জার্মানিতে আলোড়ন ফেলেছে ‘নাৎসি'
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮বিতর্ক ছিলই৷ বিতর্ক আরো জোরদার হলো৷ জার্মানির এসেন শহরের একটি এনজিও-র ‘হঠকারি' সিদ্ধান্ত সারা দেশে রাজনৈতিক আলোড়ন ফেলে দিয়েছে৷ ঘটনার জের এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেলও বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছেন৷
ঘটনার সূত্রপাত গত ডিসেম্বর মাসে৷ পশ্চিম জার্মানির এসেন শহরের একটি এনজিও দরিদ্র মানুষদের জন্য একটি ফুডব্যাংক চালু করেছে বহুদিন যাবৎ৷ সপ্তাহের একটি দিন সেখানে রেস্তোরাঁ এবং ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের এক্সপায়ারি ডেটের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া খাবার নিয়ে এসে বিনামূল্যে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়৷ অভিযোগ, গত ডিসেম্বরে এনজিও-টি সিদ্ধান্ত নেয় যে, কেবলমাত্র জার্মান নাগরিকদেরই এই সুযোগ দেওয়া হবে৷ যুক্তির সপক্ষে এনজিও-র আধিকারিক জর্গ সারতর বলেন, মূলত বৃদ্ধ জার্মানেরাই আগে সেখানে খাবার নিতে আসতেন৷ কিন্তু গত কয়েকবছরে প্রায় ৭৫ শতাংশ শরণার্থী ওই শহরে পৌঁছেছেন৷ তাঁরাও খাবার নেওয়ার জন্য লাইন দিতে শুরু করেছেন৷ শরণার্থীদের দেখে বৃদ্ধ জার্মানেরা ভয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন৷ সে কারণেই সাময়িক সময়ের জন্য তাঁরা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এর কিছুদিনের মধ্যেই দেখা যায়, এনজিও-র ভ্যানের গায়ে কেউ বা কারা ‘নাৎসি' শব্দটি জুড়ে দিয়েছেন৷ এরপরেই বিষয়টি রাজনৈতিক পরিসরে আলোড়ন সৃষ্টি করে৷
বাম রাজনীতিকেরা প্রথম থেকেই পুরো বিষয়টির তীব্র সমালোচনা শুরু করেন৷ বাম রাজনীতিক সারা ভাগেনক্নেশ্ট বলেন, এর জন্য দায়ী সরকার৷ কেন এ ধরনের ছোট ছোট এনজিও-র হাতে এ ধরনের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ এবং বলেন, জার্মানি যথেষ্ট সমৃদ্ধ রাষ্ট্র৷ অর্থের কোনো অভাব নেই৷ কেন সেখানে শরণার্থীদের কিংবা দরিদ্র মানুষদের এক্সপায়ারি ডেটের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া খাবার বিতরণ করা হবে?
এনজিও-র আধিকারিক অবশ্য বলেন, বিষয়টি নিয়ে অকারণেই রাজনৈতিক শোরগোল হচ্ছে৷ ‘নাৎসি' শব্দটি যাঁরা লিখেছেন, তাঁরা নেহাতই বালখিল্য আচরণ করেছেন৷ এর সঙ্গে নাৎসি ভাবনা বা জাতিবিদ্বেষের কোনো যোগ নেই৷ বরং বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হওয়ায় তাঁর কর্মীরাই কাজে আসতে ভয় পাচ্ছেন৷
বামেদের অবশ্য বক্তব্য, বিষয়টি এক ধরনের জাতিবিদ্বেষ৷ কারণ কেবলমাত্র জার্মান নাগরিকদের খাবার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ বিষয়টি নিয়ে চ্যান্সেলর ম্যার্কেলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্বীকার করেন যে, ঘটনাটি অনভিপ্রেত৷ আরো সচেতন ভাবে সমস্যার মোকাবিলা করা দরকার ছিল৷ প্রয়োজনে তাঁর সরকার পদক্ষেপ করবে বলেও তিনি জানিয়েছেন৷
গত কয়েকবছরে জার্মানিতে চোখে পড়ার মতো শরণার্থীর সংখ্যা বেড়েছে৷ সিরিয়ায় নতুন করে উদ্ভূত পরিস্থিতির ফলে শরণার্থীর সংখ্যা আরো বাড়বে বলেই মনে করাহচ্ছে৷ এদিকে জার্মান নাগরিকদের মধ্যেও শরণার্থীদের নিয়ে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের মত৷ এমন পরিস্থিতিতে এসেন শহরের ঘটনা সমস্যা আরো জটিল করবে বলেই বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন৷
এলিজাবেথ শুমাখার/এসজি