মামলায় জিতল বাংলাদেশি শ্রমিকরা
৩০ মার্চ ২০১৭ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে অবস্থিত ‘দ্য কাউন্সিল অফ ইউরোপ’-এর ‘কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস’ মঙ্গলবার গ্রিস সরকারের বিরুদ্ধে করা এক মামলায় বাংলাদেশের ৪২ শ্রমিকের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ ২০১৩ সালে গ্রিসের এক স্ট্রবেরি খামারে গোলাগুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত এই শ্রমিকদের প্রত্যেককে ১২ থেকে ১৬ হাজার ইউরো অবধি ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে৷ আদালত মনে করে, গ্রিস সরকার মানবপাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে৷
গ্রিসের ম্যানোলাডায় ২০১৩ সালের এপ্রিলে প্রায় ছয় মাস বেতন না পাওয়া বাংলাদেশি স্ট্রবেরি শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু বেতনের ন্যায্য দাবি পূরণের বদলে মালিক পক্ষের লোকেরা গুলি চালান শ্রমিকদের উপর৷ এতে আহত হন ২৮ বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক৷ গ্রিসের রাজধানী এথেন্স থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরের সেই ঘটনা সেই সময় ইউরোপে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
সেই ঘটনায় অবশ্য গ্রিসের আদালতে মামলা করা হয়েছিল৷ কিন্তু আদালত তখন গুলি চালানোর অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে শাস্তি দিলেও তারা তখন জামিনে মুক্ত ছিলেন এবং সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগও ছিল৷ আর আলোচিত খামারটির মালিক এবং শ্রমিকদের প্রধানের কোনো অপরাধ তখন খুঁজে পায়নি আদালত৷ তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিও ঘোষণা করা হয়নি৷ রায় শোনার পর গুলিতে আহত শ্রমিকদের পক্ষের আইনজীবী ময়সিস ক্যারাবেইডিস সেই সময় বলেছিলেন, ‘‘গ্রিক হিসেবে আমি লজ্জিত৷’’
গ্রিসের আদালতে ন্যায্য বিচার না পাওয়ায় ইউরোপের আদালতে বিষয়টি তোলা হয়৷ মানবাধিকার আদালতে মামলার বাদী মোর্শেদ চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রাসবুর্গে দেয়া রায়কে স্বাগত জানিয়েছে৷ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা আজকের রায়ে অত্যন্ত খুশি৷ জোরপূর্বক কাজ করানোর অভিযোগ থেকে গ্রিসের খামার মালিককে রেহাই দেয়ায় গ্রিসের আদালতের সিদ্ধান্তে আমরা অত্যন্ত হতাশ হয়েছিলাম৷’’
‘‘আমরা আশা করছি, গ্রিক সরকার আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেবে এবং গ্রিসের অর্থনীতিতে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেবে,’’ বলেন তিনি৷ অন্যদিকে, অ্যামনেস্টির গৌরি ফন গুলিক বলেন, ‘‘২০১৩ সালে সেই ঘটনার পরপরই শোষণের শিকার অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের সাক্ষাৎকার নেয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং আমাদের হয়ে তাদের জীবনমান যাচাই করে৷’’
উল্লেখ্য, গ্রিসে অবস্থানরত বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন৷ এদের একটি বড় অংশ দেশটিতে অবৈধভাবে কাজ করছেন৷
এআই/এসিবি (এপি, ডিপিএ)