চিকিৎসকদের দাবি মেনে সরানো হলো পুলিশ কমিশনার সহ চার জনকে
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হলো বিনীত গোয়েলকে। মঙ্গলবার মনোজ বর্মাকে পুলিশ কমিশনার হিসাবে নিয়োগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিনীত গোয়েলকে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স(এসটিএফে)-এর এডিজি করা হয়েছে।
জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে বিনীত গোয়েলের পাশাপাশি সরানো হয়েছে ডিসি উত্তর অভিষেক গুপ্তকে। তার জায়গায় দীপক সরকারকে ডিসি উত্তর করা হয়েছে। অভিষেক গুপ্তকে ইএফআর সেকেন্ড ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসার করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস হালদারকেও তাদের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কৌস্তভকে হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর করা হয়েছে। দেবাশিস হালদারকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওএসডি করা হয়েছে। স্বপন সোরেনকে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা করা হয়েছে। এই দুজনকেও সরাবার দাবি করেছিল জুনিয়র ডাক্তাররা। তাদের এই দাবির কাছে নতিস্বীকার করতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।
এছাড়াও পুলিশে আরো কয়েকটি পরিবর্তন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জ্ঞানবন্ত সিংকে এডিজি(আইবি) ও সামিম আহমেদকে এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) করা হয়েছে। ত্রিপুরারি অথর্বকে ডিরেক্টর অফ ইকনমিক অফেন্সেস করা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ পদে
কলকাতা থেকে ডিডাব্লিউ বাংলার সাংবাদিক স্যমন্তক ঘোষ জানাচ্ছেন,, ''আন্দোলনকারীদের একটা মূল দাবি মানা হলো। তবে পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে সরিয়ে যে পদ দেয়া হয়েছে তা গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যন্ত সম্মানজনক। সূত্র জানিয়েছে, তিনি এই পদটিই চেয়েছিলেন। স্পেশাল টার্ক ফোর্স খুবই এলিট ফোর্স। কলকতা পুলিশে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ বলে পরিচিত।''
আগের খবর
সোমবার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে তার ও প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসেন সন্ধ্যা সাতটায়। ১২টার পর জুনিয়র ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বের হন। বাসে উঠে তারা জানান, ''বৈঠক সদর্থক। তাদের প্রায় সব দাবি মানা হয়েছে। পুলিশ কমিশনারকে সরানো হচ্ছে। বাকিটা তারা বিক্ষোভস্থলে জানাবেন।''
মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, ''মঙ্গলবারের মধ্যে পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে সরনো হচ্ছে। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকেও সরানো হবে। তাদের সবাইকে অন্য পদ দেয়া হবে।''
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ''আমি ৯৯ শতাংশ দাবি মেনে নিয়েছি। আর কী করব? এবার আশা করছি, তারা কাজে ফিরবেন।''
মমতা বলেছেন, ''জুনিয়র ডাক্তারদের পাঁচটি দাবি ছিল। তার মধ্যে প্রথমটি সিবিআই ও আদালতের বিষয়ে। বাকি চারটি দাবির মধ্যে তিনটি মেনে নিয়েছে সরকার। বিনীত গোয়েলকে পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। তাকে তার পছন্দের পদ দেয়া হবে। মঙ্গলবার বিকাল চারটের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।''
মমতা বলেছেন, ''দাবি মেনে পুলিশের ডেপুটি কমিশনার(উত্তর) অভিষেক গুপ্তকে সরানো হচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস হালদারকেও সরানো হচ্ছে।''
মমতা জানিয়েছেন, ''কাউকে অসম্মান করা হয়নি। চিকিৎসকদের আস্থা নেই বলে ওদের সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসকদের দাবিমতো হাসপাতালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে।''
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ''হাসপাতালের নিরাপত্তা ও নানান সমস্যা দূর করতে মুখ্য।সচিবের নেতৃত্বে কমিটি করা হবে। সেখানে জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের মতামত জানাতে পারেন।''
মমতা বলেন, ''ওদের পক্ষ থেকে ৪২ জন মিনিটসে সই করেছে, আমাদের তরফে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ করেছেন। বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি, ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া হচ্ছে। জুনিয়র ডাক্তারদের তাই বলছি, এবার কাজে ফিরুন।''
জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিধাননগরে বিক্ষোভস্থলে এসে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা জানান, ''রাজ্য সরকার আমাদের কাছে নতিস্বীকার করেছে। ৩৮ দিন পর আমাদের জয় হয়েছে। এই জয় সাধারণ মানুষ, চিকিৎসক, নার্স সকলের। সকলের সমর্থন না থাকলে এটা হতো না।''
তারপরই তিনি জানিয়ে দেন, তারা আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এখনই বিক্ষোভ ও কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছেন না। সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। তারা সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিকেও নজর রাখবেন।
অবশেষে আলোচনা
এর আগে রাজ্য সচিবালয় নবান্ন গিয়েও ফিরে এসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা। বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি সরকার না মানায় তারা বৈঠক না করে চলে আসেন। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের বিক্ষোভস্থলে চলে যান এবং তাদের আলোচনার জন্য বসার অনুরোধ করেন। তারপর তারা কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গেলেও লাইভ স্ট্রিমিং ও ভিডিওগ্রাফি নিয়ে মতবিরোধের জেরে বৈঠক হয়নি।
রোববার রাজ্য সরকারের তরফে আবার বৈঠকে বসার আমন্ত্রণ আসে। জানিয়ে দেয়া হয়, এটা পঞ্চম ও শেষবারের মতো আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। বৈঠকের কোনো লাইভ স্ট্রিংমিং হবে না। বৈঠকের মিনিটস রাখা হবে। দুই পক্ষ তাতে সই করবেন।
এই শর্তে রাজি হন জুনিয়র ডাক্তাররা। বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকেল পাঁচটায়। সইসাবুদ পর্ব মিটতে বেশ কিছুটা সময় যায়। তারপর প্রায় সাতটা নাগাদ তা শুরু হয়। রাত বারোটা নাগাদ জুনিয়র ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বের হন।
জিএইচ/এসজি