1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ছোট’ সংঘর্ষে বড় সংঘাতের শঙ্কা, ইইউ মিশনের উদ্বেগ

হারুন উর রশীদ স্বপন
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার দিনে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘর্ষ সংঘাতময় অতীতের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে৷ ইউরোপীয় মিশন এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সব পক্ষের প্রতি শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4NQua
গত শনিবার সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে
গত শনিবার সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছবি: Asif Ahasanul/DW

শনিবারের ওই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷ মঞ্চ দখলের খবরও পাওয়া গেছে৷ বিএনপি অভিযোগ করেছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে৷ অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিরাজগঞ্জে তাদের শান্তি মিছিলে বিএনপির হামলার অভিযোগ তোলা হয়েছে৷ সেখানে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুনও দেয়া হয়েছে৷

গত সেপ্টেম্বরে  চট্টগ্রাম থেকে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শুরুর সময় থেকেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পাল্টা কর্মসূচি দেয়া শুরু হয়৷ তখন থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের দিন যানবাহন বন্ধে পরিবহণ শ্রমিক ও নেতাদের কাজে  লাগানো হয়েছে বলেও ধারণা করা হয়৷ আর সেটা  ডিসেম্বরে ঢাকায় সমাবেশের  সময় চরম আকার ধারণ করে৷ এরপর থেকে বিএনপির কোনো কর্মসূচিই আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচির বাইরে ছিল না৷ আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে৷ দলটি বলছে, বিএনপি যাতে ‘নাশকতা' করতে না পারে সেজন্য দল হিসেবে সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় তারা মাঠে থাকছে৷ আর বিএনপি মনে করে, তাদের কর্মসূচি পণ্ড করতে আওয়ামী লীগ  তাদের কর্মসূচির দিনই পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে৷ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সামনে তারা হরতাল অবরোধের মতো আরো কঠিন যত কর্মসূচি আছে তা দেবেন৷

‘আমরা কেন দেশকে অস্থিতিশীল করবো?’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের কথা, ‘‘দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বিএনপির কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দিচ্ছে৷ শুধু পুলিশ প্রশাসন থাকলে ওরা যে-কোনো দিন অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে৷ সেই কারণে আমরা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বাজায় রাখতে মাঠে আছি৷ কারণ, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল৷ আর তাদের সঙ্গে জামায়াত আছে৷ তারা চায় দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে৷ এছাড়া আমাদের নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকলে বিএনপির যারা সন্ত্রাসী, জামায়াত, তারা আতঙ্কে থাকে৷ তারা প্রেশারে থাকে৷ ফলে তারা সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে ভয় পায়৷”

তার দাবি, ‘‘আওয়ামী লীগ বিএনপির কর্মসূচিতে কখনো হামলা করেনি, বরং বিএনপি করেছে৷ সিরাজগঞ্জে বিএনপি হামলা করেছে৷ পুলিশ হয়ত তাদের কখনো কখনো বাধা দেয়৷ পুলিশের কাছে সে ধরনের তথ্য থাকে বলেই বাধা দেয়৷''

আওয়ামী লীগের এই নেতার পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আমরা তো দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ চাই৷ হামলা হলে তো দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ হবে৷ আমরা কেন দেশকে অস্থিতিশীল করবো?”

এর জবাবে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, রাজনীতিতে এই অশান্তির দায় আওয়ামী লীগ ও সরকারের৷ তারা সংঘাত ও সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্যই বিএনপির কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে৷ তারা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়৷”

তার কথা, ‘‘আওয়ামী লীগ ও সরকার একটা সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিএনপি যে আন্দোলন গড়ে তুলেছে তা বাধাগ্রস্ত করতে চায়৷ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দমন-নিপীড়ন শুরু করতে চায়৷ কিন্তু এসব করে আন্দোলন দমন করা যাবে না৷”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপিকে পাহারা দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে প্রয়োজন নেই৷ তারা পাহারা দেয়ার নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে৷ তারা গণতন্ত্রের পাহারাদার হয়ে গণতন্ত্র খেয়ে ফেলেছে৷ তারা এখন চৌকিদারে পরিণত হয়েছে৷ ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রায় তারা বিএনপির ওপর হামলা চালিয়েছে৷ তারা পুলিশের ছত্রছায়ায় হামলা চালিয়েছে৷ বিএনপি কোনো সন্ত্রাস করে না, সন্ত্রাস করে আওয়ামী লীগ৷”

‘বিএনপিকে পাহারা দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে প্রয়োজন নেই’

তিনি আরো বলেন, "এই পরিস্থিতি চললে অবস্থা আরো খারাপ হবে৷  আমাদের নেতারা  তো বলেছেন আওয়ামী লীগ  তাদের কর্মসূচিগুলোর তারিখ ঘোষণা করুক আমরা ওইসব দিনে কর্মসূচি দেবো না৷ আওয়ামী লীগ তা করছে না কেন? এ থেকেই তাদের উদ্দেশ্য বোঝা যায়৷”

বাড়ছে উদ্বেগ ও শঙ্কা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জোটটির সদস্য দেশগুলোর ঢাকা মিশন৷

রোববার এক টুইট বার্তায় ঢাকায় ইইউ ডেলিগেশনের পক্ষ থেকে এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়৷

সেখানে বলা হয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাম্প্রতিক সহিংসতার খবরে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন৷ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত সব পক্ষকে তারা শান্তিপূর্ণ ও আইনানুগ পদ্ধতিতে রাজনীতি করার জন্য দৃঢ়ভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান মনে করেন, বিএনপি আর আওয়ামী লীগের এভাবে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলতে থাকলে দেশে সংঘাতের রাজনীতি অনিবার্য৷ তার কথা, "রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে একই দিনে কর্মসূচি না দেয়া৷ বিএনপি একদিন কর্মসূচি দিলে আওয়ামী লীগের সেই দিন কর্মসূচি দেয়া ঠিক না৷ একইভাবে বিএনপির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য৷ বিএনপি তো এর আগে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের দিন কর্মসূচি পরিবর্তন করে অন্যদিন নিয়ে গিয়েছিল৷ আর যদি একই দিনে কর্মসূচি দিতেই হয়, তবে নেতাদের দায়িত্ব নিতে হবে৷ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে৷”

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি যে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি  পালন করেছে সেটাকে আমি ইতবাচক হিসেবে দেখি৷ কারণ, আমাদের এখানে অনেক দিন ধরে আমরা সুস্থ রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখিনি৷ এই যে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা, এটা  শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড৷ তবে আশঙ্কার জায়গা হলো, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি৷ নেতারা দায়িত্বশীল না হলে এতে সংঘাত সৃষ্টি হয়৷”

তার কথা, ‘‘আগে আমরা দেখেছি, একটি দল এক দিন কর্মসূচি দিলে আরেকটি দল অন্যদিন কর্মসূচি দেয়৷ কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে সেটা নতুন৷ আগে এরকম খুব বেশি দেখা যায়নি৷’’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরীও মনে করেন, " যা পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তাতে রাজনীতি অনিবার্যভাবেই সংঘাতের দিকে যাচেছ৷ আর  এতে বিদেশি শক্তি হস্তক্ষেপের সুযোগ পাবে৷ সেটা হলে তা হবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক৷”

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি এখন পর্যন্ত যতগুলো কর্মসূচি পালন করেছে, সেখানে কোনো সংঘাত বা সহিংসতা হয়নি৷ এখন আওয়ামী লীগ একই দিনে পাল্টা কর্মসূচি দেয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে৷ এজন্য আমি আওয়ামী লীগকেই দায়ী করবো৷ এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সংঘাত, সংঘর্ষ তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়বে, যা অনেক বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে৷”

তিনি মনে করেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে গণতান্দ্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান