গৃহযুদ্ধের দিকে সিরিয়া
১০ মে ২০১২চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ১২ তারিখে ফেরা যাক৷ জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আনান সেদিন সিরিয়ায় শান্তি মিশনের সূত্রপাত করেছিলেন৷ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে কীভাবে সেদেশের সেনাবাহিনী বনাম বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী লড়াইকে থামানো যেতে পারে, তার একটা রূপরেখা তৈরি করার চেষ্টা ছিল সেটা৷ যাতে আরব দুনিয়ার কিছু দেশ এবং অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিম দুনিয়ার পূর্ণাঙ্গ সমর্থন আর সহযোগিতা ছিল৷
কিন্তু সে উদ্যোগে সেভাবে কাজ দেয়নি৷ অর্থাৎ সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ সমস্যা মেটেনি৷ রক্তপাত অব্যাহত থেকেছে৷ সেনাবাহিনী নিজের দেশের মানুষের ওপর অস্ত্র আস্ফালন করে চলেছে৷ একের পর এক শহরে ঢুকে পড়ছে সাঁজোয়া বাহিনী৷ গুলিগোলা, অনিরাপদ জীবন এবং সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষজন প্রাণ নিয়ে অন্য দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন৷ বেসাহারা হয়ে পড়ছে সমাজব্যবস্থা৷ এ অবস্থায় শান্তির উদ্যোগ কোন কাজেই আসছে না৷
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সেকথাই বলেছেন আনান৷ মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে তিনি তুলে ধরেন, তাঁর নেতৃত্বে গত একমাসের শান্তি উদ্যোগের ফলাফল৷ সেখানে জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব জানান, শান্তি উদ্যোগের ফলে লড়াই খুব সমান্য কমেছে কিন্তু জাতিসংঘের যে ছয় দফা শান্তি প্রস্তাব ছিল, দেখা গেছে দামেস্ক সেটাকে সেভাবে অনুসরণ করেনি৷ বাস্তবায়ন তো বহু দূরের বিষয়৷
কী ছিল এই ছয় দফা শান্তি প্রস্তাবে? জাতিসংঘ বলেছিল, পূর্ণাঙ্গ অস্ত্রবিরতি, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সেনা প্রত্যাহার করা, রাজনৈতিক সংলাপ বা দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পথ প্রশস্ত করা এবং বহু দলীয় সমাজ ব্যবস্থার দিকে দেশকে নিয়ে যাওয়া৷ যাতে গণতন্ত্র তার আসার জন্য পথ খোলা পায়৷
গণতন্ত্রের পথ ধরা তো অনেক পরের ব্যাপার৷ জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আনান মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়া প্রসঙ্গে তাঁর রিপোর্ট পেশ করতে গিয়ে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানিয়েছেন, সেদেশের যা পরিস্থিতি তাতে কোনরকমের পরামর্শই কানে তুলছে না আসাদ প্রশাসন৷ অস্ত্রবিরতির লক্ষণ যেমন নেই, তেমনই শান্তি প্রতিষ্ঠার কোন মানবিক উদ্যোগও নেই৷ গত একমাস যাবৎ তিনি স্বয়ং যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাতে কোনরকমের সুফল ফলে নি৷ সে কারণে শুধুমাত্র সিরিয়ার জন্যই নয়, গোটা এলাকার জন্য এ একটা দুঃসংবাদ৷
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পর আনান জেনেভায় একটি সাংবাদিক সম্মেলনে করেন, যার বিষয় ছিল সিরিয়ার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা৷ সেখানে কিছু তথ্য দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, সিরিয়ার প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর আলোচনা মোতাবেক সেদেশে এখন জাতিসংঘের কিছু পর্যবেক্ষক কর্মরত রয়েছেন৷ ধারণা করা হচ্ছে এই মে মাসের মধ্যে মোট তিনশো'জন জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক সেদেশে পৌঁছে যাবেন৷ কিন্তু আনানের কথা হল, যেখানে প্রশাসন এই উদ্যোগকে পূর্ণাঙ্গ সমর্থন করছে না, সেক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে কী হবে?
এদিকে জাতিসংঘের এবং আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগের মধ্যেই সিরিয়ার অভ্যন্তরে কিন্তু সমস্যা ক্রমশ আরওই মাথাচাড়া দিচ্ছে৷ মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ'এর সূত্রে জানানো হয়েছে, তুরস্ক সীমান্তের কাছে একাধিক গ্রামের দখল নিয়ে তুমুল সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে৷ প্রতিদিনই নতুন করে মানুষ খুনের খবর মিলছে সিরিয়ার অভ্যন্তরে৷ যেদিকে পরিস্থিতি যাচ্ছে, তাতে গৃহযুদ্ধই এই ঐতিহাসিক সভ্যতার দেশটির নিয়তি বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ঠিক যেমনটি বলেছেন জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আনান৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়, (ডিপিএ, এপি)
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ