‘চীন থেকে বাংলাদেশিদের ফেরায় ঝুঁকি তৈরি হবে না’
৩১ জানুয়ারি ২০২০চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে দেশে আনা হচ্ছে ৩৬১ জন বাংলাদেশিকে৷ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা থেকে ৩টার মধ্যে তাদের ঢাকায় পৌঁছার কথা৷ পরবর্তী ১৪ দিন তাদেরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য রাখা হবে আশাকোনার হজ্জ ক্যাম্পে স্থাপিত ‘আইসোলেশন ইউনিটে’৷ এরই মধ্যে সেখানে প্রায় সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে৷ সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা সকাল থেকে সেগুলো তদারক করছেন৷
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কয়েকটি মন্ত্রণালয় মিলে ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ ৩৬১ জন যে ১৪ দিন হজ্জ ক্যাম্পে থাকবেন সেখানে দিনে ৫ বেলা করে তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়৷ তাদের দেশে ফিরিয়ে আনাতে নতুন করে কোন ঝুঁকি তৈরী হবে না৷ কারণ এরা তো আক্রান্ত না৷'' তিনি জানান এরপরও কারও মধ্যে যদি করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা যায় তাহলে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হবে৷ সেখানেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে৷
হাজী ক্যাম্পে যেসব ব্যবস্থা থাকছে
আশকোনা হাজী ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তিন তলার ৪টি ডরমেটরিতে ৩৬১ জনকে রাখা হবে৷ প্রতিটি ডরমেটরিতে ১০০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হবে৷ সেখানে বিছানা, চাদর, বালিশ, মশারি, মেডিসিন, পানি, লাইট, টয়লেট থাকবে৷ সকাল ও বিকেলের নাস্তাসহ ৫ বেলা খাবারের ব্যবস্থা থাকবে৷ শিশু ও নারীদের জন্যও থাকবে আলাদা খাবার ও থাকার ব্যবস্থা৷''
এদিকে তারা যেন বাইরে বের না হোন সেজন্য তৃতীয় তলার সিড়ির প্রবেশ পথে কলাপসিবল গেইট লাগিয়ে দেওয়া হবে৷ ১৪ দিনের মধ্যে সেখান থেকে কেউ বের হতে পারবেন না৷ তাদেরকে যারা সেবা দেবেন তাদেরকেও বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে৷
পরীক্ষা করবে সেনাবাহিনী
চীন ফেরত বাংলাদেশিদের কারো মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ আছে কিনা তা পরীক্ষা করবেন সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের সদস্যরা৷ এছাড়া পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি থাকবে৷ এছাড়া ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরাও দায়িত্ব পালন করবেন৷ হজ্জ ক্যাম্পে কেউ অসুস্থ হলে তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতাল, সিএমএইচ বা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হবে৷
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) করোনা ভাইরাসের পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করছে৷ আইইডিসিআর জানায়, চারটি হটলাইনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ বিমানবন্দরে চীন থেকে আসা যাত্রীদের একটি কার্ড দেয়া হচ্ছে৷ সেই কার্ডে তাদের করণীয় এবং যোগাযোগের নাম্বার আছে৷ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘চীন থেকে তাদের ফেরত আনাতে নতুন করে কোন ঝুঁকি তৈরী হবে না৷ তাদের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা করা দরকার আমরা সবই করেছি৷ সেখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক দল পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন৷''
চীনে বিশেষ বিমান
চীন থেকে ৩৬১ জনকে আনতে বিশেষ বিমানটি শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে ফাকা ছেড়ে গেছে৷ বিমানটিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর ৪ থেকে ৫ জন ডাক্তার আছেন৷ বিমানে থাকবে মাস্ক, গাউন, মেডিসিনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা৷ ঢাকায় আসার পর তাদেরকে বিশেষ ব্যবস্থায় বাসে করে বিমানবন্দর থেকে হজ্জ ক্যাম্পে রাখা হবে৷ সেজন্য একটি কোর টিমও তৈরি করা হয়েছে৷ যার মাধ্যমে কাজটি করা হবে৷
চীনের উহান শহরে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা আগ্রহী এবং যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন আপাতত তাদেরই আনা হচ্ছে৷ এদের মধ্যে মোট ১৯টি পরিবার রয়েছে যাদের সঙ্গে আছে ২০ শিশু৷
হুবেই প্রদেশের মোট ২২টি শহরে বাংলাদেশের নাগরিকরা থাকেন৷ এরমধ্যে যারা উহানে রয়েছেন আপাতত তাদেরই ফিরিয়ে আনা হচ্চে৷ বাকি শহরগুলোতে থাকা কোনো নাগরিককে এখন দেশে আনা হবে না৷
শুক্রবার সকালে বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, উহান শহরে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর চীন সরকার কাউকেই দেশের বাইরের যাওয়ার অনুমতি দেয়নি৷ পরে বাংলাদেশের ৩৬১ জনকে ফেরত পাঠাতে চায় চীন সরকার৷ এরপরই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জরুরিভাবে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷