চরমপন্থিদের জয়যাত্রা রুখে দিলো ইউরোপ
২৭ মে ২০১৯গত বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ২৮টি দেশে প্রায় ৪০ কোটি ভোটার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে জনপ্রতিনিধিদের বেছে নেবার সুযোগ পেয়েছিলেন৷ জটিলতার বিচারে ভারতের সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনের সঙ্গে এই প্রক্রিয়ার তুলনা করা যেতে পারে৷ গত ২০ বছরে ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে এমন আগ্রহ দেখা যায়নি৷ রেকর্ড প্রায় ৫১ শতাংশ ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন৷ এমনকি ব্রেক্সিট সত্ত্বেও ব্রিটেনের ভোটাররাও সম্ভবত শেষ বারের মতো এই নির্বাচনে অংশ নেবার সুযোগ পেলেন৷ উল্লেখ্য, ইউরোপীয় কমিশন ও ইইউ পরিষদের পাশাপাশি ইউরোপের ক্ষমতাকেন্দ্রের তৃতীয় স্তম্ভ হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের গুরুত্ব বেড়ে চলেছে৷
এবারের নির্বাচনে চরমপন্থিদের উত্থান নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা চলছিল৷ ইইউ-বিরোধী, পপুলিস্ট, অভিবাসন-বিরোধী ও অন্যান্য চরমপন্থিরা আগের তুলনায় শক্তিবৃদ্ধি করলেও বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় যেমনটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, সেরকম ক্ষমতা তারা পাচ্ছে না৷ মূলত ফ্রান্স, ইটালি ও ব্রিটেনেই তাদের দাপট দেখা গেছে৷ এসব দেশে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে উঠে এসেছে কট্টরপন্থিরা৷ নির্বাচনের পর এমন কয়েকটি দল ইইউ পার্লামেন্টে ঐক্যবদ্ধ এক শিবির গড়ে তুলতে পারলে তবেই তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়বে৷
২০১৯ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি শক্তিবৃদ্ধি করতে পেরেছে সবুজ ও উদারপন্থি শিবির৷ ফলে এই দুই সংসদীয় দলের সমর্থন ছাড়া ইইউ পার্লামেন্টে ভবিষ্যতে কোনো প্রস্তাব অনুমোদন করা কঠিন হবে৷ জার্মানিতে সামাজিক গণতন্ত্রীদের পেছনে ফেলে দ্বিতীয় প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সবুজ দল৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এই দলের গ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়ে গেছে৷
এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে রক্ষণশীল ও সামাজিক গণতন্ত্রী শিবির৷ রক্ষণশীল শক্তি এবারেও সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও ইইউ পার্লামেন্টের ইতিহাসে এই প্রথম তারা সম্মিলিতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালো৷ ফলে ইউরোপীয় কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এই দুই শিবিরের একচ্ছত্র ক্ষমতা আর থাকবে না৷ রক্ষণশীল শিবিরের প্রার্থী হিসেবে জার্মানির মানফ্রেড ভেবার ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে৷ ইউরোপ জুড়ে মধ্যপন্থি শক্তির এমন পতন অভূতপূর্ব ঘটনা৷
এমন প্রেক্ষাপটে ইইউ পার্লামেন্টে রক্ষণশীল শিবিরের নেতা মানফ্রেড ভেবার বলেছেন, যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আরো শক্তিশালী দেখতে চায়, এবার থেকে তাদের সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে৷ তিনি আরো স্পষ্ট করে দিয়ে বলেন, যেসব দল ইইউর ভবিষ্যতে বিশ্বাস করে না, তাদের সঙ্গে রক্ষণশীল শিবির কোনো রকম সহযোগিতা করবে না৷
সোমবার থেকেই বিভিন্ন শিবিরের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হচ্ছে৷ ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর মঙ্গলবার ব্রাসেলস এক সম্মেলনে মিলিত হবেন ইইউ দেশগুলির শীর্ষ নেতারা৷ নতুন কমিশন গঠনের প্রথম ধাপ হিসেবে কমিশনের প্রেসিডেন্ট বাছাই নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হবে৷
এসবি/এসিবি (এএফপি, এপি, রয়টার্স)