জার্মান প্রতিবাদীকে দেশে ফেরালো ভারত
২৪ ডিসেম্বর ২০১৯জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন প্ল্যাকার্ড হাতে। যাতে লেখা ছিল, 'ভারতের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ। সেই ধর্মনিরপেক্ষতা যদি বজায় না রাখা হয়, তাহলে কী হতে পারে আমি জানি। কারণ আমি জার্মান।' এই তাঁর অপরাধ। যার জেরে রাতারাতি চেন্নাই আইআইটি থেকে পত্রপাঠ জার্মানি ফিরে যেতে হল ২৪ বছরের জেকব লিনডেনথালকে।
গোটা দেশ জুড়েই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, এনআরসি এবং পুলিশি বাড়াবাড়ি নিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। দেশের প্রায় প্রতিটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রেরা রাস্তায় নেমেছেন। আইআইটি-র ছাত্ররা সাধারণত এ সবের থেকে দূরে থাকেন। কিন্তু এ বারের প্রতিবাদে তাঁরাও সামিল হয়েছেন দেশ জুড়ে। চেন্নাই আইআইটির ছাত্ররা গত দু সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। আর সেখানেই সামিল হয়েছিলেন জেকব। ২৪ বছরের এই জার্মান ড্রেসডেনের বাসিন্দা। স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে এক বছরের জন্য আইআইটিতে এসেছিলেন তিনি পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করতে। তাঁর ফেরার কথা ছিল জুন মাসে।
আইআইটির প্রতিটি মিছিলেই দেখা গিয়েছে জেকবকে। হাতে পোস্টার নিয়ে। এরই জেরে সোমবার তাঁকে ডেকে পাঠায় ভারতের অভিবাসন দফতর। বলা হয় তাঁর রেসিডেন্ট পারমিটে সমস্যা আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেকবের এক বন্ধু বলেছেন, জেকবের কাছে তিনি শুনেছেন, অভিবাসন দফতরে যাওয়ার পরে জেকবকে প্রশ্ন করা হয় সিএএ বিরোধী মিছিল নিয়ে। একটি কাগজ দিয়ে তাঁকে বলা হয়, মিছিল করার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু জেকব আপত্তি জানান। এর পরেই অভিবাসন দফতরের অফিসাররা জানিয়ে দেন, জার্মান ছাত্র ভিসার নিয়ম ভেঙেছেন। ফলে যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে দেশ ছেড়ে যেতে হবে। জেকব নিজেই তাঁর টিকিট কাটেন এবং মঙ্গলবার সকালে দেশের উদ্দেশে রওনা হন। যাওয়ার আগে বন্ধুদের জন্য একটি মেসেজ রেখে যান তিনি। যাতে লেখা আছে--'আমি বিমানবন্দরে। চললাম। আর ফিরব না। এটাই অভিবাসন দফতরের সিদ্ধান্ত।'
জেকবের ঘটনায় দেশ জুড়ে ফের প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনও বিদেশি যদি প্রতিবাদে সামিল হন, তাহলে কি অভিবাসন দফতর আদৌ এ কাজ করতে পারে? বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, ভিসার নিয়ম অনুযায়ী, অভিবাসন দফতর যে কোনও সময় কারও ভিসা বাতিল করতে পারে। দেখতে হবে জেকবের ভিসায় কী কী বিধিনিষেধ ছিল। জেকবের বন্ধুদের দাবি, তাঁর ভিসায় লেখা ছিল, এ দেশে কোনও কাজ তিনি করতে পারবেন না। কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারবেন না, এমন কিছু সেখানে লেখা ছিল না। পৃথিবীর বহু দেশেই বিদেশি ছাত্ররা বহু কারণে প্রতিবাদে সামিল হন। তার জন্য তাঁদের বাধা দেওয়া হয় না। জেকবের ঘটনা ফের প্রমাণ করল, এ দেশে গণতন্ত্র তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সূত্রের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, জার্মান কনসুলেট জেকবকে আইনি সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু জেকব তাতে রাজি হননি। ভারতে থাকা নিরাপদ বলে মনে করেননি তিনি।
এসজি/জিএইচ (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য নিউজ মিনিট)