চলছে কথার লড়াই
২ আগস্ট ২০১৪তবে ঈদের আগে থেকেই বিএনপির মাঠে নামা নিয়ে চলছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদের কথার লড়াই৷ কথা দিয়েই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন উভয় দলের নেতারা৷ এই লড়াইয়ে নেমেছেন উভয় দলের প্রধান থেকে শুরু করে কর্মীরাও৷ প্রতিদিনই বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এ নিয়ে তাঁরা বক্তব্য দিচ্ছেন৷
ঈদের পর বিএনপির আন্দোলন নিয়ে প্রথম কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ যুক্তরাজ্য সফর শেষে ফিরে গত ২৬ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী৷ সেখানে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে কঠোর মন্তব্য করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘বিএনপির আন্দোলন মানে জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যা করা৷ নতুন করে অশান্তি সৃষ্টি করতে বিএনপি ঈদের পর আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে৷... আন্দোলনের কথা বলছেন, আসুন মাঠে নামুন৷ তাদের সঙ্গে মাঠে দেখা হবে৷ মাঠে আওয়ামী লীগসহ সবাই রয়েছে, দেশের সাধারণ জনগণও আছে৷ তাই মাঠের দেখা মাঠেই হবে৷ ফুটবল মাঠে কে কয়টা গোল দেয়, সেটা সেখানেই দেখা যাবে৷ অবশ্য দুর্বলদের তর্জন-গর্জন একটু বেশিই থাকে৷''
এরপর ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় ‘নিরপেক্ষ' সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন খালেদা জিয়া৷ বলেন, তাঁরা নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি নিয়ে এগোতে চান৷ খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘৫ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি৷ বিশ্বের কোনো দেশ ওই নির্বাচনকে গ্রহণ করেনি৷ দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার৷ এটা জনগণের দাবি৷''
আন্দোলনের কর্মসূচি বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী৷ আমরা গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই৷ বাধা দিলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে৷''
এদিকে শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সহিংস আন্দোলনের চেষ্টা করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দেরি হবে না৷ আন্দোলনের নামে জানমালের ক্ষতি, গাড়িতে আগুন, বোমা মেরে মানুষকে হত্যার মতো সহিংস আন্দোলন করলে প্রশাসন বসে থাকবে না৷
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে৷ বিএনপির একজন বলছেন, তাঁরা কুচকাওয়াজ করবেন৷ আরেকজন বলেন যুদ্ধ করবেন৷ কুচকাওয়াজ করেন, বাঁশি বাজান আর ঢোল বাজান, ঘরে বসে বাজান, কেউ বাধা দেবে না৷
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি আশা করছি বিএনপির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের আন্দোলন ‘শান্তিপূর্ণই' হবে৷ এ বিষয়ে জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই৷''
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আশরাফ এসব কথা বলেন৷ ওই দিনই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিলেও তাতে জনগণ সাড়া দেবে না৷ তিনি বলেন, বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষেই আন্দোলন করা সম্ভব নয়৷ মানুষ থাকলেই আন্দোলন হয়, না থাকলে কোনো আন্দোলন হয় না৷
আওয়ামী লীগ নেতাদের এসব বক্তব্যের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে চলে যেতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে বলেছেন, আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক৷ দেশে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হোক, আন্দোলনের জন্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, সেরকম কোনো আন্দোলন আমরা করতে চাই না৷ সরকার যদি সমঝোতার মধ্যে আসতো, তাহলে কোনো সমস্যা থাকতো না৷ কিন্তু তারা আলোচনা কিংবা সংলাপের পথে নেই৷ তারাই দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ আর সংঘাত হলে তার দায় আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে৷''