এক বিশেষ উদ্যোগ ‘হায়াত’!
১৪ জুন ২০১৪‘‘আমাদের কাছে বাভারিয়া থেকে সনাতন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী জার্মান পরিবারও যেমন আসে, তেমনি আরব, তুর্কি, আফ্রিকান পরিবারও আসে৷ অর্থাৎ নানা ধরনের মানুষের সঙ্গেই আমাদের কাজ-কারবার৷'' যারা সাহায্যের জন্য আসে তাদের প্রসঙ্গে এ কথা বলেন হায়াতের কর্মী ডানিয়েল ক্যোহলার৷
উদ্বেগের কথা জানান
পরিবারের লোকজন তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান সংগঠনটিকে৷ যেমন তাঁরা বলেন ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন বা চাচা-মামা চরম ইসলামিস্ট গ্রুপের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে, আকৃষ্ট হচ্ছে ধর্মান্ধদের বক্তব্যে, পারিপার্শ্বিক জগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে৷
দূর দেশের সংকটের রেশ ধরে জার্মানিতে সালাফিসম-এর মতো আন্দোলনও বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ বলেন চরমপন্থা বিষয়ক গবেষক ডানিয়েলা পিসোউ৷ তাঁর কথায়, ‘‘ইদানীং সিরীয় সংকট তরুণদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে৷ প্রণোদিত করছে জিহাদ বা ধর্মযুদ্ধে যেতে৷''
২০১৩ সালে জার্মানির সালাফিস্ট ঘরানার ২৩০ জন কট্টর সমর্থক সিরিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করে৷ এই অনুমান জার্মানির ফেডারেল সংবিধান দপ্তরের৷ হায়াত কর্মীদের মতে এই সংখ্যা ৫০০-এর মতো হবে৷
‘অন্যায় অবিচারের' বিরুদ্ধে সংগ্রাম
চরম ডান ও বামপন্থিদের মতো সালাফিস্টরাও ‘অন্যায় অবিচারের' বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷ তারা মনে করে পশ্চিমা শক্তি মুসলমানদের দমন করছে, বলেন ডানিয়েলা৷ চরমপন্থিরা সব ধরনের শ্রেণি ও পেশা থেকেই আসে৷ এই গ্রুপে যেমন রয়েছে অভিবাসীরা তেমনি জার্মান তরুণরাও৷ অর্থাৎ চরমপন্থা মুসলমানদের নিজস্ব কোনো সমস্যা নয়৷
তরুণ সমাজকে সালাফিল্ট প্রভাব থেকে মুক্ত করার বেশ কিছু পরামর্শ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে৷ এর মধ্যে কিছু ক্যাম্পেইন নিয়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে৷ ২০১২ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘নিখোঁজ' ক্যাম্পেইনটি বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করে৷ এতে প্ল্যাকার্ডে অভিবাসী ও হিজাব পরা মেয়েদের ছবি দেখিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়৷ লক্ষ্য করা গিয়েছে সরকারের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলে সাহায্যপ্রার্থীদের মনে আস্থার অভাব দেখা দেয়৷ বলেন হায়াতের কর্মী ডানিয়েল ক্যোহলার৷
সংগঠনটি স্বায়ত্তশাসিত
তাঁদের সংগঠন স্বায়ত্তশাসিত৷ কোনো সদস্য কট্টরপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়লে গোটা পরিবারটিই দিশাহারা হয়ে পড়ে৷ এই ধরনের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ায় হায়াত৷ অনেকটা ভুক্তভোগী পরিবারের আইনজীবীর মতো কাজ করে এটি৷ এক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়, বলেন ক্যোহলার৷
‘‘তবে আমরা যদি অপরাধমূলক কার্যকলাপের আভাস পাই এবং মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা লক্ষ্য করি তাহলে নিরাপত্তারক্ষা দপ্তরকে খবর দেই৷''
এক্ষেত্রে কিছুটা সেতুর মতো কাজ করে সংগঠনটি৷ হায়াতের কর্মীরা পুলিশকে বাড়ি তল্লাশি থেকে নিরস্ত করে৷ কিংবা পরিবারের সদস্যদের কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে প্রভাব খাটায়৷
২০১১ সালের শেষদিকে গঠিত হওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত ৮০টি ঘটনা হাতে নিয়েছে হায়াত৷ এর মধ্যে অধিকাংশ পরিবারই সরকারি পরামর্শ কেন্দ্রে যেতে ভরসা পেত না৷ ‘‘কেননা মা-বাবার আশঙ্কা, হয়ত তাদের বা পরিবারের সদস্যদের অপরাধী বলে গণ্য করা হবে কিংবা তাদের গতিবিধি মনিটর করা হবে৷''
অনেক দেশেই সাড়া জাগিয়েছে
ইতোমধ্যে হায়াত শুধু জার্মানিতে নয় অস্ট্রিয়া, ক্যানাডা ও সুইডেনেও সাড়া জাগিয়েছে৷ সেসব দেশ থেকেও সাহায্যপ্রার্থী পরিবার বা শিক্ষকরা এই সংগঠনটির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন৷
ইংল্যান্ড, ক্যানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় হায়াতের আদলে সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে৷ হায়াতও গড়ে উঠেছে ‘এক্সিট' সংস্থাটির অনুকরণে৷ এই সংগঠনটি চরম ডানপন্থিদের পরিবারদেরও পরামর্শ দিয়ে থাকে৷