নেকড়ে মারা বাড়ছে
১৭ আগস্ট ২০১৪বার্লিনের লাইবনিৎস ইনস্টিটিউট ফর জু অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ রিসার্চ – অর্থাৎ চিড়িয়াখানা ও বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান৷ জার্মানিতে কোথাও নেকড়ে মারা পড়লে তার লাশ এখানেই পাঠানো হয়: ময়নাতদন্ত করেন প্রতিষ্ঠানের ভেটারিনারি প্যাথোলজিস্টরা৷ এ বছর, অর্থাৎ ২০১৪ সালে এখানে ১৫টি নেকড়ের মৃতদেহ পাঠানো হয়৷ তার আগের দু'বছরে এসেছিল প্রায় এক ডজন করে মরা নেকড়ে৷ তার মধ্যে অন্তত তিনটি নেকড়ে বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়েছে, বলে প্রমাণিত হয়৷
আসলে লিটল রেড রাইডিং হুডের গল্পের নেকড়ের মতোই, ইউরোপের মানুষের নেকড়ে-ভীতি বহুদিনের৷ যে কারণে দেড়শো বছর আগেই নেকড়েরা জার্মানি থেকে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়৷ জার্মানিতে নেকড়েদের প্রত্যাবর্তন নতুন সহস্রাব্দ যখন শেষ হতে চলেছে, সেই সময় থেকে৷ জার্মানির ১৬টি রাজ্যের মধ্যে পাঁচটিতে আজ একাধিক নেকড়ের দল রয়েছে – ইংরিজিতে যাদের বলে ‘উল্ফ প্যাক'৷ অন্যান্য রাজ্যেও নাকি নেকড়েরা ফিরতে চলেছে৷
নেকড়েদের প্রত্যাবর্তনের রাজনৈতিক পটভূমি হল: লৌহ যবনিকার পতন ও ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান৷ তবেই নেকড়েরা প্রাক্তন কমিউনিস্ট দেশগুলির শিথিল সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমে আসার সুযোগ পায় – কিংবা সুযোগ নেয়৷ বিশেষ করে যখন সমৃদ্ধ পশ্চিমেও মানুষজন ততদিনে প্রকৃতি ও পরিবেশকে অন্য চোখে দেখতে শিখেছে: যেমন নেকড়েদের৷ অন্তত গোড়ায় তেমনই ভাবা গিয়েছিল৷
কিন্তু কমিউনিস্ট শাসন এলে, গেলে কি হবে – সাধারণ মানুষজনের নেকড়ে ভীতি, এছাড়া খামারচাষি আর শৌখিন শিকারিদের নেকড়ের উপর দোষারোপ, এ সব তো থেকেই গেছে৷ সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে রাস্তায় রাস্তায় মোটরগাড়ির বিপদ, অর্থাৎ গাড়ি চাপা পড়ে মারা যাচ্ছে বিরল নেকড়েরা৷ ১৯৯৯ সাল যাবৎ জার্মানিতে ৭৫টি নেকড়েকে মৃত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছে৷ তাদের মধ্যে অধিকাংশই মারা গেছে গাড়ি চাপা পড়ে৷ তবে ডজন খানেক নেকড়েকে অবৈধভাবে গুলি করে মারা হয়েছে৷
দেশ হিসেবে জার্মানি ও জার্মানরা যে ‘নেকড়ে-সচেতন', তার প্রমাণ, কোনো নেকড়ের লাশ খুঁজে পাওয়া গেলে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সেটাকে ময়নাতদন্তের জন্য বার্লিনের লাইবনিৎস প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে থাকেন৷ অপরদিকে প্রতিষ্ঠানের প্যাথোলজিস্টরা যতই ‘ফরেনসিক এভিডেন্স' সংগ্রহ করুন না কেন, আজ অবধি জার্মানিতে নেকড়ে মারার জন্য মাত্র একজন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তা-ও অভিযুক্ত ব্যক্তি নেকড়ে মারা নিয়ে প্রকাশ্যে বড়াই করেছিলেন বলে৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ)