জার্মানির ভ্যুর্ৎসবুর্গে গত মাসে ট্রেনের মধ্যে এক ব্যক্তি চাকু দিয়ে কুপিয়ে পাঁচ ব্যক্তিকে আহত করে৷ শরণার্থী হিসেবে গত বছর জার্মানিতে আসা সেই তরুণকে তখন গুলি করে হত্যা করে পুলিশ৷ আরেক ঘটনায়, সিরিয়া থেকে জার্মানিতে আসা এক শরণার্থী, যার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হয়েছিল, আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় জার্মানির আন্সবাখে৷ হামলায় সে নিজে নিহত হয়, আহত হয় বেশ কয়েকজন৷ উভয় ঘটনার আগে হামলাকারীরা তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে ভিডিও প্রকাশ করেছিল৷ মিউনিখে আরেক ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হলেও সেটির সঙ্গে আইএসের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি৷
তবে এসব হামলার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে নতুন কিছু উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে জার্মানি৷ এগুলো হচ্ছে:
১. নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো৷
২. ইন্টারনেটভিত্তিক অপরাধ দমনে একটি কেন্দ্রীয় ক্রাইম ইউনিট গঠন৷
৩. অপরাধে জড়িয়ে পড়া অভিবাসীদের জার্মানি থেকে দ্রুত বিতাড়ন করা৷
৪. দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে এমন কেউ জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়লে তার জার্মান নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া৷
নতুন এসব উদ্যোগের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গোয়েন্দা তৎপরতা এবং অনলাইনে জঙ্গি তৎপরতা বন্ধে আরো জোর পদক্ষেপ৷ জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন,কেননা, গত কয়েকবছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আইএসের মতো জঙ্গি গোষ্ঠী তরুণ প্রজন্মের ‘ব্রেইন ওয়াশে' অনলাইন প্লাটফর্মগুলো ব্যবহার করছে৷ এই প্রক্রিয়াটি বেশ লম্বা কিন্তু জঙ্গিদের জন্য কার্যকর হয়ে ওঠে, যখন কাউকে ‘লোন উল্ফ' হিসেবে আক্রমণে ব্যবহার করা যায়৷ এ ধরনের ক্ষেত্রে কোনো একজন ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে কোথাও জঙ্গি হামলা চালায় এবং হামলার আগে জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রতি নিজের আনুগত্য প্রকাশ করে বার্তা রেখে যায়৷
‘লোন উল্ফ' ধরতে উদ্যোগ
গোয়েন্দাদের পক্ষে সংগঠিত অপরাধী চক্রের প্রতি নজর রাখা যতটা সহজ, ‘লোন উল্ফ' বা হঠাৎ জঙ্গিতে রুপ নেয়াদের প্রতি নজর রাখা ততটাই কঠিন৷ ভ্যুর্ৎসবুর্গে হামলায় জড়িত শরণার্থী গতবছর জার্মানিতে আসার পর বেশ উদার মনোভাব দেখিয়েছিল৷ জার্মান ভাষাও শিখতে শুরু করেছিল৷ কিন্তু তারপরই সে হঠাৎ জঙ্গিবাদের পথ ধরে৷ এ ধরণের ঘটনা প্রতিরোধে জার্মানি তাই অনলাইনে জঙ্গি তৎপরতার দিকে নজর রাখতে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে নতুন টিম গঠন করছে৷ সামগ্রিকভাবে পুলিশের জন্য বরাদ্দও দুই বিলিয়ন ইউরো বাড়ানো হয়েছে৷
বাংলাদেশে গুলশান হামলার আগ পর্যন্ত জঙ্গি তৎপরতা রোধে পুলিশ এবং সরকারের মধ্যে কিছুটা উদাসীনতা থাকলেও বর্তমানে বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারেই নেয়া হচ্ছে৷ গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে তারা৷ এছাড়া পুলিশের গুলিতে মারাও গেছে কয়েকজন সন্দেহভাজন জঙ্গি৷ তবে বাংলাদেশ পুলিশের অনলাইন তৎপরতায় এখনো ঘাটতি দেখা যাচ্ছে৷ এক্ষেত্রে জার্মানির মতো বাংলাদেশেরও বিনিয়োগ করা উচিত৷ বিশেষে করে জঙ্গিদের অনলাইন তৎপরতা রোধে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিশ্চিতে কাজ করতে হবে৷ পাশাপাশি ফেসবুক, গুগলসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম এবং স্মার্টফোন অ্যাপ নির্মাতাদের সঙ্গে সরকারের সখ্য বাড়াতে হবে, যাতে প্রয়োজন হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যায়৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷