ইউরোপে বাংলাদেশি অভিবাসন জালিয়াতচক্র!
২ জুন ২০১৬গত ২৫ মে এই দু'টি জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুলিশ ইউরোপোল অভিযান পরিচালনা করে৷ ইউরোপোলের দাবি, গ্রিসের এথেন্সভিত্তিক দুটি চক্র এই জাল ট্রাভেল ডকুমেন্ট তৈরির সঙ্গে জড়িত, যার একটি বাংলাদেশিরা চালায়৷ ইইউ'র জাল পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরি করে প্রতিটি তিন হাজার ৬০০ ডলার পর্যন্ত দামে বিক্রি করে তারা৷ কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এসব জাল কাগজপত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়৷ ইউরোপোল বলছে, বাংলাদেশিদের চক্রটি গত বছর এসব কাগজপত্রের অন্তত ১২৬টি চালান কুরিয়ারে মাধ্যমে পাঠিয়েছে৷ জালিয়াতিতে জড়িত অন্য চক্রটি সুদানিদের এবং গত বছর তারা কুরিয়ারে পাঠিয়েছে ৪৩১টি চালান৷
এই অপরাধীরা বিভিন্ন সীমান্তে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে গ্রিসের পুলিশ জানায়৷ এথেন্স থেকে এই চক্রের ১৬ জন এবং চেক রিপাবলিক থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ইউরোপোল জানিয়েছে৷ তবে জাল কাগজ ব্যবহার করায় আরো সাতজনকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে৷ গ্রিস ও অন্যান্য দেশে এসব কাজে জড়িত আরও প্রায় ১০০ জনকে এখনো খোঁজা হচ্ছে ৷
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এথেন্সভিত্তিক এই দুটি জালিয়াত চক্র পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, শেঙেন ভিসা (ইউরোপের ২৬টি দেশে অবাধে চলাচলের অনুমতিপত্র), ড্রাইভিং লাইসেন্স, শরণার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও রেসিডেন্স পারমিট জাল করে ৷
এ দুটি চক্রের পাশাপাশি চেক প্রজাতন্ত্রে আরেকটি চক্র সক্রিয় থাকার কথা জানিয়ে ইউরোপোল বলেছে, ওই চক্রটি চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া পরিচয়পত্র ও ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্র কেনে৷ তারপর এথেন্সের ওই চক্রগুলোর কাছে সেগুলো পাঠালে তারা তাতে ঘষামাজা করে মক্কেলদের ব্যবহারের উপযোগী করে ফেরত পাঠায়৷ এরপর চেক প্রজাতন্ত্র থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে তা পাঠানো হয়৷ এই চক্রটি ভুয়া শেঙেন ভিসা তৈরিতেও জড়িত বলে ইউরোপোল জানিয়েছে৷
বাংলাদেশের অভিবাসন বিষয়ক গবেষক এবং রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সাবেক কর্মকর্তা মেরিনা সুলতানা ডয়চে ভেলকে জানান, ‘‘ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসন অনেক কঠিন হওয়ায় সেখানে এইসব জালিয়াত চক্র গড়ে উঠেছে৷ গ্রিসের মতো অনেক দেশে এখনো অনেক অবৈধ বাংলাদেশি আছে৷ চাহিদা থাকায় এবং অর্থের লোভে সেখানে বাংলাদেশিরা জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এরকম চক্র আগে থেকেই আছে ৷ এখন ইউরোপেও এ ধরণের চক্র গড়ে উঠেছে৷ তবে এর সঙ্গে শুধু বাংলাদেশিরাই নয় অন্য আরো অনেক দেশের নাগরিকই জড়িত৷''
মেরিনা সুলতানা মনে করেন, ‘‘এই অপরাধী চক্রে বাংলাদেশিদের জড়িত থাকার বিষয়টি বাংলাদেশের ইমেজের জন্য ক্ষতিকর৷''