1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান প্রেমিকা, তুমি কোথায়?

১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

জার্মানিতে আসার পর একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়৷ ছেলে হলে বলবে, ‘‘একজন জার্মান গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে নাও ভাই৷'' আর মেয়ে হলে উল্টোটা৷ মজা করে কেউ কেউ বললেও সিরিয়াসলিও বলেন অনেকে৷ কারণ কী?

https://p.dw.com/p/3D3N9
Deutschkurs für ausländische Studenten, Uni Bonn
ছবি: picture-alliance

‘‘বহুদিন পরে আজ, বন্দরে বৃষ্টি এলো.. আমি কাহারে খুঁজে ফিরি?'' এক বছর হয়েছে জার্মানি এসেছি৷ এর মধ্যে বহুবার বহুজনের কাছ থেকে এমন পরামর্শ পেয়েছি৷ তাঁদের কথা মতো চললে হয়তো ওপরের গানের কথার মতোই আমার অবস্থা হতে পারত৷ কিন্তু হয়নি৷

কিন্তু এসব পরামর্শ এমনিই কেউ দেয় না৷ এর কারণ আছে৷ মূলত যে কারণে অনেকেই সিরিয়াসলি এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তা হলো, ভাষা শেখা সহজ হয় তাতে৷ আরো অনেক কিছু সহজ হয়, তবে আজ ভাষা নিয়েই লিখব৷

জার্মানিতে আমি কাজ করি ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগে৷ মাঝে মধ্যে এশিয়া ইংরেজি বিভাগের জন্যও লিখি৷ তাই কার্যত আমার জার্মান ভাষা না জানলেও চলে৷ কিন্তু আসলেই কি তাই?

এখানে যে কেউ এলে প্রথমেই যে কাজটি করতে হয় তা হলো শহরের একটি প্রশাসনিক অফিসে গিয়ে নিজের নাম, ঠিকানা নিবন্ধন করা৷ এর আগে যে বাড়িতে থাকবেন, তার বাড়িওয়ালার সঙ্গে চুক্তি করা৷ তারপর পানি ও বিদ্যুতের বিল দেবার চুক্তি করা (ক্ষেত্র বিশেষে বাড়িওয়ালাই তা করেন)৷ এরপর চাকুরিজীবী হলে, যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করবেন তার সঙ্গে চুক্তি করা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করাসহ আরো অনেক কিছু৷

এর কয়েকদিন পর দেখবেন আপনার কাছে চিঠি এসেছে যে, মাসে প্রায় ১৮ ইউরো দিতে হবে টিভি দেখা বাবদ৷ হয়তো আপনার বাড়িতে টিভিই নেই৷ তাতেও কিছু যায় আসে না৷ টিভি দেখেন বা না দেখেন, পয়সা দিতে হবে৷ মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন? চুক্তি করুন মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে৷

এগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয়৷ এর বাইরেও আছে অনেক কিছু৷ সবমিলিয়ে নানান রকমের চিঠি আসবে আপনার কাছে৷

ভাববেন না, ওপরের যা কিছু বললাম তার কোথাও একটিও ইংরেজি অক্ষর লেখা তাকবে৷ চুক্তি করা থেকে যে কোনো রকমের চিঠি - সবই জার্মান ভাষায়৷ তাই এখানে বাঁচতে হলে জানতে হবে ভাষা৷

এখানেই শেষ নয়৷ সাইনবোর্ড বা কোনো বার্তাবাহক বোর্ড সবখানেই ডয়েচ ভাষা৷ ট্রাম বা বাসের ভেতর কোনো নির্দেশনা? তাও শুনতে হবে এবং বুঝতে হবে জার্মান ভাষাতেই৷ শুধু বিমানবন্দর কিংবা আন্তর্জাতিক রুটে চলা ট্রেনগুলোতে জার্মানের পাশাপাশি ইংরেজিতেও নির্দেশনা পড়া হয়৷

আরো আছে৷ রাস্তায় কারো সঙ্গে দেখা হলো৷ কিংবা কোনো দোকানে গিয়ে কিছু বলবেন৷ তারা ধরেই নেবে, আপনি জার্মান ভাষা জানেন৷ আপনার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেও ফেলবে৷

এরপর আপনি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবেন৷ অল্পবিস্তর ভাষা জানা থাকলে হয়তো জিজ্ঞেস করবেন, ‘‘স্প্রেশেন জি ইংলিশ?'' (আপনি ইংরেজি বলতে পারেন?)৷ যদি তিনি জানেন, তাহলে তো ভালোই৷ যদি না জানেন এবং বিষয়টিতে একেবারেই বিরক্ত না হন, তাহলেও ভালো৷ কিন্তু আপনার এমনও অভিজ্ঞতা হতে পারে যে, আপনার প্রশ্ন শুনে একেবারে উল্টো দিকেই হাঁটা দিতে শুরু করলেন সেই ব্যক্তি৷

যুবায়ের আহমেদ
যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলেছবি: bdnews24.com

বন শহরটিতে ডয়চে ভেলে, জাতিসংঘ, ডিএইচএল, ডয়চে টেলিকমের মতো কয়েকটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান থাকায়, এখানে ভিন্ন ভিন্ন দেশের অনেক নাগরিক থাকেন৷ তারপরও ভাষা মোটামুটি না জানলে চলাফেরাই মুশকিল৷

সবচেয়ে বড় সমস্যা এখানকার কাগজপত্রের বালাই৷ ডিজিটাল এই যুগে হার্ডকপি দিয়ে চলে জার্মানি৷ তাই আপনি গুগল ট্রান্সলেটে কপি পেস্ট করে দেখে নেবেন কাগজে কী লেখা আছে, তা সম্ভব নয়৷

এখানে সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার যে সবাই ধরেই নেয় আপনি জার্মান জানেন৷ জার্মানিতে আসার আগে আমি যেসব দেশে গিয়েছি, সেখানে ইংরেজি জানা থাকলে বিদেশিদের সঙ্গে ইংরেজিতেই কথা বলেন সবাই৷ কিন্তু এখানে তা নয়৷

আসলে ইংরেজির মতো না হলেও জার্মানও একটি বহুদেশীয় ভাষা৷ জার্মানি, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, লিস্টেনস্টাইন, লুক্সেমবুর্গ, সুইজারল্যান্ড- এই ছয়টি দেশে এটি একটি রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে মর্যাদা পায়৷ এছাড়া ব্রাজিল, ডেনমার্ক, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ডসহ ১৩টি দেশে এটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে চিহ্নিত৷ অবশ্য মাত্র ১০ থেকে ১২ কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন৷

সে যা-ই হোক, এ ভাষা এখানকার সর্বত্র বিরাজ করে৷ এদের জাতীয়তাবাদের বোধ বা অহম যা-ই বলুন না কেন, ভাষাকে সঙ্গে নিয়েই৷ তবে আমি বিশ্বাস করি না যে, ভাষা শেখার জন্য বা অন্য কোনো বৈষয়িক প্রয়োজনে প্রেমিকা খুঁজতে হবে৷ তাই আমি বরং এখানকার ভাষা শেখার স্কুলেই যাচ্ছি আপাতত৷

ভিনদেশে ভাষা নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য