছে, সেখানকার লোকেদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আপাতত কাউকে ফেরানো হবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সকলে আবার নিজেদের বাড়ি যেতে পারবেন। বিদ্যুৎ কখন ফিরবে, সে বিষয়েও প্রশাসন নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না। 

কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ''আমরা প্রতিটি এলাকার খবর নিচ্ছি। সকলকে সতর্ক থাকার আবেদন করছি। কারও যেন প্রাণহানি না হয়।'' 

১৭৩৭ সালে শেষবার এমন ঝড়ের দাপট দেখেছিল কলকাতা। এরপর পশ্চিমবঙ্গে বহু ঝড় এলেও সরাসরি তা কলকাতাকে আক্রান্ত করেনি। আয়লার সময় কার্যত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবন। বলা হয় সেই ঝড়ের লেজ টুকু গিয়েছিল কলকাতার উপর দিয়ে। তাতেই বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল শহর। কিন্তু বুধবার যা ঘটলো, তা সম্ভবত গত কয়েক শতকের মধ্যে দেখেনি কলকাতা।

জিএইচ/এসজি(এএনআই, আবাপ, আলিপুর আবহাওয়া দফতর)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য